আর ক’দিন পরেই পুরীতে পালিত হবে রথযাত্রা। এই রথযাত্রার অংশ হল স্নানযাত্রা উৎসব। স্নানযাত্রা উৎসবে প্রতি বছর একশো আট ঘটি জল ঢেলে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। এই বছর ১৪ জুন অর্থাৎ আজকে পালিত হচ্ছে স্নানযাত্রা উৎসব। গত দু’বছরে করোনা পরিস্থিতিতে ধুমধাম করে পালিত হয়নি রথযাত্রা উৎসব। কিন্তু এই বছর কোভিড পরিস্থিতি অনেকটা স্থিতিশীল। এই পরিস্থিতিতে আশা করা যায় বেশ ধুমধাম করেই পালিত হবে রথযাত্রা। কিন্তু এই রথযাত্রার আগে পালিত হয় স্নানযাত্রা উৎসব। জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যেই বন্ধ করা হয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের দরজা। এই সময় মন্দির চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না কোনও দর্শনার্থীকে।
বলা হয়, এই তিথিতেই মর্ত্যে আবির্ভূত হয়েছিলেন জগন্নাথদেব৷ এই বছর ১৪ জুন অর্থাৎ আজকে পালিত হচ্ছে স্নানযাত্রা উৎসব। এই দিন স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। শাস্ত্র অনুসারে, স্নানযাত্রার দিন অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠমাসের পূর্ণিমা তিথিতে স্বয়ম্ভু মনুর যজ্ঞের প্রভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন জগন্নাথ। এই তিথিকে জগন্নাথদেবের জন্মদিন হিসেবে ধরা হয়। এই স্নানযাত্রা উপলক্ষ্যে সোমবার থেকেই বন্ধ রয়েছে জগন্নাথদেবের দর্শন।
প্রতি বছর দেবস্নান পূর্ণিমায় স্নানযাত্রার রীতি পালিত হয়। এই স্নানযাত্রা শুরুর আগে রত্নবেদীতে থাকেন জগন্নাথ। প্রথমে জগন্নাথ, তারপর বলরাম, শেষে সুভদ্রাকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। তারপরে তাঁদের নিয়ে স্নানবেদীতে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে মঙ্গল আরতি করা হয়। এবং সূর্যপুজোর পরে তিনজনকে মহাস্নানের জন্য প্রস্তুত করা হয়।
এরপরেই মন্দিরের দক্ষিণের দরজার যে কুয়ো রয়েছে, সেখান থেকে একশো আট ঘটি জল তোলা হয়। সেই জল দিয়েই স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। স্নানের পর জগন্নাথ ও বলরামের হাতিবেশ বা গণেশবেশ করা হয়ে থাকে।
কথিত রয়েছে, স্বয়ং জগন্নাথদেব মহারাজা ইন্দ্রদ্যুম্নকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, মহাস্নানের পর তাঁর অঙ্গরাগবিহীন রূপ যেন কেউ না দেখেন। তাই স্নানযাত্রার পর থেকে ১৫ দিনের জন্য পুরীর মন্দিরের দরজা জনসাধারণের জন্য বন্ধ থাকে।
স্নানযাত্রায় মহারাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন স্নানবেদীর চারদিকে রত্মশোভিত চাঁদোয়া ও আবরণবস্ত্র দিয়ে আচ্ছাদিত করে দিতেন। এর কারণ সমস্ত দেবদেবীরা যাতে জগন্নাথের এই স্নানযাত্রা ভালভাবে দেখতে পান তার জন্যই এমন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি। স্নানযাত্রার সময় সুন্দর পট্টবস্ত্র দিয়ে ঢেকে জগন্নাথদেবের সঙ্গে বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে আসা হয় স্নানমঞ্চে। স্নানমঞ্চে নিয়ে যাওয়ার সময় চামর ও তালপাতা দিয়ে বাতাস করা হয়।
কথিত আছে স্নানযাত্রা পর জগন্নাথদেবের জ্বর হয়। জ্বর সারাতে নানা ধরণের মিষ্টান্ন ভোগ দেওয়া হয়। স্নানযাত্রার পর যখন নবমূর্তিতে নানা বেশভূষায় সুসজ্জিত হয়ে দর্শন দেন জগন্নাথদেব। এই উৎসবকে বলা হয় নেত্রোৎসব বা নবযৌবন উৎসব।