
দুর্গাপুজোর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বলিদানের ইতিহাস। কোথাও পশুবলি, কোথাও চালকুমড়ো, কোথাও আখ, বনেদি বাড়ি থেকে মন্দির, বারোয়ারি পুজো, একেক জায়গায় রয়েছে একেক রকমের নিয়ম কানুন। ছাগ থেকে, মাছ, মহিষ খুঁজলে পাওয়া যায় এই সবের বলিদানের ইতিহাস। আজও কোথাও কোথাও প্রচলিত রয়েছে সেই সব প্রাচীন নিয়ম। কোথাও আবার কালের নিয়মে সময়ের সঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেই সব প্রথা। শাক্তমতে দেবীকে কোনও না কোনও জীবকে উৎসর্গ করার প্রথা বহু প্রাচীন।
সময়ের সঙ্গে এই বাংলাতেও বেড়েছে বৈষ্ণব ভাবধারার প্রভাব। কমেছে জীব উৎসর্গ করার প্রবণতা। বদলে এসেছে চালকুমড়ো, আখ ইত্যাদি উৎসর্গ করার চল। বেশিরভাগ জায়গায় এই বলি হয় নবমী তিথিতে। এই দিন দেবী দুর্গাকে পুজো করা হয় মহিষাসুরমর্দিনী চণ্ডী রূপে। দেবীর কাছে প্রার্থনা করা হয় শক্তি, শান্তি, অন্ন-সমৃদ্ধির।
শাস্ত্রমতে মহানবমীতে নিবেদন বা অর্পণের বিশেষ কিছু নিয়ম আছে। যা ভক্তিভরে পালন করলে দেবী সন্তুষ্ট হন।
নবমীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রীতি পুষ্পাঞ্জলি। ভোরবেলায় গঙ্গাজলে ধোয়া ফুল ও বেলপাতা হাতে নিয়ে দেবীকে অর্ঘ্য নিবেদন করা শুভ। বিশেষ করে বেলপাতায় তিনটি পত্র একত্রে থাকতে হয়, যা দেবীর ত্রিনেত্র ও শক্তির প্রতীক।
মহানবমীতে দেবীর ভোগ এমনিতে নিরামিষ হলেও বলির চল থাকলে সেটাও নিবেদন করা হয়। ভোগ নিবেদন শেষে প্রসাদ ভক্তদের মধ্যে বিতরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
শাস্ত্র অনুযায়ী মহানবমীতে হোমযজ্ঞের বিশেষ তাৎপর্য আছে। আগুন জ্বালিয়ে তাতে ঘি, নৈবেদ্য ও মন্ত্রোচ্চারণ সহকারে আহুতি প্রদান করা হয়। এতে পরিবেশ শুদ্ধ হয় এবং দেবীর কৃপা লাভ হয় বলে বিশ্বাস।
নবমী রাতে দেবী পূজিত হন চণ্ডী বা চামুণ্ডা রূপে। এই সময়ে দেবীকে রক্তচন্দন, লাল ফুল, রক্তরঙা বস্ত্র ও সিঁদুর নিবেদন করাকে শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস, এতে অশুভ শক্তি নষ্ট হয় এবং সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়।