
মহাবিশ্বের স্রষ্টা ব্রহ্মার প্রিয় ফুল তো বটেই, এই ফুল অত্যন্ত পবিত্রও। কারণ এই ফুলের বিশেষত্ব হল, শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমার দিনে ভোরের দিকে এই ফুলের পাপড়ি মেলে। হিমালয়ের কোলে এই দুর্লভ ও দুর্মূল্য ফুল হিন্দুধর্মে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। রয়েছে আধ্যাত্মিক তাত্পর্য়ও। বিশ্বাস করা হয়, ব্রহ্মকমল ফুল ইচ্ছে পূরণ করার ক্ষমতা রয়েছে। এই বিরল ফুলকে দেবতাদের ফুল হিসেবেও পরিচিত। তাই দেবতাদের কাছে নিবেদন করলে দেব-দেবীদের নিবেদন করলে তাঁরা আশীর্বাদ প্রদান করেন। হিন্দুধর্মে, ব্রহ্মকমল বিশুদ্ধতা, জ্ঞানার্জন ও আধ্য়াত্মিক অর্জনের প্রতীক।
হিন্দুধর্মে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে এই ফুল অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে ব্যবহার করা হয়। মনে করা হয়, এই ফুল বাড়িতে বা সঙ্গে থাকলে মন ও আত্মাকেও শুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। শুধু তাই নয়, আভ্যন্তরীণ প্রশান্তির জন্যও ব্রহ্মকমলের মাহাত্ম্য রয়েছে। নেতিবাচক শক্তি ও অশুভ আত্মা থেকে দূর রাখার অলৌকিক ক্ষমতাও রয়েছে।
দেশের জাতীয় ও অলৌকিক ফুল হল পদ্ম ফুল। কিন্তুব পদ্মফুলেরও রয়েছে ভিন্ন প্রকার। যার মধ্যে সবচেয়ে অলৌকিক হল ব্রহ্ম কমল ফুল। ব্রহ্ম কমল ফুল একবছরে একবার ফোটে ও মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার জন্য ফুটন্ত অবস্থায় থাকে, তারপর ঝড়ে পড়ে। তারপর সেখান থেকেই আবার ওই ফুলের বীজ উত্পন্ন হয়। বিশ্বাস করা হয় যে ব্রহ্মকমল ফুল ফুটতে দেখলে তার সৌভাগ্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। হিন্দুধর্মে, যে বাড়িতে ব্রহ্মকমল ফুল ফোটে, সেখানে দেবী লক্ষ্মী সর্বদা বিরাজ করেন। জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, ব্রহ্মকমল ফুলের গুরুত্ব এতটাই যে এই ফুলের কিছু প্রতিকার রয়েছে। সেই প্রতিকারগুলি মেনে চললে কখনও অর্থের অভাব হয় না। স্বয়ং দেবী লক্ষ্মীর আশীর্বাদও বজায় থাকে।
-ব্রহ্মকমল ফুলকে ব্রহ্মদেবের প্রতীক বা রূপ বলে মনে করা হয়। যখন এই ফুল ফোটে তখন এই ফুলের উপর ভগবান বিষ্ণুর মূর্তি দেখা যায়। হিন্দুরা বিশ্বাস করেন,মহাদেব ব্রহ্মকমল থেকে জল ছিটিয়ে গণেশকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন, তাই একে সঞ্জীবনী ফুল হিসাবেও পরিচিত।
-জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুসারে, ভগবান শিবকে ব্রহ্মকমল ফুল নিবেদন করলে সঙ্গে সঙ্গে ফল পাওয়া যায়। ফিরে আসে সৌভাগ্যও। শুভ্র সাদা রঙের ব্রহ্মকমল ফুল মহাদেবে অত্যন্ত প্রিয়। বিষ্ণুদেব এই ফুলগুলি ভগবান শিবকে অর্পণ করেছিলেন। যিনি এই ফুল ফুটতে দেখতে পান, তার ভাগ্য বদলে যায়।
-বাড়িতে ব্রহ্মকমল গাছ লাগানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। যে বাড়িতে এই ফুল ফোটে, সেখানে সমৃদ্ধি বজায় থাকে। এই ফুলে দেবী লক্ষ্মীর অধিবাসের কারণে পরিবারের মধ্যে ধন-সম্পদ বৃদ্ধি ও উন্নতির সম্ভাবনা থাকে। বিশ্বাস করা হয় যে এই ফুলের পাপড়ি থেকে অমৃত ফোঁটার আকারে পড়লে বাড়িতে সবসময় ইতিবাচক পরিবেশ বজায় থাকে।
-ব্রহ্মকমল ফুলের রয়েছে বহু আয়ুর্বেদিক গুণ। ক্যান্সার, সর্দি, খুসখুসে কাশি ও ক্লান্তি নিরাময়ে উপকারী। এর পাশাপাশি, শরীরের রক্তকে বিশুদ্ধ করতে দারুণ কার্যকরী। এছাড়া সাপের কামড়, প্লেগের মতো মহামারী ও হৃদরোগের চিকিৎসাতেও রোগনিরাময়ের অনেক সাহায্য করে। ব্রহ্মকমলে অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্যও রয়েছে।
-পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু ভগবান শিবকে মোট হাজারটি ব্রহ্মকমল নিবেদন করেছিলেন, যার মধ্যে একটি ফুল কম পড়ে। ভগবান বিষ্ণু তার একটি চোখ ভগবান শিবকে ফুলের আকারে উৎসর্গ করেছিলেন। এর পর থেকে ভোলেনাথের নাম হয় কমলেশ্বর ও শ্রীহরির নাম কমল নয়ন।