গঙ্গার (Ganga ) গুরুত্ব ও অবদান সারা ভারত জুড়ে। গঙ্গা নদীর মূর্তিস্বরূপ এক হিন্দু দেবী (Hindu God)। হিন্দুধর্মে এই দেবী বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারিণী। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন গঙ্গায় স্নান করলে সমস্ত পাপ মুছে যায় এবং জীব মুক্তিলাভ করে। গঙ্গার জন্মকাহিনি বিষয়ে হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলির মধ্যে মতদ্বৈধ দৃষ্ট হয়। একটি কাহিনি (Mythology) অনুযায়ী ব্রহ্মার কমণ্ডলু এক নারীমূর্তির স্বরূপ প্রাপ্ত হয়। ইনিই গঙ্গা। বৈষ্ণব মতানুসারে, ব্রহ্মা তার কমণ্ডলুর জল নিয়ে সশ্রদ্ধ চিত্তে বিষ্ণুর পদ ধৌত করেছিলেন। সেই থেকেই গঙ্গার জন্ম। তৃতীয় একটি মত অনুযায়ী, গঙ্গা পর্বতরাজ হিমালয় ও তার পত্নী মেনকার কন্যা এবং পার্বতীর ভগিনী। তবে প্রতিটি মতেই একথা স্বীকৃত যে ব্রহ্মা গঙ্গাকে পবিত্র করে তাকে স্বর্গে উত্তীর্ণ করেন। গঙ্গার জন্ম নিয়ে নানান পৌরাণিক কাহিনি রয়েছে। তবে অনেকেই এটা বিশ্বাস করেন ও কথিত আছে, মর্ত্যে ভগীরথকে অনুসরণ করার সময় গঙ্গা ঋষি জহ্নুর আশ্রম প্লাবিত করেন। উগ্রতপা জহ্নু ক্রুদ্ধ হয়ে গঙ্গার সমস্ত জল পান করে ফেলেন। তখন দেবগণ গঙ্গার মুক্তির জন্য ঋষির কাছে প্রার্থনা করতে থাকলে নিজের জঙ্ঘা বা জানু চিরে গঙ্গাকে মুক্তি দেন। এইরূপে গঙ্গা জহ্নু ঋষির কন্যা রূপে পরিচিতা হন এবং তার অপর নাম হয় জাহ্নবী।
গঙ্গা সপ্তমীর মধ্যাহ্ণ মুহূর্ত
পঞ্চাঙ্গ অনুসারে গঙ্গা সপ্তমীর মধ্যম মুহূর্ত ছিল সকাল ১০টা ৫৭ মিনিট থেকে ১টা ৩৮ মিনিট পর্যন্ত
গঙ্গা সপ্তমীর কাহিনি
মহাভারতের কাহিনি অনুসারে, রাজা সগর ষাট হাজার পুত্রের জনক হয়েছিলেন। তিনি একবার অশ্বমেধ যজ্ঞ করবে।দেবরাজ ইন্দ্র তাতে ঈর্ষান্বিত হয়ে যজ্ঞের পবিত্র ঘোড়া অপহরণ করেন। সগর তার ষাট হাজার পুত্রকে অশ্বের অন্বষণে প্রেরণ করেন। তারা পাতালে ধ্যানমগ্ন মহর্ষি কপিলের কাছে ঘোড়াটিকে দেখতে পান। মহর্ষিকে চোর সন্দেহ করে তারা তার বহু বছরের ধ্যান ভঙ্গ করলে ক্রুদ্ধ মহর্ষি দৃষ্টিপাত মাত্র তাদের ভস্ম করে দেন। সগর রাজার ষাট হাজার সন্তানের আত্মা পারলৌকিক ক্রিয়ার অভাবে প্রেতরূপে আবদ্ধ হয়ে থাকেন।
পরে সগরের বংশধর, রাজা দিলীপের পুত্র ভগীরথ তাদের আত্মার মুক্তিকামনায় গঙ্গাকে মর্ত্যে নিয়ে আসার মানসে ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন। তপস্যায় সন্তুষ্ট ব্রহ্মা গঙ্গাকে মর্ত্যে প্রবাহিত হয়ে সগরপুত্রদের আত্মার সদগতিতে সহায়তা করতে নির্দেশ দেন। গঙ্গা এই নির্দেশকে অসম্মানজনক মনে করে মর্ত্যলোক প্লাবিত করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন ভগীরথ গঙ্গার গতিরোধ করার জন্য শিবের আরাধনা করেন।
ক্রদ্ধ গঙ্গা শিবের মস্তকে পতিত হন। কিন্তু শিব শান্তভাবে নিজ জটাজালে গঙ্গাকে আবদ্ধ করেন এবং ছোটো ছোটো ধারায় তাকে মুক্তি দেন। শিবের স্পর্শে গঙ্গা আরও পবিত্র হন। স্বর্গনদী গঙ্গা পাতালে প্রবাহিত হওয়ার আগে মর্ত্যলোকে সাধারণ জীবের মুক্তির হেতু একটি পৃথক ধারা রেখে যান। এইভাবে স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল – তিন লোকে প্রবাহিত হয়ে গঙ্গা “ত্রিপথগা” নামে পরিচিতা হন।
যেহেতু ভগীরথ গঙ্গার মর্ত্যাবতরণের প্রধান কারণ, সেই হেতু গঙ্গার অপর নাম ভাগীরথী। সংস্কৃতে ভগীরথের এই দুঃসাধ্য সাফল্যের কথা মাথায় রেখে “ভগীরথ প্রযত্ন” নামে একটি শব্দবন্ধ প্রচলিত আছে।
স্কন্দপুরাণ অনুসারে, শিব ও পার্বতীর পুত্র কার্তিকেয়ের (মুরুগান) পালিকা-মাতা হলেন গঙ্গা।
একটি কাহিনি অনুযায়ী, পার্বতী তার গাত্রমল হতে গণেশের মূর্তি নির্মাণ করে তা গঙ্গায় নিমজ্জিত করলে সেই মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কারণে মনে করা হয় গণেশের দুই জননী – পার্বতী ও গঙ্গা। গণেশের অপর নাম তাই দ্বৈমাতুর বা গাঙ্গেয় (গঙ্গাপুত্র)।
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অনুসারে, বিষ্ণুর তিন স্ত্রী ছিলেন – লক্ষ্মী, গঙ্গা ও সরস্বতী। তারা সবসময় পরস্পর কলহ করতেন বলে বিষ্ণু লক্ষ্মীকে নিজের কাছে রেখে শিবকে গঙ্গা ও ব্রহ্মাকে সরস্বতী দান করেন।
গঙ্গা সপ্তমী কীভাবে পালিত হয়?
ভক্তরা প্রথমে গঙ্গায় স্নান করেন. তারপর মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে ,ফুল বর্ষণ করে পূজা করেন। গঙ্গায় পুণ্য লাভের জন্য সন্ধ্যার সময় আরতি করে নমস্কারও করেন তাঁরা।