হিন্দুশাস্ত্রে (Hinduism) সাপকে সম্বোধন করা হয় ‘নাগ’ হিসেবে। ‘নাগে’দের (Snakes) উপদেবতা হিসেবে মান্য করা হয় শাস্ত্রে। সাপকে প্রজনন ক্ষমতার প্রতীক হিসেবেও ধরা হয় কিছু ক্ষেত্রে। এছাড়া মনে করা হয়, সাপেরা ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী। প্রচলিত কাহিনি অনুসারে সাপেরা নাগলোকের বাসিন্দা। এছাড়া হিন্দু পুরাণেও নাগের উল্লেখ আছে। মহাদেবের (Lord Shiva) গলায় সাপ তিনবার পেঁচিয়ে থাকে। এই তিনটি পাক আসলে বর্তমান, অতীত এবং ভবিষ্যতকে সূচিত করে। আবার ক্ষীরসাগরে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা হাজার ফণাযুক্ত শেষ নাগের দেহেই বিশ্রাম নেন ভগবান শ্রীবিষ্ণু (Lord Vishnu)। তাঁর এই বিশেষ অবস্থানের নাম যোগনিদ্রা। অতএব হিন্দু ধর্মে সাপ বা নাগদেবতা এবং নাগদেবী বিশেষ স্থান দখল করে আছে। চলতি বছরে ২ আগস্ট, মঙ্গলবার পালিত হবে নাগপঞ্চমী (Nag Panchami 2022)।
মহাদেবের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে সাপ। মহাদেবের সঙ্গে সাপেরও পূজা হয়। নাগপঞ্চমীতে মহাদেবের রুদ্রাভিষেক করলে তিনি অত্যন্ত প্রসন্ন হন। চিরাচরিত ঐতিহ্য অনুসারে ওই দিন সাপকে দুধ পান করতে দেওয়া হয়।
কেন দেওয়া হয় দুধ?
উজ্জয়িনের মহাকালেশ্বর মন্দিরে নাগচন্দ্রেশ্বর মহাদেব বিরাজ করছেন। সেখানে খুব ভোরে ভক্তদের জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়। ওইদিন ভক্তরা সাপকে দুধ ও ভোগ দেন। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, সাপকে দুধ ও ভোগ দিলে কেটে যায় কালসর্প দোষ। এই দোষে রাহু এবং কেতুর ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় বাকি সাতটি গ্রহ। ফলে জাতক অনেক খাটাখাটনি করলেও উপযুক্ত ফল পান না।
ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও মহিলারা সঠিক জীবনসঙ্গী লাভের আশায় ওইদিন সাপের মূর্তিতে দুধ প্রদান করেন। এছাড়া সাপের কোপে পড়ে যাতে তার পরিবারের কারও ক্ষতি না হয় সেই প্রার্থনাও করেন। সাপের পূজা করলে মহাদেবও প্রসন্ন হন।
কিছু জায়গায় জীবন্ত সাপেরও পূজা হয় ও তাকে দুধ নিবেদন করা হয়। দুধ সহযোগে সাপের পূজার উদ্দেশ্য হল জীবন থেকে শত্রু ও নেতিবাচক শক্তিকে দূরে রাখা।
কিংবদন্তি
কিংবদন্তি অনুসারে ভগবান কৃষ্ণের লীলার সময়কালে কলিঙ্গ নামে এক ভয়ানক সাপ যমুনা নদীতে বাস করত। ফলে ব্রজের বাসিন্দারা কেউ নদীতে নামতে পারতেন না বা জল পান করতে পারতেন না। সাপের তীব্র বিষে যমুনার জল হয়ে গিয়েছিল মারাত্মক বিষাক্ত। এই কারণে কলিঙ্গের সঙ্গে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ শুরু করেন ভগবান কৃষ্ণ ও তাকে পরাজিত করেন। এরপর তাকে যমুনার জল পুনরায় শুদ্ধ করে দিতে নির্দেশ দেয়। কলিঙ্গ ভগবান কৃষ্ণের নির্দেশ মেনে নেন। কৃষ্ণও প্রসন্ন হন ও বলেন নাগপঞ্চমীর দিন যে ভক্ত সাপকে দুধ নিবেদন করবে ও প্রার্থনা করবে সে সমস্ত পাপ ও সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে।
এছাড়া পুরাণ থেকে জানা যায় সমুদ্রমন্থনের সময়ে সমুদ্রতল থেকে ভয়ঙ্কর এক বিষ উঠে আসে। সেই বিষের তেজে সৃষ্টি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়। সেই সময় মহাদেব ওই বিষ গলায় ধারণ করেন। এমনকী কয়েক ফোঁটা বিষ মহাদেবের গলায় থাকা সাপটিও পান করেছিল। সাপের বিষের প্রভাবমুক্ত করার জন্য দেবতারা মহাদেব ও সাপকে গঙ্গাজল নিবেদন করেছিলেন। সেই কথা স্মরণে রেখে আজও নাগপঞ্চমীর দিন মহাদেব ও সাপকে দুধ নিবেদন করা হয়।
তবে আমরা যতই ভয় পাই না কেন, বাস্তবে সাপেরা আমাদের উপকারই করে। চাষের জমিতে ইঁদুর খেয়ে নেয় সাপ। ইঁদুর ফসলের ভয়ঙ্কর ক্ষতি করে। তাই সাপ ইঁদুর খেয়ে ফসল বাঁচায়। মানুষও অনাহারে থাকার হাত থেকে রক্ষা পায়।