বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণ। বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, কার্তিকমাসের শেষ দিনে মানে কার্তিক সংক্রান্তির দিনে পশ্চিবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ধুমধাম করে কার্তিক পুজো করা হয়। পুরাণ মতে, কার্তিক হল দেবসেনাপতি। যুদ্ধের দেবতাও বলা হয়। মহাদেব শিব ও দেবী পার্বতীর সন্তান হলেন কার্তিক। প্রাচীন ভারতে অত্যন্ত জনপ্রিয় ও প্রাচীন দেবতা হিসেবে পূজিত হন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ওড়িশা, দক্ষিণভারতে কার্তিকের পুজো ধুমধাম করে পালন করা হয়। বাংলা চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া, কাটোয়া কার্তিক লড়াই দেখার জন্য ভিড় করেন উত্সুকরা। তবে কার্তিকেয়র পুজোয় সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় দক্ষিণ ভারতে।
কার্তিকের বাহন ময়ূর কেন?
ছোটবেলায় দিদা-ঠাকুমাদের মুখে অনেকেই গল্পের মত করে শুনেছেন যে, কার্তিক ময়ূরের পিঠে চড়ে যেখানে -সেখানে ঘুড়ে বেড়াতেন। তবে একথা একেবারেই ফেলনাও নয়। কারণ চিরকুমার কার্তিকের বাহনই হল ময়ূর। মহাভারতের মতে, কার্তিককে ময়ূর দিয়েছিলেন ভগবান অগ্নি। আবার মত্স্য পুরাণে বলা আছে বিশ্বকর্মা কার্তিককে ময়ূর দিয়েছিলেন। পুরাণ মত, কার্তিক হলেন সব দেবতাদের মধ্যে সুপুরুষ ও সুদর্শন। তাঁর রূপ ও গুণের সমতুল্য হিসেবে ময়ূরকেই বেছে নেওয়া হয়েছে। ময়ূরের সৌন্দর্য আলাদা করে বলার কিছু নেই। পেখম তুলে নাচলে এই পাখির সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে ময়ূর হল সৌন্দর্যের প্রতীক। এছাড়া কার্তিককেও ক্ষত্রিয় শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
পুরাণের তথ্য অনুসারে, ব্রহ্মার বরে মহাবলী তারকাসুরকে বধ করার জন্যই কার্তিকের আর্বিভাব হয়েছিল। তারকাসুরকে বধ করার জন্যই কার্তিকের জন্মগ্রহণ হয়েছিল। কার্তিকের অপর নাম ষড়ানন। কারণ কার্তিকের মাথা একটি নয়, ছয়টি। কার্তিক পুজোর গুরুত্বের সঙ্গে বাংলা আবার অন্য লোকাচারও রয়েছে। মনে করা হয়, নববিবাহিত বা নিঃসন্তান দম্পতিরা যদি কার্তিক পুজো করেন তাহলে তাদের কোলে ফুটফুটে কার্তিকের মতন পুত্রসন্তানের জন্ম নেবে। তাই মজার ছলে তো বটেই , পরিচিতরা কার্তিক পুজোর আগে নববিবাহিতদের বাড়িতে ঠাকুর ফেলে চলে যায়। তবে সবটাই সন্তানপ্রাপ্তির জন নয়। কথিত আছে, ব্রহ্মা ও বিষ্ণুর পুত্রীদের বিয়ে করেন কার্তিক । ব্রহ্মা ও সাবেত্রীর মেয়ে হলেন দেবী ষষ্ঠী। পুরাণ অনুযায়ী, কার্তিকের স্ত্রী হলেন দেবী ষষ্ঠী। তিনি জন্মসূত্রের দেবী। সন্তানদের রক্ষা করা ও আগলে রাখাই মূল উদ্দেশ্য। সেই কারণেই সন্তানলাভের আশায় কার্তিক পুজো করা হয়।