
কলকাতা: তিন ম্যাচে দুটো ডাবল হান্ড্রেড। স্কুল ক্রিকেটে রীতিমতো চমকে দিচ্ছে বাটানগরের ১৪ বছরের ছেলে। মেয়র্স কাপে এখনও পর্যন্ত ঝুলিতে ৪৯৮ রান। বিবিআইটি পাবলিক স্কুলের স্বর্ণায়ন পাল। প্রথমবার মেয়র্স কাপ খেলতে এসেই নকআউটে পৌঁছে গিয়েছে স্বর্ণায়নের স্কুল। সিএবি লিগের এই স্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আদতে বাংলার প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের উঠে আসতে সাহায্য করে। আর সেখানেই স্বর্ণায়নের এই ইনিংস রীতিমতো চমকে দিচ্ছে অনেককে।
প্রথম ম্যাচেই বারুইপুর হাইস্কুলের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করে স্বর্ণায়ন। ২০৪ রানে অপরাজিত থাকে। ডন বস্কোর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচে ২৬ রানে আউট হয়। তৃতীয় ম্যাচে ফের ডাবল সেঞ্চুরি। সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের বিরুদ্ধে অপরাজিত ২৬৮ রানের ইনিংস। দলের স্কোর যেখানে ৩৩৭,সেখানে স্বর্ণায়ন একাই ২৬৮!
ছোটবেলা থেকেই জীবনযুদ্ধে বেড়ে ওঠা। লড়াই এখনও চলছে। ক্লাস টুয়ে পড়ার সময় স্বর্ণায়নের বাবা মারা যান। স্বর্ণায়নের মায়ের কথায়, ‘রামমোহন মিশন হাইস্কুলে আগে ও পড়ত। ওর বাবা মারা যাওয়ার পর বাড়ির কাছে বিবিআইটিতে ভর্তি করাই। আমার পক্ষে বাড়ি থেকে অত দূর স্কুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ওর বাবা ফুটবল খেলত। ছেলেরও সেদিকে ন্যাক ছিল। বছর তিনেক আগে বাড়ির পাশে একটা ক্রিকেট অ্যাকাডেমি তৈরি হয়। আমিই একরকম জোর করে ওকে ক্রিকেটে ভর্তি করাই। বাড়ির পাশে অ্যাকাডেমি হওয়ায় আমারও চিন্তা কমবে। ক্রিকেট শেখাতে প্রচুর অর্থ প্রয়োজন। কারণ সরঞ্জামগুলো অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। কোচিং সেন্টারের স্যারেরা ওকে অনেক সাহায্য করেছে।’ ১১ বছর বয়স থেকে ক্রিকেটে হাতে খড়ি। মাত্র তিন বছরেই নিজেকে দারুণ ভাবে মেলে ধরেছে বাটানগরের ছেলে। স্বর্ণায়নের মা বলছেন, ‘আরও পরিশ্রম করতে হবে। এখন তো কিছুই না। তবে ও সারাদিন ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকে। রাতে বাড়ি ফিরেও কোচিং সেন্টারে চলে যায়। বিরাট কোহলির অন্ধ ভক্ত। চাইব, ওর আশা পূরণ হোক।’
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগ স্পিনও করে স্বর্ণায়ন। কোচ অভিষেক নন্দীর কথায়, ‘প্রতিভাবান ছেলে। নিজেকে ধরে রাখতে পারলে উচ্চ পর্যায়ে খেলার ক্ষমতা রাখে। মেয়র্স কাপে ওর স্কুলের হয়ে যে দুটো ডাবল সেঞ্চুরি করেছে, সেই দুটো ইনিংসেই ও স্কোরবোর্ডকে লিড করেছে। রান তাড়া করতে ভালবাসে। চাপ নিয়ে খেলতে পারে। এটাই ওর এক্স ফ্যাক্টর। এত কম বয়সে এরকম পরিণত ব্যাটিং সচরাচর দেখা যায় না। হাতে বড় শটও আছে। বড় মাঠে সিনিয়রদের বিরুদ্ধে লম্বা ছয় মারতেও দেখেছি ওকে। স্কোরবোর্ডকে কিভাবে জেনারেট করতে হয় তা এখন থেকেই জানে। ডাকাবুকো মনোভাব আর পরিণত ব্যাটিং ওর কেরিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’