
মোহালি: কেরিয়ারের শততম টেস্টের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে জামাইকাতে অভিষেক টেস্ট খেলেছিলেন ভিকে। তার পর থেকে ভেঙেছেন ও গড়েছেন একাধিক রেকর্ড। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। রানমেশিন কোহলির ব্যাটে যে সেঞ্চুরির খরা চলছে। ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর ইডেনে শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি এসেছিল কোহলির নামের পাশে। তাই বিরাটভক্তরা তাঁর মাইলস্টোন ম্যাচে সেঞ্চুরির অপেক্ষায় রয়েছে। তবে গত কয়েক মাস ধরে বিরাটকে নিয়ে কম নাটক হয়নি। টি-২০ বিশ্বকাপের পর, ভারতের হয়ে টি-২০ ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন্সি স্বেচ্ছায় ছাড়েন কোহলি। এর পর, তাঁকে একদিনের ক্রিকেটের নেতার দায়িত্ব থেকে মুক্ত করে বিসিসিআই। এর পর তিনি চলতি বছরের প্রোটিয়া সফর শেষ হতেই টেস্ট ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন্সির দায়ভারও ছেড়ে দেন। সব মিলিয়ে বেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন ভিকে। কিন্তু তারপরও রানমেশিন কোহলিকে নিয়ে উন্মাদনায় কোনও খামতি নেই। বিরাটের ১০০তম টেস্টের (Virat Kohli’s 100th Test) আগে তাঁর টেস্ট কেরিয়ার ফিরে দেখলে, মিলবে প্রচুর সাফল্য।
ভারতের হয়ে ওডিআই ক্রিকেটে অভিষেকের প্রায় তিন বছর পরে, ২০১১ সালে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় বিরাট কোহলির। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের টেস্ট সিরিজে ভারতের কিংবদন্তি ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকর বিশ্রামে থাকায় সুযোগ পেয়েছিলেন বিরাট। কিন্তু অভিষেক ম্যাচ স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি ভিকে। জামাইকায় টেস্ট কেরিয়ারের প্রথম ম্যাচে ১০ বল খেলে ৪ রান করে আউট হন তিনি। দিল্লির তরুণ ব্যাটার ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচে একটিও হাফসেঞ্চুরি পাননি। ৫টি ইনিংস মিলিয়ে মোট ৭৬ রান করেছিলেন।
অভিষেক টেস্ট ম্যাচ খেলার পর কেরিয়েরের ১৪তম ইনিংসে সেঞ্চুরির দেখা পান ভিকে। তবে ২০১২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে প্রথম দুটি টেস্টে মোট ৪৩ রান করেছিলেন। কিন্তু অ্যাডিলেডে সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ছয় নম্বরে ব্যাট করে ১১৬ রানের ঝকঝকে ইনিংস উপহার দেন বিরাট।
২০১৩-১৪ মরসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম দুটো টেস্টে হারার পর, ভারত মেলবোর্নে তৃতীয় টেস্ট খেলেছিল। মিচেল জনসন, রায়ান হ্যারিস , জশ হ্যাজেলউড, শেন ওয়াটসন এবং নাথান লিঁয়দের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কোহলি ১৬৯ রান করেন । তিনি অজিঙ্ক রাহানের (১৪৭) সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে ২৬২ রানের একটি মজবুত পার্টনারশিপ গড়েন এবং ভারত সেই ম্যাচে ড্র করে। এই টেস্টের পরই ধোনি টেস্ট ফর্ম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা করেছিলেন।
২০১৬ সালের ২১ জুলাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে কেরিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট কোহলি। ২৩৮ বল খেলে ২০০ রান করেছিলেন ভারত অধিনায়ক বিরাট। বিরাটের দ্বিশতরানের ইনিংস সাজানো ছিল ২৪টি চার দিয়ে।
২০১৬ সালে ইংল্যান্ড পাঁচ ম্যাচের টেস্টের সিরিজের জন্য ভারতে এসেছিল। ম্যাচটি মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং সেই ম্যাচে কোহলি ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। ডানহাতি এই ব্যাটার জেমস অ্যান্ডারসন, ক্রিস ওকস, জেক বল, বেন স্টোকস, মইন আলিদের নাকানিচোবানি খাইয়েছিলেন। সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ড ৪০০ রান করেছিল। কিন্তু কোহলির ২৩৫ রানে ভর করে ভারত ৬৩১ রান করেছিল এবং ইনিংস ব্যবধানে ম্যাচ জিতেছিল টিম ইন্ডিয়া।
দক্ষিণ আফ্রিকার ২০১৯ সালে ভারত সফরে এসেছিল। প্রোটিয়াদের ওই সফর বিরাট কোহলির জন্য একটা গুরুত্বপূর্ণ সফর ছিল। ওই সিরিজটিতে কোহলি নিজের সর্বোচ্চ টেস্ট রান করেছিলেন। ভারত প্রথমে ব্যাট করে ৬০১ রান তুলেছিল। কোহলি ৩৩৬ বলে ২৫৪ রানের নট আউট ইনিংস খেলেছিলেন। কোহলির ডাবল সেঞ্চুরি সাজানো ছিল ৩৩টি চার ও ২টি ছয় দিয়ে। সেই ম্যাচে ভারত এক ইনিংস ও ১৩৭ রানে জিতেছিল।
২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম গোলাপি বল টেস্টে শেষ বার সেঞ্চুরি করেছিলেন বিরাট কোহলি। ১৯৪ বল থেলে ১৩৬ রান করেছিলেন ভিকে। বিরাটের শেষ সেঞ্চুরি সাজানো ছিল ১৮টি চার দিয়ে। ওই টেস্টে কোহলির ভারত এক ইনিংস ও ৪৬ রানে জিতেছিল।
এখনও পর্যন্ত ৯৯টি টেস্ট ম্যাচে কোহলি ৫০.৩৯ গড়ে মোট ৭৯৬২ রান করেছেন। তিনি ৬৮টি টেস্টে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং তার মধ্যে ৪০টি ম্যাচে জিতেছেন।