হিন্দু রীতি অনুসারে পূজার শেষে যজ্ঞের (Homa) নিয়ম দেখা যায়। সব সময় না হলেও, বিশেষ বিশেষ সময়ে এই যজ্ঞ করতে দেখা যায়। বৈদিক শাস্ত্রানুসারে বলা হয়, যজ্ঞের মাধ্যমে যা অগ্নাহুতি দেওয়া হয় তা সম্পূর্ণরূপেই দেবতার কাছে পৌছায়। সেই বিশ্বাসে মানুষজন যজ্ঞ করে থাকেন।
বেদের মাধ্যমে বৈদিক ঋষিরা বারংবার যজ্ঞের কথা মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। যে কোন সমস্যায় যজ্ঞের মাধ্যমেই তাঁর সমাধান সম্ভব বলেও মনে করা হয়। তবে একবার যজ্ঞ করলেই যে মনবাঞ্ছা পূর্ণ হবে, তা কিন্তু নয়। নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে যজ্ঞ করতে হয়। তবেই অর্থ , কর্ম ,শারীরিক বা বশীকরণ যে কোন সমস্যারই সমাধান পাওয়া যায়। শাস্ত্র মতে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন রকম যজ্ঞ করার রীতি বর্ণিত আছে। যেমন- সন্তান সমস্যার জন্য গোপাল হোম , নবগ্রহের সমসার জন্য নবগ্রহ যজ্ঞ , আর্থিক সমসস্যার জন্য মহালক্ষ্মীর যজ্ঞ ছাড়াও আরও অনেক যজ্ঞের উল্লেখ পাওয়া যায়।
যজ্ঞ করবার সময় বিশেষ কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে। তবে যজ্ঞ করবার সময় কোন ভুল হলে, পরিবারের অকল্যাণ হবে, এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে। যজ্ঞ করবার সময় শুদ্ধ মনে ভক্তিভাবে মন্ত্র উচ্চারণ করে ভগবানকে স্মরণ করতে হবে। তা হলেই মনবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।
যজ্ঞ সাধারণত চার প্রকারেরঃ
১) ভূত যজ্ঞঃ প্রকাশমান বিশ্বের যে কোন সত্তার সেবা করার নাম ভূতযজ্ঞ । যেমন, বৃক্ষে জল দান করা । পশুদের সেবা করা, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান করা তথা জনকল্যাণমূলক কার্য মাত্রই ভূতযজ্ঞ । সংস্কৃত ভাষায় ভূত শব্দের অর্থ যার উৎপত্তি হয়েছিল।
২)নৃযজ্ঞঃ মানুষের কল্যাণমূলক সমস্ত কাজই নৃযজ্ঞ । বস্তুতঃ নৃযজ্ঞ ভূতযজ্ঞেরই একটি অংশমাত্র, কারণ মানুষও তো সৃষ্ট জীব।
৩)পিতৃযজ্ঞঃ পূর্বপুরুষদের ও ঋষিদের স্মরণ করাকে পিতৃযজ্ঞ বলে। মানুষ যতক্ষণ দেহধারণ করে রয়েছে ততক্ষণ সে পূর্বপুরুষদের কাছে ঋণী হয়ে রয়েছে। যতক্ষণ সে ঋষিদের তপস্যালব্ধ জ্ঞানের সাহায্যে নিজের ও সমাজের স্বাচ্ছন্দ্যমূলক ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হচ্ছে , ততক্ষণ সে ঋষিদের কাছে ঋণী হয়ে রয়েছে।
৪)অধ্যাত্মযজ্ঞঃ অধ্যাত্মযজ্ঞ সম্পূর্ণভাবেই আভ্যন্তরীণ । অধ্যাত্মযজ্ঞের প্রেরণা আসে আত্মা থেকে আর ঐ প্রেরণা মানসিক স্তরে কর্মাণ্বিত হয়, (অর্থাৎ সাধনা করে মন ) আবার ঐ কর্মের অবলুপ্তিও আত্মিক স্তরেই হয়, অর্থাৎ মানস সাধনার পরিশ্রান্তি শেষ স্থিতি লাভ করে আত্মিক প্রশান্তিতে। অধ্যাত্মযজ্ঞ নিবৃত্তিমূলক সাধনা, আর বাকি তিনটে – ভূত, নৃ ও পিতৃযজ্ঞ – প্রবৃত্তি-নিবৃত্তিমূলক।
যজ্ঞের কয়েকটি বিশেষ নিয়ম হল, যেমন- যজ্ঞে নিয়োজিত ঘি হতে হবে শুদ্ধ এবং গরুর খাটি দুধ দিয়ে তৈরি। পূজা সমাপ্ত হওয়ার আগে যেন কোন ভাবেই যজ্ঞের আগুন নিভে না যায়। তাহলে তা অমঙ্গলের চিহ্ন স্বরূপ ধরা হয়। প্রতিটি যজ্ঞের জন্য আলাদা আলাদা কাষ্ঠ থাকে। তা সঠিকভাবে নির্বাচন করতে হবে। এবং অতি অবশ্যই আহুতি-মন্ত্র সঠিক এবং শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: Havan: যে কোনও পুজোয় হোম করা হয়! এর ধর্মীয় তাৎপর্য জানা আছে কি?