
প্রতি বছর চৈত্র মাসের উজ্জ্বল পাক্ষিকের পূর্ণিমা তিথিতে হনুমান জয়ন্তী পালিত হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে ভগবান হনুমানের জন্ম হয়েছিল ও ভক্তরা এই দিনটিকে হনুমানজির জন্মবার্ষিকী হিসাবে ধুমধাম করে ভক্তির সঙ্গে উদযাপন করেন। এবছর ৬ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার হনুমান জয়ন্তীর উৎসব পালিত হচ্ছে। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, ভগবান রাম হলেন শ্রী হরি বিষ্ণুর সপ্তম অবতার। যেখানে হনুমান শিবের ১১তম রুদ্রাবতার হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কথিত আছে যে হনুমান ভগবান রামকে রক্ষা করার জন্য জন্মগ্রহণ করেছিলেন ও হনুমান হলেন ভগবান রামের প্রিয় এবং পরম ভক্ত।
ভগবান হনুমানকে শ্রীরামের সবচেয়ে বড় ভক্ত বলা হয়। তাই হনুমানজি তার বক্ষ ছিঁড়ে দেখিয়েছিলেন যে তার হৃদয়ে ও প্রতিটি ছিদ্রে কেবল শ্রীরামচন্দ্রই বাস করেন। কিন্তু, সেই পরমভক্তকেই হত্যা করতে হনুমানকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছিলেন রাম। শুধু তাই নয়, একটি ভুলের কারণে তাঁকে ব্রহ্মাস্ত্রও নিক্ষেপ করেছিলেন তিনি।
ভগবান রাম ও হনুমানের গল্প
ভগবান রাম ও হনুমান সম্পর্কিত একটি কিংবদন্তি অনুসারে, একবার রামচন্দ্রের দরবারে দেব ঋষি নারদ, বশিষ্ঠ বিশ্বামিত্র ও মহান ঋষিদের মিলন সভা হয়েছিল। রাম নাম ভগবান রামের চেয়ে বড় কি না তা নিয়ে বিচারসভায় আলোচনায় মত্ত ছিলেন সকলেই। মানে রাম বেশি শক্তিশালী না রাম নাম। এ আলোচনায় সভায় উপস্থিত সকল বিশিষ্ট ও গুণীজনরা নিজ নিজ মতামত রাখেন। সবাই রামকে আরও শক্তিশালী বলেছিলেন। কিন্তু নারদ মুনি বললেন, রামের চেয়ে রাম নামই বেশি শক্তিশালী। তিনি তার বক্তব্যকে সত্য বলেই দাবি করেছিলেন। হনুমানজিও সেই আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ও নীরবে মহান ঋষিদের কথা শুনছিলেন।
সভা শেষ হওয়ার পর, নারদ মুনি হনুমানজিকে সমস্ত ঋষিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বললেন। কিন্তু বিশ্বামিত্রকে ছাড়া। হনুমানজি যখন জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কেন আমি ঋষি বিশ্বামিত্রকে প্রণাম ও অভিবাদন করব না’? তখন নারদ বললেন, কারণ তিনি আগে রাজা ছিলেন। সেজন্য তিনি ঋষি নন। হনুমানজি নারদের কথামতো সমস্ত ঋষিদের সম্মান প্রদান করেন ও বিশ্বামিত্রকে উপেক্ষা করে তাঁকে নমস্কার করেননি। তাঁর অপমান দেখে বিশ্বামিত্র ভীষণ রেগে যান ও হনুমানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
এই ভুলের কারণেই শ্রীরামের কাছ থেকে বিশ্বামিত্র হনুমানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন। হনুমান শ্রীরামের খুব প্রিয় ভক্ত ছিলেন। কিন্তু বিশ্বামিত্রও তাঁর গুরু ছিলেন , তাই গুরুর আদেশ পালন করাই ছিল তাঁর সবচেয়ে বড় কর্তব্য। গুরুর আদেশ মেনে নিয়ে ভগবান রামও তাঁর প্রিয় ভক্তকে মৃত্যুদণ্ড দিতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
এই চরম পরিস্থিতিতে হনুমানজি বুঝতে পারলেন না কেন ভগবান রাম তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন! বিপদ বুঝে বুদ্ধিমান নারদজি হনুমানকে রামের নাম জপ করার পরামর্শ দেন। বজরঙ্গবলী তখন একটি গাছের নিচে বসে রাম নাম জপ করতে শুরু করেন। রাম নাম জপ করতে করতে তিনি রামের সুরে এতটাই মগ্ন হয়ে যান যে গভীর ধ্যানে চলে যান। ভগবান রাম যখন হনুমানকে লক্ষ্য করে ব্রহ্মাস্ত্র ছুড়তে উদ্যত হোন, তখন তার কোনও প্রভাব পড়ে না। কারণ তিনি রামের ভক্তিতে মগ্ন ছিলেন। নিজের তীর ব্যর্থ হতে দেখে শ্রীরাম ভাবলেন যে ভক্ত আমার নাম জপ করছে তার কি করে ক্ষতি করব?