Durga Puja 2023: মহালয়া অমাবস্যা কখন থেকে শুরু? মর্ত্যে উমার শুভাগমন কীভাবে ঘটেছিল, জানুন পৌরাণিক কাহিনি

Durga And Mythology: শাক্তধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল দেবীভাগবত পুরাণ। এই গ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত হিন্দুপুরাণ। অন্যদিকে দুর্গাপুজো ও দুর্গাকে ঘিরে রয়েছে বহু পৌরাণিক কাহিনি। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল শ্রী শ্রী চণ্ডী। যা দেবীমাহাত্ম্যম নামে পরিচিত। মহালয়ার পর দেবীপক্ষের সময় এই চণ্ডীপাঠকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়।

Durga Puja 2023: মহালয়া অমাবস্যা কখন থেকে শুরু? মর্ত্যে উমার শুভাগমন কীভাবে ঘটেছিল, জানুন পৌরাণিক কাহিনি

| Edited By: দীপ্তা দাস

Oct 13, 2023 | 6:52 PM

শান্তির বার্তা ও অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে সবকিছু শুভ করার উদ্দেশ্যে যুগ যুগ ধরে মর্ত্যে আগমন ঘটে দেবী দুর্গার। সনাতন হিন্দুধর্মে মহালয়া ও দুর্গাপুজোকে অন্য়মাত্রায় গুরুত্ব দেওয়া হয়। পিতৃপক্ষের অন্তিমদিনকে বলা হয় মহালয়া। শাস্ত্র মতে, এদিন পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি কামনায় তর্পণ করা হয়ে থাকে। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ও সর্বদা আশীর্বাদ বর্ষণের জন্য পঞ্জিকা ও রীতি মেনে তর্পণ করা হয়। মহালয়া অমবাস্যার পাশাপাশি এবছর একসঙ্গে পালিত হবে বছরের শেষ ও দ্বিতীয় সূর্যগ্রহণও। তাই পিতৃপক্ষের তর্পণ ও শ্রাদ্ধ করার পরিকল্পনা করে থাকলে, কখন পড়েছে এই বিশেষ তিথি তা জেনে নেওয়া উচিত।

বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, শুক্রবার, ১৩ অক্টোবর (বাংলা ক্যালেন্ডার মতে, ২৬ আশ্বিন) রাত ৯টা ৫২ মিনিট থেকে অমাবস্যা তিথি শুরু হচ্ছে। সমাপ্ত হবে শনিবার, ১৪ অক্টোবর ( বাংলা ক্যালেন্ডার মতে, ২৭ আশ্বিন) রাত ১১টা ২৫ মিনিটে। অন্যদিকে গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মেনে চললে, শুক্রবার ১৩ অক্টোবর রাত ৯টা ২৬ মিনিট থেকে মহালয়া অমাবস্যা শুরু হচ্ছে। থাকবে ১৪ অক্টোবর, শনিবার রা ১০টা ৪৯ মিনিট পর্যন্ত।

শাক্তধর্মের অন্যতম প্রধান ধর্মগ্রন্থ হল দেবীভাগবত পুরাণ। এই গ্রন্থটি সংস্কৃত ভাষায় রচিত হিন্দুপুরাণ। অন্যদিকে দুর্গাপুজো ও দুর্গাকে ঘিরে রয়েছে বহু পৌরাণিক কাহিনি। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হল শ্রী শ্রী চণ্ডী। যা দেবীমাহাত্ম্যম নামে পরিচিত। মহালয়ার পর দেবীপক্ষের সময় এই চণ্ডীপাঠকে অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের কণ্ঠে মহিষাসুরমর্দিনী শ্রবণ করা বাঙালির রক্তে রক্তে বিদ্য়মান। আর এই চণ্ডীপাঠের অন্যতম অপরিহার্য অঙ্গ হল দুর্গাপুজো। প্রতিটি গল্পের মূল চরিত্র হলেন স্বয়ং দেবী।

মহিষাসুর বধ ও মর্ত্যে শুভাগমন

শ্রী শ্রী চণ্ডী গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে, দেবী দুর্গার কাহিনিগুলির মধ্য়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় কাহিনি হল মহিষাসুর বধ। পৌরাণিক কাহিনি মতে, একযুদ্ধে মহিষাসুর দেবগণকে পরাস্ত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত দেবগণ প্রথমে প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে উপস্থিত হন। কাতর আর্তি জানিয়ে তাদের অবস্থার কথা শোনান। পরে ব্রহ্মাকে মুখপাত্র করে শিব ও নারায়ণের সামনে অভিযোগ জানাতে উপস্থিত হলেন। মহিষাসুরের অত্যাচার কাহিনি শ্রবণ করার পরেই উভয় দেবতা অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হয়ে ওঠেন। সেই ক্রোধে রুদ্রমূর্তি ফুটে ওঠে। প্রথমে বিষ্ণু ও পরে শিব- ব্রহ্মার মুখমণ্ডল থেকে এক অলৌকিক মহাতেজ নির্গত হয়। তারপর ইন্দ্র-সহ অন্যান্য দেবতাদের দেহ থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হয়। সেই মহাতেজে মিলিত হয় হিমালয়ে অবস্থিত ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে। সেখানে বিরাট ও উজ্জ্বল তেজ মিলিত হয়ে এক নারীমূর্তি ধারণ করে। কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূত হওয়ায় এই দেবীকে কাত্যায়নী নামে অভিহিতা করা হয়। দেবী কাত্যায়নী ছিলেন দেবী পার্বতীরই অন্য রূপ বা অবতার।

এরপর, এক এক দেবের প্রভাবে দেবীর এক এক অঙ্গ উৎপন্ন হয়। প্রত্যেক দেবতা তাদের অস্ত্র দেবীকে দান করেন। হিমালয় দেবীকে তার বাহন সিংহ দান করেছিলেন। এই দেবীই অষ্টাদশভূজা মহালক্ষ্মী রূপ ধারণ করেন। শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে, মহালক্ষ্মী দেবী মহিষাসুর বধ করতে যাত্রা শুরু করেন। ইনিই স্বয়ং দেবী দুর্গা। বাঙালির কাছে এই দেবীই আবার দশভুজা হিসেবে পরিচিত। এদিকে অসুরকূলকে ধ্বংস করতে সিংহে চরে দেবী যাত্রা শুরু করলে ত্রিভুবন কম্পিত হতে থাকে। সেই কম্পনে অত্য়ন্ত ভীত হয়ে পড়ে মহিষাসুর। সাধারণ নারী হিসেবে মনে করে তাঁকে হত্যা করা জন্য প্রথমে অসুরদের মধ্যে বীরযোদ্ধাদের পাঠাতে শুরু করেন মহিষাসুর। দেবী ও তার বাহন সিংহের কাছে পরাজিত হয়ে প্রাণ ত্যাগ করে সকল যোদ্ধা ও অসুরসেনা। তখন দেবীকে পরাস্ত করে যুদ্ধক্ষেত্রে নামে মহিষাসুর। ঐন্দ্রজালিক মহিষাসুর নানা রূপ ধারণ করে দেবীকে ভয় দেখাতে ও সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দেবীর শক্তি ও বুদ্ধির কাছে হেরে যান মহিষাসুর। রাগে, ক্রোধে ও অহঙ্কারে অসুর গর্জন করতে থাকে। কিন্তু সেই গর্জনকে পাত্তা না দিয়ে দেবী সেই সময় মধুপান করতে থাকেন। তারপরই লাফ দিয়ে অসুরের উপর চড়াও হয়ে তার গলায় ত্রিশূল দিয়ে বুক চিরে দিয়ে বধ করেন। মহিষাসুরের অবস্থা দেখে স্বর্গরাজ্য় থেকে ভয়ে পালিয়ে যায় অসুরসেনা। তারপরই দেবতারা স্বর্গে ফিরে এসে দেবী দুর্গার নামে আনন্দধ্বনি করতে থাকেন। পুরাণ অনুযায়ী, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে দেবী কাত্যায়নী আবির্ভূতা হয়েছিলেন। শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী তিথিতে কাত্যায়ন দেবীকে পুজো করা হয়। আর দশমীর দিন দেবী মহিষাসুর বধ করেন।