In Depth: লাল ও কালো, দেখতে তো এক! পার্থক্যই বা কী? টস জিতলে…

Oct 07, 2024 | 5:37 PM

Types of pitches: কোন বোলার এবং ব্যাটার কী ভাবে এর সুবিধা নেবেন, সেটা বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি ধৈর্যের উপরও নির্ভর করে। ক্রিকেটের নানা বিষয় নিয়েই যখন আলোচনা হয়, তা হলে পিচই বা বাদ যায় কেন! কারণ, পিচের উপরও নির্ভর করে ম্যাচের ফল এবং কম্বিনেশন।

In Depth: লাল ও কালো, দেখতে তো এক! পার্থক্যই বা কী? টস জিতলে...
Image Credit source: Robert Cianflone/Alex Davidson-ICC/ICC via Getty Images

Follow Us

পিচ, ‘পিচ’। উচ্চারণ একই। অর্থ দুটো। ক্রিকেটে পিচ বলতে মাঠকেও বোঝায়, আবার বাইশগজও। ঠিক যেমন উইকেট মানে স্টাম্প বোঝায় আবার বাইশগজ বা পিচও! ব্যাটিংয়ে নানা শট, বোলিংয়ের বৈচিত্র নিয়ে অনেকই তো আলোচনা হয়। পিচেরও তো নানা রকম ভেদ রয়েছে। প্রত্যেকটির বিশেষ-সুবিধা অসুবিধাও। সাদা-বলের ক্রিকেট বা সীমিত ওভারের ম্যাচে এর খুব একটা প্রভাব পড়ে না। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে এর প্রভাব অনেক অনেক বেশি। প্রতি সেশনেই, এমনকি প্রতিটি ডেলিভারিতেই খেল দেখাতে পারে পিচ। কোন বোলার এবং ব্যাটার কী ভাবে এর সুবিধা নেবেন, সেটা বুদ্ধিমত্তার পাশাপাশি ধৈর্যের উপরও নির্ভর করে। ক্রিকেটের নানা বিষয় নিয়েই যখন আলোচনা হয়, তা হলে পিচই বা বাদ যায় কেন! কারণ, পিচের উপরও নির্ভর করে ম্যাচের ফল এবং কম্বিনেশন।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখুন আর টেলিভিশনে। দূর থেকে বোঝা খুবই কঠিন কোনটা লাল মাটির পিচ, আর কোনটা কালো মাটি। অনেক সময় পিচে ঘাস থাকলে দূর থেকে শুধুমাত্র সবুজের আভাই দেখা যায়। ক্যামেরা জুম করে দেখানো হলেও (যেটা টসের সময় করা হয় মূলত), সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। কারণ, কোন মাটির পিচ, তা উপরের স্তর দেখে আন্দাজ করা যায় মাত্র। কিউরেটর কিংবা গ্রাউন্ডসম্যান যাঁরা পিচ তৈরির সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাঁদের পক্ষেই এক নজরে দেখে বোঝা সম্ভব। মাটি নিয়ে কেন এত আলোচনা? একটু সহজ করে ভাবা যাক।

লাল মাটি বা কালো মাটি পেলেই পিচ তৈরি হয়ে যাবে তা একেবারেই নয়। সেই মাটির পরীক্ষা হয়, তার জল ধারণ ক্ষমতা, বাঁধন, অনেক কিছুই নির্ভর করে। আর পিচের চরিত্র নির্ভর করে সেই মাটির সঙ্গে কত পরিমাণ বালি মেশানো হচ্ছে, ভারী রোলার না হালকা রোলার চালানো হচ্ছে, কতটা জল দেওয়া হচ্ছে, তার উপরও। তবে যাই হোক না কেন, পিচও মানুষের মনের মতো। পুরোপুরি এর প্রকৃতি বোঝা কঠিন। আর সে কারণেই তো দুই ক্যাপ্টেনকে টসের সময় নার্ভাস দেখায়! ম্যাচের আগের দিন, পিচে হাত দিয়ে দেখেন, বোঝার চেষ্টা করেন, সেই অনুযায়ী সেরা কম্বিনেশন বেছে নেন। পিচের ‘মন’ যদি সত্যিই পুরোপুরি বোঝা যেত, তা হলে টস জিতলেই ম্যাচ জয়ও নিশ্চিত হয়ে যেত। তা হয় কি? একে বারেই নয়। কিছুটা আন্দাজ করা যায় মাত্র। বাকিটা নির্ভর করে পারফরম্যান্সের উপরই। পিচকে কতটা কাজে লাগাতে পারছেন প্লেয়াররা, কতটা ধৈর্য দেখাচ্ছেন তার উপর।

পিচের চরিত্র নির্ভর করে সেখানকার ভৌগলিক অবস্থান, আবহাওয়ার উপরও। এ বার আসা যাক, লাল মাটির পিচের উপর। এর বিশেষত্ব কী? পিচ তৈরিতে মূলত দুই ধরনের মাটিই ব্যবহার হয়। মাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ, এর উপর পিচের মেয়াদও নির্ভর করবে। তবে পিচের রং কালো কিংবা লাল হবেই, এর নিশ্চয়তা নেই। শুরুতেই যেটা বলা হয়েছে, উপরের স্তর দেখে বোঝা কঠিন। কালো মাটির পিচ প্রকৃতির সঙ্গে বেশি ‘আপন’ হয়ে থাকে। বিশেষ করে দীর্ঘ ফরম্যাটের ম্যাচের জন্য বেশি কার্যকরী। তুলনামূলক ভাবে লাল-মাটির পিচের মেয়াদ কম। লাল মাটির তুলনায় কালো মাটির পিচে বাউন্স বেশি হয়। তবে সেই বাউন্স দীর্ঘমেয়াদী হয় না। পিচ দ্রুত ভাঙতে শুরু করে। যা স্পিনারদের বেশি সহায়তা করে। বা বলা ভালো স্লো বোলারদের।

ভারত-বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজের কথাই ধরা যাক। চেন্নাইতে লাল মাটির পিচ ব্যবহার হয়েছিল। শুরুর দিকে পেসাররা দারুণ সহায়তা পেয়েছেন। তবে চড়া রোদে যখনই পিচ শুকোতে শুরু করেছিল, আর্দ্রতা কমেছে, পেসারদের জন্য সেই অর্থে সুবিধা ছিল না। বরং শট খেলতে সুবিধা হয়েছে ব্যাটারদের। নিজে থেকে ভুল না করলে আউট হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এসব ক্ষেত্রে পিচ নয়, ব্যক্তিগত দক্ষতাই বেশি নির্ভর করে। ম্যাচ যদিও সাড়ে তিন দিনেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। পাঁচ দিন অবধি ম্যাচ গড়ালে পিচ আরও ড্রাই হত। তার উপর ব্যাটার-বোলারদের স্পাইকের কারণে ব্যাটিং ক্রিজে আরও বেশি ক্ষত তৈরি হত। সেখান থেকেই টার্না আদায় করে নিতে পারতেন স্পিনাররা।

কানপুরে কালো-মাটির পিচ। যদিও বৃষ্টি অস্বস্তি হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রথম দিন থেকেই। ফলে পিচে আর্দ্রতার পরিমাণও বেশি ছিল। যতটা বাউন্স আশা করা হয়েছিল, ততটা পাওয়া যায়নি। প্রথম দিন মাত্র ৩৫ ওভার খেলা হয়েছিল। প্রথম দিনই টার্ন পেয়েছিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তবে প্রাথমিক ভাবে ব্যাটারদের জন্য সুবিধা ছিল বলাই যায়। আবহাওয়া ঠিক থাকলে ব্যাটাররা প্রথম দুদিন আরও সুবিধা পেতেন। কড়া রোদ থাকলে, ম্যাচের দ্বিতীয় দিনের লাস্ট সেশন থেকেই হয়তো স্পিনাররা সুবিধা পেতে পারতেন। যে বিষয়টা হয়েছে চতুর্থ ও পঞ্চম দিন। ব্যাটারদের সুবিধা হয়েছে শট খেলতে। কারণ, তখনও পিচ সেই অর্থে ভাঙেনি। মাঝে মাঝে বল নীচু হয়েছে। কালো মাটির বাউন্স যে দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তার অন্যতম উদাহরণ।

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কানপুরে হয়তো আবহাওয়ার পূর্বাভাসের কারণেই তৃতীয় স্পিনার খেলায়নি ভারত। নয়তো কুলদীপ যাদবকে খেলানোর প্রবল সম্ভাবনা ছিল। তেমনই কানপুরে কালো মাটির পিচে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তই হয়তো সঠিক বলা যেত। শুরুর ঘণ্টাখানেক কাটিয়ে দিতে পারলে ব্যাটারদের জন্য আদর্শ মঞ্চ। এ ছাড়া আবহাওয়া ঠিক থাকলে, চতুর্থ ইনিংসে স্পিনারদের সামলানো কঠিন। আবহাওয়া যদিও সঙ্গ দেয়নি। অনেকে হয়তো বলতেই পারেন, তা হলে বাংলাদেশ ব্যাটাররা কেন সুবিধা পেল না? ভারতের ব্যাটিংয়ের সময় কি বাড়তি সুবিধা ছিল? একেবারেই না। বাংলাদেশ ব্যাটারদের শট সিলেকশন এবং ভারতীয় বোলারদের ধৈর্য ধরে লাইন-লেন্থে ধারাবাহিকতা বজায় রাখাতেই সাফল্য এসেছে। বরং পিচ, ব্যাটারদেরই সহায়তা করেছে। না হলে ৮-এর উপর রান রেট রেখে লাল-বলের ক্রিকেটে ইনিংস ডিক্লেয়ার করা যায় না। বাংলাদেশ উইকেট নেওয়ার চেষ্টার চেয়ে বাউন্ডারিতে ৬-৭ জন ফিল্ডার রেখে রান আটকানোয় নজর দিয়েছে। তাতে আরও ঝুঁকি কমেছে ভারতীয় ব্যাটারদের।

পিচের বাউন্স, চরিত্র যে শুধু লাল-কালো মাটির উপরই নির্ভর করে তা নয়। পিচ নিয়ে আরও অনেক রহস্যই রয়েছে। তবে একেবারে সব আলোচনা করলে এলোমেলো হয়ে যেতে পারে। কিছুটা না হয় তোলা থাক! তবে এটুকু বলাই যায়, পিচের মন বোঝা সত্যিই কঠিন।

Next Article