বিমানবন্দরের ব্যস্ততা নতুন করে বলার নয়। তবে বছরে ২ বার কোনও প্রযুক্তিগত কারণে নয়, স্রেফ ধর্মীয় কারণেই দেশের অন্যতম ব্যস্ততম বিমানবন্দর বন্ধ রাখা হয়। হাজার হাজার বছরের নিয়ম অনুযায়ী কেরালার পদ্মস্বামী মন্দিরের অধিষ্ঠিত দেবতার বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার কারণে তিরুবনন্তপুরমের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেল ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত অর্থাত ৫ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখা হয় এই ব্যস্ততম বিমানবন্দর। তবে একবার নয়, বছরে ২বার। কেন এমনটা হয়, তা জানলে অবাক হবেন। কোনও প্রযুক্তগত কারণে নয়, ধর্মীয় কারণে বছরে ২ বার বিমানবন্দরের সব উড়ান চলাচল বন্ধ করা হয়। এর কারণ হল, এদিন কেরালার পদ্মস্বামী মন্দির থেকে বিষ্ণুর শোভাযাত্রা বের হয়। মিছিলের সময় বিমানবন্দরের রানওয়েতে দেবতা বিশ্রাম নেন। হাজার হাজার বছরের প্রথা অনুযায়ী, সমুদ্র সৈকতে স্নান সেরে ভগবান বিষ্ণুর এই শোভাযাত্রা বিমানবন্দরের রানওয়ের রাস্তাতেই ফিরে আসে। এই কারণেই তিরুবনন্তপুরম বিমানবন্দর বছরে দুবার ৫ ঘণ্টা করে ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকে।
ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা
রাজ্যের এই শোভাযাত্রা শতবর্ষের ঐতিহ্য! আনুমানিক ৫ হাজার বছর ধরে মন্দিরের এই শোভাযাত্রা পালিত হচ্ছে। করোনা অতিমারির সময়ও এই শোভাযাত্রা বন্ধ রাখা হয়নি। ২০২০ সালের মার্চ মাসে এই শোভাযাত্রা অত্যন্ত ধুমধাম করে পালন করা হয়েছিল। এমনকি শত শত মানুষও এই স্নানযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন। এই জাঁকজমকপূরণ উত্সবের জন্য বিমানবন্দরে আগেই নোটিশ জারি করা হয়। গত ১ নভেম্বর ছিল সেই দিন। মঙ্গলবার বিকেল ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিমানবন্দর থেকে কোনও ফ্লাইট উড়েনি। শতাব্দী প্রাচীন এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য সমস্ত আভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা এই সময়ের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছিল। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাঁচ ঘণ্টার মধ্যে চারটি আন্তর্জাতিক উড়ান-সহ মোট ৬টি ফ্লাইটের সময় পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছিল।
বিমানবন্দরে বিষ্ণুর শোভাযাত্রা
কেরালার এই বিমানবন্দরটি ২ বার উড়ান পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়। প্রথমবার হল মার্চ-এপ্রিল মাসে পেনকুনি উত্সবের জন্য আর দ্বিতীয়বার অক্টো-বর-মভেম্বরের আরাত্তু শোভাযাত্রার জন্য। আরাত্তু যাত্রায় ভগবান বিষ্ণুকে পালকিতে করে শ্রী পদ্মানাভ স্বামী মন্দির থেকে বিমানবন্দরের ঠিক পিছনেই অবস্থিত শংমুঘাম সৈকতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দেবতাকে সমুদ্রে স্নান করানো হয়।
বিতর্ক
বহু শতাব্দী ধরেই এই মন্দিরের এমন বর্ণাঢ্য ও ঐতিহ্যবাহী যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই পথ দিয়েই দেবতাকে নিয়ে যাওয়া-আসা করানো হয়। ১৯৩২ সালে এই রুটেই বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই সময় ভগবানকে পালকিতে করে কীভাবে শোভাযাত্রা বের করে সমুদ্রে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। সেইসময় বলা হয়েথিল, শোভাযাত্রায় বিমানবন্দরের পথ কখনও বাধা হয়ে থাকবে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই নিয়মই পালন করা হচ্ছে।
রানওয়ের কাছেই রয়েছে আরাত্তু মন্ডরম। যেখানে ভগবান বিষ্ণুকে অল্প সময়ের জন্য বিশ্রামের জন্য রেখে দেওয়া হয়। এখানে বিশ্রাম নেওয়ার পর আবার সমুদ্র সৈকতে নিয়ে যাওয়া হয়। এই স্নানযাত্রা অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। অনুষ্ঠান শেষ হলে ফের ওই রাস্তাতেই পালকিতে করে ফিরিয়ে আনা হয়।
শ্রী পদ্মানাভস্বামী মন্দিরের সঙ্গে রয়েছে ত্রাভাঙ্কোর রাজপরিবারের সম্পর্ক। এই মিছিলে থাকে ৫টি হাতির পাল। হাতির গায়ে রেশমের ছাতা থাকে রাজকীয় এই মিছিলে হাতে পতাকা নিয়ে মন্দিরের কর্মীরা হেঁটে যান। সঙ্গে থাকে রাজপরিবারের সদস্যরাও। সঙ্গে পুলিশি নিরাপত্তাও চোখে পড়ে। ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টার তালে এই শোভাযাত্রা বের হয় মহাআড়ম্বরে। দেবতা পদ্মনাভস্বামী, নরসিংহ মূর্তি এবং কৃষ্ণ স্বামীর উৎসব বিগ্রহগুলি বহন করা হয় ওইদিন। ফেরার পথে মশাল জ্বালিয়ে শোভাযাত্রা শেষ করা হয়।
পদ্মনাভস্বামী মন্দির
কেরলের তিরুবনন্তপুরমের পদ্মনাভস্বামী মন্দিরটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আকর্ষণেরও। এটি একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির। ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে এই মন্দিরটি ভারতের প্রাচীন মন্দিরগুলির মধ্যে অন্যতম । কথিত আছে, এই মন্দিরে শ্রীকৃষ্ণের দাদা বলরাম অবস্থান করেছিলেন। স্কন্দপুরাণ ও পদ্মপুরাণে এই মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রায় ৫ হাজারেরও আগে এই মন্দির নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তবে মন্গিরের নির্মাণের কোনও সঠিক প্রমাণ নেই। প্রসঙ্গত, পদ্মনাভস্বামী ত্রাভাঙ্কোরের রাজপরিবারের পৃষ্ঠপোষক দেবতা।