
যদা যদা হি ধর্মস্য গ্লানির্ভবতি ভারত।
অভ্যুত্থানমধর্মস্য তদাত্মনং সৃজামহ্যম্।।
পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম্।
ধর্মসংস্থাপনার্থায় সম্ভবামি যুগে যুগে।।
গীতার এই দুই শ্লোকের অর্থ, হে ভারত! যখনই ধর্মের অধঃপতন হয় এবং অধর্মের অভ্যুত্থান হয়, তখন আমি নিজেকে প্রকাশ করে অবতীর্ণ হই।
সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য এবং দুষ্কৃতকারীদের বিনাশ করার জন্য, ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই।
তিনি শ্রীকৃষ্ণ, তিনি স্বয়ং ব্রহ্মাণ্ড! তিনিই পাপ, তিনিই পুণ্য, তিনি ভাল, তিনিই খারাপ! ধর্ম তিনি, অধর্ম তিনি। জন্ম তিনি, মৃত্যু তিনি! কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে শত্রুশিবিরে নিজের আত্মজনকে দেখে যখন গান্ডীব ত্যাগ করেছিলেন অর্জুন, তখন নিজের বিশ্বরূপে আবির্ভূত হন শ্রীকৃষ্ণ। সেদিন পার্থকে এই পাঠই দিয়েছিলেন পার্থসারথী। সেদিন ওই যুদ্ধ ক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে কৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছিলেন কেন এই যুদ্ধ প্রয়োজন! কখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে যুদ্ধ?
কৃষ্ণ বলেছিলেন, এ জগতে সকলেই মৃত। কেবল তাঁদের পার্থিব শরীরে আবদ্ধ। প্রত্যেকের নিজস্ব কর্তব্য রয়েছে। তা পালন করতে হয়। কৃষ্ণ দেখিয়েছিলেন তিনিই ভীষ্ম, তিনিই যুধিষ্ঠীর। তিনিই অর্জুনও। তাই এই যুদ্ধ হচ্ছে কেবল তাঁরই ইচ্ছায়।
কৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন,
যে মে মতমিদং নিত্যমনুতিষ্ঠন্তি মানবাঃ।
শ্রদ্ধাবন্তেহনসূয়ন্তো মুচ্যন্তে তেহপি কর্মভিঃ।।
অর্থাৎ, আমার নির্দেশ অনুসারে যে-সমস্ত মানুষ তাঁদের কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান করেন এবং যাঁরা শ্রদ্ধাবান ও মাৎসর্য রহিত হয়ে এই উপদেশ অনুসরণ করেন, তাঁরাও কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হন। সেই কারণেই এই যুদ্ধও অবশ্যম্ভাবী।
যুদ্ধ কেন অবশ্যম্ভাবী তা বুঝতে গেলে, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে শান্তির দূত হয়ে হস্তিনাপুরে কৌরব শিবিরে যাওয়া কৃষ্ণ ফিরে এসে কী বলেছিলেন সেটা জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। কৃষ্ণ যুধিষ্ঠীরকে বলছেন, “আমি দুর্যোধনকে মিষ্টবাক্যে অনুরোধ করেছি, তার পর সভাস্থ রাজাদের ভর্ৎসনা করেছি। দুর্যোধনকে তৃণতুল্য অবজ্ঞা করে কর্ণ ও শকুনিকে ভয় দেখয়েছি। দ্যুতসভায় ধার্তরাষ্ট্রগণের আচরণের বহু নিন্দা করেছি। অবশেষে দুর্যোধনকে বলেছি, পাণ্ডবগণ অভিমান ত্যাগ করে ধৃতরাষ্ট্র ভীষ্ম ও বিদারের আজ্ঞাধীন হয়ে
থাকবেন। নিজের রাজ্যাংশ শাসনের ভারও তোমার হাতে দেবেন। ধৃতরাষ্ট্র, ভীষ্ম ও বিদুর তোমাকে যে হিতকর উপদেশ দিয়েছেন তা পালন কর। অন্তত পাণ্ডবদের পাঁচটি গ্রাম দাও, কারণ তাঁদের ভরণ করা ধৃতরাষ্ট্রের কর্তব্য। মহারাজ, আপনাদের জন্য আমি কৌরব সভায় সাম, দান ও ভেদ নীতি অনুসারে বহু চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোনও ফল হয়নি। এখন চতুর্থ নীতি দণ্ড ছাড়া আর কোনও উপায় দেখি না। কৌরবপক্ষের রাজারা বোধ হয় এখন বিনাশের নিমিত্ত কুরুক্ষেত্রে যাত্রা করেছেন। দুর্যোধনরা বিনা যুদ্ধে আপনাকে রাজ্য দেবেন না।”
অর্থাৎ নিজের ন্যায্য প্রাপ্য যদি কেউ অন্যায়ভাবে আটকে রাখে এবং কোনও ভাবেই তা ফিরিয়ে দিতে না চায়, তখন যুদ্ধের মাধ্যমে তা অর্জন করাই শ্রেয়। বরং দুর্বল চিত্ত হয়ে তা ছেড়ে দেওয়া পাপ।
বাস্তবের পরিস্থিতিতে নজর দিলেও ধরা পড়ে সেই একই চিত্র। ধরা যাক বর্তমানের ভারত-পাকিস্তান সমীকরণের কথাই। ভারত যুদ্ধবাজ নয়। কোনও ক্ষেত্রে প্রথমে যুদ্ধের কথা ভারতের মুখে শোনাও যায়নি। কিন্তু বারংবার ভারতের ভূখণ্ডে ঢুকে জঙ্গি হামলার মতো জঘন্য ঘটনা কেউ ঘটালে, নিজের দেশবাসীকে এবং সমগ্র ভূমিকে রক্ষা করাটাও কর্তব্য। তাই কাশ্মীর এবং সমগ্র ভারতের শান্তি রক্ষার্থে বারংবার পাকিস্তানকে সাবধান করেছে ভারত। নরমে গরমে বহু চেষ্টা করলেও টনক নড়েনি পাকিস্তানের।
সিন্ধু জল বন্টন চুক্তি স্থগিত করা থেকে শুরু করে আরও নানা কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান যেন দুর্যোধনের মতোই গোঁয়ার। কিছুতেই শোধরাবে না নিজেকে। ভাঁড়ার শূন্য, তবু মিথ্যে আস্ফালন বন্ধ হয় না। তার সঙ্গে জঙ্গিদের প্ররোচনা দেওয়া।
অগত্যা ভারতের কাছেও দণ্ড নীতিকে বেছে নেওয়া ছাড়া আর কোনও পথই খোলা থাকে না। কারণ অধর্মের বিনাশ করে ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মতো পবিত্র কর্তব্য আর কিছুই নেই। সুতরাং কখনও যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে, যুদ্ধ অনিবার্য, তাহলে আত্মসম্মান এবং ধর্ম রক্ষার খাতিরেই যুদ্ধ করবে ভারত!
বুধবার উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট। সবার আগে রেজাল্ট জানতে এখনই নথিভুক্ত করে ফেলুন এই ফর্মে-