মা কথাটি ছোট্ট অতি
কিন্তু জেনো ভাই
ইহার নাম যে মধুর
তিন ভুবনে নাই
সত্যিই তো! ‘মা’ ছোট্ট একটি শব্দ। কিন্তু এর চেয়ে মধুর, এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ শব্দ জগতের আর কোথাও নেই। আমরা সবাই মানুষ, আর জীবনের মতোই মানুষ শব্দটি শুরু হয় ‘মা’ থেকে। এক জন সন্তানের কাছে তার মা ঠিক কতটা, সেটা ভাষায় প্রকাশ করা অসাধ্য। প্রকাণ্ড মরুভূমির মধ্যে ছোট্ট একটা মরুদ্যানের মতো মা আমাদের জীবনে থাকেন। ঘুম ভাঙা ভোরে, শীতের কাঁথায়, দুপুরের আলসেমিতে, সকালের ব্যস্ততায়, রুগ্নতার যত্নে, মন খারাপের কোলবালিশে, সবটা জুড়ে থাকে মা।
যে কোনও মানুষের জীবনেই প্রথম শিক্ষক হলেন মা। ভাষা শিক্ষা আমরা প্রথম মায়ের থেকেই পাই। সেই জন্যই আমরা আমাদের প্রথম উচ্চারিত ভাষাকে বলি মাতৃভাষা। বাড়ির সর্বত্র মায়ের ছত্রছায়ায় বড় হতে হতে এক দিন শিক্ষা অর্জনের জন্য বিদ্যালয়ে যাই। মায়ের আঁচল ছেড়ে শিশুটি প্রথমবারের মতো নিজের পরিচিত চৌহদ্দি পার হয় আর খুঁজে পায় নতুন একটা সম্পর্ককে। যে সম্পর্কের নাম শিক্ষক।
পিতা মাতার পরেই এক জন শিক্ষার্থীর কাছে সব থেকে সম্মানীয় হলেন শিক্ষক। যিনি শিক্ষার প্রদীপ দ্বারা প্রশিক্ষার অন্ধকার দূর করেন আর প্রতিটা শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলেন। এ ভাবেই দীর্ঘ দিন ধরে ছোট ছোট বাচ্চাদের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করে চলেছেন ঋতুপর্ণা চক্রবর্তী।
ঋতুপর্ণা পেশায় সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁর ভাবনা, তাঁর আচরণ, তাঁর বিচক্ষণতায় তিনি স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছেন।
ঋতুপর্ণা বলেন, “শিক্ষিকা হওয়ার দরুন সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীই আমার সন্তানতূল্য। তাই প্রত্যেকের প্রতিই আমি সমান যত্নশীল। প্রত্যেকের দোষ, গুণ, পছন্দ, উৎসাহের প্রতি আমার নজর থাকে।” তবে বাধ্য সন্তানের প্রতি যেমন মায়ের আদর একটু হলেও বেশি থাকে, তেমনই ঋতুপর্ণারও অত্যন্ত পছন্দের ছাত্রী আফরিন। আফরিন সেন্ট ফ্রান্সিস স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। আফরিনের কৌতূহল, তার শান্ত স্বভাব, ধৈর্যশীলতা, শেখার আগ্রহ ঋতুপর্ণাকে যেন রোজ নতুন করে উৎসাহ দেয়। খুব কম সময়ের পরিচয়েই ঋতুপর্ণা ও আফরিনের মধ্যে শিক্ষিকা-ছাত্রীর এক সুন্দর এবং অটুট সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ঋতুপর্ণা বলেন, “আমি দেখতে পাই অদূর ভবিষ্যতে আফরিন এক জন শিক্ষিত, মার্জিত এবং ভাল মানুষ হয়ে উঠবে। শিক্ষিকা হিসাবে এটুকুই আমার গর্বের। ঠিক যেমন এক জন ভাল সন্তান তার মায়ের গর্ব।”
ঋতুপর্ণাকে নিয়ে গর্ববোধ করেন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও। আফরিনের মা জেসমিন দেওয়ান খান, শিক্ষিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তিনি বলেন, “এই বিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন পদ্ধতি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সহযোগিতা এবং পড়াশোনার মান সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ। এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা শুধুই যে পড়াশোনার প্রতি লক্ষ্য রাখেন তা নয়। তার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ এবং মনোযোগ সংস্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।”
এই মাতৃদিবসে সেই সমস্ত শিক্ষিকাদের কুর্ণিশ, যাঁরা মায়ের মতো করে শিক্ষার্থীদের আগলে রাখেন।