সরস্বতী পূজা হিন্দু বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী সরস্বতীর আরাধনাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠেয় একটি অন্যতম প্রধান হিন্দু উৎসব। শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা আয়োজিত হয়। তিথিটি শ্রীপঞ্চমী বা বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। উত্তর ভারত, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, নেপাল ও বাংলাদেশে সরস্বতী পূজা উপলক্ষ্যে বিশেষ উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। শ্রীপঞ্চমীর দিন অতি প্রত্যুষে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের গৃহ ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর পূজা করা হয়। ধর্মপ্রাণ হিন্দু পরিবারে এই দিন শিশুদের হাতেখড়ি, ব্রাহ্মণভোজন ও পিতৃতর্পণের প্রথাও প্রচলিত। পূজার দিন সন্ধ্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সর্বজনীন পূজামণ্ডপগুলিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও আয়োজিত হয়। বিশেষত শিক্ষার্থীদের জন্যে সরস্বতী পুজো খুবই স্পেশাল। সকাল থেকেই উপোস থেকে বাগদেবীর উদ্দেশ্যে অঞ্জলি দেন তারা। বিদ্যা, বুদ্ধি, জ্ঞানের প্রার্থনা করেন বাগদেবীর কাছে। পূজার পরের দিনটি শীতলষষ্ঠী নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গে কোনও কোনও হিন্দু পরিবারে সরস্বতী পূজার পরদিন অরন্ধন পালনের প্রথা রয়েছে।
সরস্বতী পুজার তারিখ
বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে, ২২ শে মাঘ , শনিবার সরস্বতী পুজোর তারিখ পড়েছে। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এ বছর ৫ই ফেব্রুয়ারি । সকাল ৭ টা বেজে ৭ মিনিটে শুরু হবে শ্রীপঞ্চমী তিথি এবং শেষ হবে বাংলা ২৩শে মাঘ। ইংরেজি ৬ই ফেব্রুয়ারি, রবিবার সকাল ৭ টা বেজে ৯ মিনিটে পুজোর তিথি সমাপ্ত হবে।
শ্রীপঞ্চমী পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্রঃ
ওঁ জয় জয় দেবী চরাচরসারে, কুচযুগশোভিত মুক্তাহারে।
বীনারঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমোহস্তুতে।।
ওঁ সরস্বত্যৈ নমা নিত্যং ভদ্রকাল্যৈ নমা নমঃ বেদবেদান্তবেদাঙ্গ বিদ্যাস্থানেভ্য এব চ।
এষ সচন্দন পুষ্পবিল্বপত্ৰাঞ্জলি সরস্বত্যৈ নমঃ ॥ ( এই মন্ত্রে তিনবার অঞ্জলি দেওয়াবেন।)
প্রণাম মন্ত্রঃ
ওঁ সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমললােচনে।
বিশ্বরূপে বিশালাক্ষি বিদ্যাং দেহি সরস্বতী॥
জয় জয় দেবী চরাচরসারে, কুচযুগশােভিত মুক্তাহারে।
বীণা রঞ্জিত পুস্তক হস্তে, ভগবতী ভারতী দেবী নমােহস্তুতে।
শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গ গৃহিণী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবীর জন্মােৎসব।
পৌরাণিক কাহিনি
পুরাণ অনুযায়ী ব্রহ্মা জগৎ সংসার সৃষ্টি করেন। গাছপালা, জীব-জন্তু সৃষ্টি সত্ত্বেও কোনও কিছুর অভাব লক্ষ্য করেন। তখন তিনি নিজের কমন্ডল থেকে জল ছেটালে এক স্ত্রী প্রকট হন। তাঁর এক হাতে বীণা ও অপর হাতে পুস্তক ছিল। আবার তৃতীয় হাতে মালা ও বরমুদ্রায় ছিল চতুর্থ হাত। তিনিই সরস্বতী। সরস্বতীর বীণা বাদনের সঙ্গে সঙ্গে সংসারের সমস্ত জিনিসে স্বরের সঞ্চার হয়। বসন্ত পঞ্চমীর দিনেই সরস্বতীর উৎপত্তি। সে সময় থেকেই দেবলোক ও মৃত্যুলোকে সরস্বতী আরাধনা শুরু হয়।
আরও পড়ুন: Radha Janmabhoomi: দেশের এই মন্দিরে কৃষ্ণ মহিলার পোশাকের বেশে থাকেন! কিন্তু কারণটা কী জানেন?