মাতৃসম এই দেশের প্রতি শ্রীপর্ণা ও শ্রীময়ীর শ্রদ্ধার্ঘ ‘রংমিলাপ’

TV9 Bangla Digital | Edited By: Soumya Saha

May 13, 2023 | 7:50 PM

‘রংমিলাপ’— এর জন্ম ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। শ্রীময়ী ও শ্রীপর্ণার স্বপ্ন দিয়ে তৈরি হাতে বোনা শাড়ির সংস্থা। তাঁদের ভালবাসা, আবেগ। বাংলার শিল্প, হাতে বোনা অনন্য সৃষ্টির সম্ভার রংমিলাপ

মাতৃসম এই দেশের প্রতি শ্রীপর্ণা ও শ্রীময়ীর শ্রদ্ধার্ঘ ‘রংমিলাপ’
Sriparna Sarkar & Srimoyee Sarkar
Image Credit source: We Make Us

Follow Us

 একটা সময় বাংলার গ্রামে গঞ্জে পা দিলে কানে ভেসে আসত ‘ঠক্ঠক্…’ শব্দ। বাড়ির উঠোনে মেলা থাকত রঙিন সুতো আর কাপড়। তবে সে ছবি এখন আর ধরা পড়ে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মন মজেছে কারখানায় তৈরি কম দামের ফ্যান্সি শাড়িতে। যার জেরে বাজার হারাচ্ছে হাতে বোনা শাড়ি। মুখ থুবড়ে পড়েছে তাঁতশিল্প। বাংলার সেই ছবিটা বদলে দিতেই মাঠে নেমেছেন শ্রীময়ী সরকার এবং শ্রীপর্ণা সরকার। সঙ্গী ‘রংমিলাপ’।

রংমিলাপ’— এর জন্ম ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। শ্রীময়ী ও শ্রীপর্ণার স্বপ্ন দিয়ে তৈরি হাতে বোনা শাড়ির সংস্থা। তাঁদের ভালবাসা, আবেগ। বাংলার শিল্প, হাতে বোনা অনন্য সৃষ্টির সম্ভার রংমিলাপ। শ্রীময়ী ও শ্রীপর্ণার এই স্বপ্নের বাস্তবায়নের রাস্তা ততটাও সহজ ছিল। দু’জনেই ছিলেন পেশায় টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। নামী কর্পোরেট সংস্থার ঠাণ্ডা ঘরে বসে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন তাঁরা। কিন্তু যাঁদের শিকড় জুড়ে রয়েছে মাটির সঙ্গে তাঁরা কি পারেন দশটা-পাঁচটার কাজের সঙ্গে জুড়ে থাকতে?

Sriparna Sarkar & Srimoyee Sarkar

দীর্ঘ দিন ধরেই শ্রীময়ী ও শ্রীপর্ণার ইচ্ছে ছিল গ্রামীণ মানুষদের নিয়ে কাজ করার। তাঁদের তৈরি শিল্পকে নতুনভাবে সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে দেওয়ার। যেমন ভাবনা, তেমন কাজ। শুরু করে ফেললেন ‘রংমিলাপ’। লক্ষ্য ছিল এমন একটি ব্র্যান্ড তৈরির যা হাতে বোনা বা হাতে তৈরি পণ্যগুলির জন্য একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। এই বিষয়ে তাঁদের দু’জনেরই আগে থেকে যে বিস্তর জ্ঞান ছিল তাও কিন্তু নয়। প্রাথমিক স্তরে পথপ্রদর্শক বা পরামর্শদাতা হিসাবেও কাউকে পাননি। কিন্তু লক্ষ্য ছিল অটল— গ্রামীণ কারিগরদের জীবনে পরিবর্তন আনতে হবে। তাঁদের তৈরি পণ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হবে। সেই লক্ষ্য ও হার না মানা জেদই ‘রংমিলাপ’কে অন্য এক স্তরে নিয়ে গিয়েছে। বলা ভাল, মাতৃসম এই দেশের প্রতি ‘রংমিলাপ’ যে তাঁদের শ্রদ্ধার্ঘ।

রংমিলাপ’ শুরুর পরে আর ঘুরে তাকাতে হয়নি শ্রীময়ী ও শ্রীপর্ণাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দু’জনেই বুঝতে পেরেছিলেন দেশের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সম্পর্কে জানাটা কতটা জরুরি। সেই মতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে, সংশ্লিষ্ট এলাকার কারিগরদের সঙ্গে দেখা করে, তাঁদের শিল্প, তাঁদের কাজের প্রকৃতি, সমস্যা ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তর জ্ঞান অর্জন করেন তাঁরা। পাশাপাশি হস্তশিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সামগ্রী, ট্রেন্ড এবং প্রযুক্তিকে আরও ভাল ভাবে বোঝার জন্য তাঁরা গবেষণাও চালাতে থাকেন। সেই গবেষণার ফলশ্রুতি হিসাবে গ্রাহকদের উপহার ‘রংমিলাপ’এর পণ্য।

Rangmilap

প্রথম থেকেই নিজেদের লক্ষ্যের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে জুড়ে ছিলেন শ্রীময়ী ও শ্রীপর্ণা। সেই লক্ষ্যের কিছুটা পূরণ হয়েছে। অনেকটা পথ চলা এখনও বাকি। বর্তমানে সংস্থার সঙ্গে জুড়ে রয়েছেন ১০০ জন তাঁতি সহ ৫০০-রও বেশি শিল্পী। তাঁদের সঙ্গী করেই সাফল্যের খতিয়ান লিখছে ‘রংমিলাপ’। তাঁদের সান্নিধ্যেই গ্রাম বাংলার মাটির সঙ্গে জুড়ে থাকা ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন উদ্ভাবনী পণ্য প্রতিনিয়ত মানুষের সামনে হাজির করতে সক্ষম হচ্ছে এই সংস্থা। প্রথাগত সেই নকশার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে আধুনিকতা ছোঁয়াও। যা ইতিমধ্যেই সাদরে গ্রহণ করেছে সাধারণ মানুষ।

শুধু মাত্র উদ্ভাবনই নয়, ‘রংমিলাপ’ বিশ্বাস করে যে পণ্যের গুণমান যে কোনও গ্রাহককে আপন করে নিতে পারে। তাই সংস্থার প্রতিটি পণ্যের গুণমানের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়। এই প্রসঙ্গে শ্রীময়ী বলেন, “আমরা এখানে এমন পণ্য তৈরির চেষ্টা করি যেগুলি শুধু মাত্র সুন্দর বা মনোগ্রাহীই নয়, সেই সঙ্গে টেকসই ও কার্যকারীও বটে!” শ্রীপর্ণা বলেন, “পণ্যের মানের উৎকৃষ্টতা নিশ্চিত করতে আমরা কাঁচামাল নির্বাচন থেকে শুরু করে পণ্য তৈরির শেষ ধাপ পর্যন্ত বিশদে খেয়াল রাখি।” কর্ণধারদের এমন গুণই ‘রংমিলাপ’কে অন্য ব্র্যান্ডগুলি থেকে আলাদা করে দিয়েছে।

Rangmilap

প্যাকেজিংয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব দেয় এই সংস্থা। এই প্রসঙ্গে সংস্থার শ্রীময়ী ও শ্রীপর্ণা দু’জনেই বলেন, “আমাদের বিক্রি করা প্রতিটি পণ্য নতুন গল্প বলে। এবং আমরা বিশ্বাস করি সেই গল্পগুলি সত্যিই প্রশংসনীয় ও উদযাপনের যোগ্য।”

সময় বদলে যায়। পড়ে থাকে স্মৃতিরা। শ্রীময়ী ও শ্রীপর্ণা দু’জনেরই বিশ্বাস যে এই পদক্ষেপ সবে শুরু। আগামী দিনে এমন নির্ভীক চিন্তাভাবনা সৃজনশীলতা বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যা আগামী দিনে বিশ্বে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

Next Article