
শাক্ত মতে অমাবস্যার মাহাত্ম্য বিস্তর। তবে ভাদ্র মাসের অমাবস্যার গুরুত্ব আর পাঁচটা অমাবস্যার থেকে ভিন্ন। জ্যোতির্বিদ্যাতেও এই অমাবস্যার চন্দ্রকলার প্রথম ধাপ বলে মনে করা হয়। তাই ধর্মীয় ক্ষেত্রেও অমাবস্যার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। ভাদ্র মাসের এই বিশেষ অমাবস্যাকে কৌশিকী অমাবস্যাও বলা হয়। মার্কেণ্ডেয় পুরাণ মতে, এই পুণ্যতিথিতে শুম্ভ-নিশুম্ভকে বধ করার পর দেবী পার্বতীর দেহের কোষ থেকে দেবী কৌশিকী দেবীর আবির্ভাব ঘটেছিল। তাই এই অমাবস্যা কৌশিকী অমাবস্যা নামেও পরিচিত। এদিন তারা মায়ের কাছে মনোবাসনা পূরণ করার জন্য লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হয়।
এই শুভ তিথি আবার তন্ত্রসাধনারও জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এদিনে দেশ-বিদেশ থেকে সাধকরা তারাপীঠের মহাশ্মশানে ভিড় করেন। সারারাত জেগে সাধনা করেন। এই তিথিকে অনেকেই ‘তারা নিশি’ বলেও অভিহিত করে থাকেন। হিন্দু ছাড়াও এদিন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছেও বিশেষ দিন। তারাপীঠের শীলাময়ী দেবীকে বিশেষ রীতিতে পুজো করা হয়। তিথির আগের দিন ভোররাত তিনটের সময় থেকে মূল মন্দির থেকে বিশ্রাম মন্দিরে তারা মাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেইসম ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ার মতো। ভক্ত ও সেবায়তদের উপস্থিতিতে দেবীর স্নানাভিষেক করানো হয়। তারপর নতুন বেনারসি পরিয়ে মুণ্ডমালা, হস্তমালা ও ফুলের সাজে ধ্যানময়ী মূর্তিকে মঙ্গলারতি করা হয়। রাজবেশে আরতি নেন তারা মা। তারপর ভক্তরা পুজো দিতে শুরু করেন। এদিন বিশেষ ভোগও নিবেদন করা হয়। ভোগের থালিতে থাকে রাজকীয় ভোজ। দুপুরে বিশেষ কোনও অন্নভোগ গ্রহণ করেন না। শুধু তারা মা-ই নয়, সেবাইত থেকে ভক্তরাও অন্নগ্রহণ পর্যন্ত করেন না। সারাদিন পুজো দেওয়ার পর সন্ধ্যের সময় বিশ্রাম মন্দির থেকে ফের মূল মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই দৃশ্য দেখার জন্যও হাজার হাজার ভক্ত উপস্থিত থাকেন।
মঙ্গলারতির পর তারা মাকে দেওয়া হয় রাজকীয় ভোগ
মূল মন্দিরে নিয়ে আসার পর নিবেদন করা হয় ভোগের থালি। সেই থালিতে থাকে আমিষ খাবার। চিড়ে, লুচি, মিষ্টি, পায়েসের সুস্বাদু ভোগ। এছাড়া আরতির পর দেওয়া হয় খিচুরি, বাসন্তী পোলাও, অন্নভোগ, পঞ্চব্যঞ্জন, ছয় রকমের ভাজা, শুক্তো, মাছের কালিয়া, পাঁঠার মাংস বা বলির মাংস, পোড়া শোল মাছ, পায়েস, চাটনি, মিষ্টি। সঙ্গে দেওয়া হয় ব্র্যান্ডেড মদের বোতল। পোড়া শোলা মাছ ছাড়া মুখে রোচে না তারাপীঠের তারা মায়ের। যাঁরা মানত করেন, তাঁরাও এই ভোগের থালি নিবেদন করেন, সঙ্গে ডালিতে অবশ্যই এই মদের বোতল দেওয়ার রেওয়াজ থাকে। শাক্তমতে কোনও কালীকে মদ দেওয়া হয় কিনা জানা নেই। এই মদকেই কারণবারি বলা হয়। এই প্রথা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। পুজোর পর সেই ভোগ প্রসাদ হিসেবে ভক্তদের মধ্যে বিলি করা হয়। তবে রাতের ভোগ হিসেবে নিরামিষ খাবারই নিবেদন করা হয়।
শুধু মন্দিরের দেবীকেই নয়, ভোগ নিবেদন করা হয় বামাখ্যাপা ও তাঁর প্রিয় কুকুর শিবাকেও। প্রথা অনুযায়ী, সন্তানকে খাইয়ে তবেই তারা মা নিজে ভোগ গ্রহণ করে থাকেন। এই নিয়মের কখনও অন্যথা করা হয় না। তাই বামদেবের ভোগ সবার আগে দেওয়া হয়। ভোগের তালিকায় থাকে প্রেত ভোগও। মধ্যরাতে একবারই প্রেত ভোগের আয়োজন করা হয়ে থাকে।