BEN vs SAU: ৩৩ বছরের অপেক্ষা শেষ সাড়ে তিন দিনেই, বাংলার হারের সাতকাহন…
Bengal vs Saurashtra, Ranji Trophy Final: ফাইনাল ম্য়াচ আরও নির্দিষ্ট করে বললে, পাঁচ দিনের ম্য়াচে খেলার মতো মানসিকতাই খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁর মতো 'তারকা' ক্রিকেটারের কাছে। ওপেনিং নিয়ে দায়ী করা যেতে পারে টিম ম্য়ানেজমেন্টকেও। ফাইনাল অবধি পৌঁছলেও একটা সেট টিম তৈরি করে উঠতে পারেনি বাংলা।

দীপঙ্কর ঘোষাল
রঞ্জি ট্রফি এবং অপেক্ষা। ৩৩ বছর পর ঘরের মাঠে ফাইনাল। বাংলার কাছে সুযোগ ছিল স্বাদ ও সাধ পুরনের। ৩৩ বছরের অপেক্ষার সলিল সমাধি সাড়ে তিন দিনেই। বা বলা যেতে পারে আরও আগেই। মাঠে নামার আগে থেকে বাংলা শিবিরের আত্মবিশ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। একের পর এক আত্মবিশ্বাসী মন্তব্য়। চ্য়াম্পিয়ন হওয়ার পর থেকে এই নিয়ে পঞ্চম ফাইনাল খেলল বাংলা। গত চার বারের মতো এ বারও রানার্স। তিন বছর আগে সৌরাষ্ট্রর বিরুদ্ধেই শেষ ফাইনাল খেলেছিল। রাজকোটে অ্য়াওয়ে ম্য়াচে রানার্স হয়েছিল বাংলা। এ বার ঘরের মাঠে। ব্য়ক্তিগত ভাবেও হতাশা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির। এই নিয়ে চতুর্থ ফাইনাল খেললেন মনোজও। আগের মতো এ বারও রানার্স। জয়ের শিরোপা ছোঁয়া হল না। শুধু কি মাঠের খেলাতেই হার? বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
বাংলার হারের কারণ খুঁজতে বসলে অনেক কিছুই নজরে পড়বে। প্রথম প্রশ্নই ঘিরে ধরবে, ফাইনাল খেলার মতো দল ছিল বাংলার? বোধ হয় না। যে টিমে একজন ভরসাযোগ্য় ওপেনার নেই, তাদের নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। ফাইনালের পথে ওপেনিংয়ে নানা জুটি ট্রাই করা হয়েছে। একের পর এক জুটি ব্য়র্থ। সুদীপ ঘরামি, অনুষ্টুপ মজুমদার এবং মিডল অর্ডার ধারাবাহিকতা না দেখালে এই অবধিও পৌঁছনো সম্ভব হত না। অভিমন্য়ু ঈশ্বরণের নামের পাশে অনেক রান থাকলেও শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে তাঁর পারফরম্যান্স হতাশ করার মতোই। ফাইনালেও দু-ইনিংসেই ব্য়র্থ। দীর্ঘ সময় ধরেই জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়ছেন অভিমন্য়ু। নিয়মিত খেলছেন ভারত ‘এ’ দলের হয়ে। ফাইনাল ম্য়াচ আরও নির্দিষ্ট করে বললে, পাঁচ দিনের ম্য়াচে খেলার মতো মানসিকতাই খুঁজে পাওয়া যায়নি তাঁর মতো ‘তারকা’ ক্রিকেটারের কাছে। ওপেনিং নিয়ে দায়ী করা যেতে পারে টিম ম্য়ানেজমেন্টকেও। ফাইনাল অবধি পৌঁছলেও একটা সেট টিম তৈরি করে উঠতে পারেনি বাংলা। প্রতি ম্য়াচেই কিছু না কিছু বদল করতে হয়েছে একাদশে। ফাইনালেও জোড়া বদল। গ্রিন টপ নেওয়ায় স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার প্রদীপ্ত প্রামাণিকের জায়গায় সুযোগ দেওয়া হয় পেস বোলিং অলরাউন্ডার আকাশ ঘটককে। যদিও ব্য়াটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে তাঁর অবদান খুঁজে পাওয়া গেল না।
ফাইনালে আরও একটি পরিবর্তন হয়েছিল। ওপেনিং জুটিতে নতুন কিছু ট্রাই করতে চেয়েছিল টিম ম্য়ানেজমেন্ট। তিন বছর আগে সৌরাষ্ট্রর মাঠে ফাইনালে অভিষেক হয়েছিল সুদীপ ঘরামির। এই ম্যাচে অভিষেক হল সুমন্ত গুপ্তর। ক্লাব ক্রিকেটে নিয়মিত রান করেন। ক্লাব ক্রিকেট আর রঞ্জি ট্রফি ফাইনাল যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য়, টিম ম্যানেজমেন্ট না বুঝলেও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন সুমন্ত। ক্লাব কেরিয়ারে ব্য়াট করেন মিডল অর্ডারে। অথচ রঞ্জি ফাইনালে তাঁকে দিয়েই ওপেন করানো হয়। দু-ইনিংস মিলিয়ে তাঁর অবদান ২ রান। মেকশিফ্ট ওপেনার হিসেবে এ মরসুমে ট্রাই করা হয়েছে করণ লালকে। ফাইনালেও মন্দের ভালো তাঁকেই হয়তো খেলানো যেত। রান পেলেও অন্তত ক্রিজে অনেকটা সময় কাটানোর কাজটা করে এসেছেন করণ। ফাইনালে সেটা করতে পারলেও বাংলা লাভবান হত।
ধৈর্য। পাঁচ দিনের ম্য়াচে সবচেয়ে জরুরি ক্রিজ আগলে পড়ে থাকা। ক্রিজে থাকলে রান আসবেই। কিন্তু বাংলা ক্রিকেটারদের মধ্য়ে সেই ধৈর্যটাই খুঁজে পাওয়া গেল না। প্রথম ইনিংসে একটাই উল্লেখযোগ্য় পার্টনারশিপ। শাহবাজ আহমেদ এবং অভিষেক পোড়েলের ১০১ রানের পার্টনারশিপ না হলে হয়তো প্রথম সেশনেই গুটিয়ে যেত বাংলার ইনিংস। প্রথম দিন পিচের আর্দ্রতা কাজে লাগিয়ে সাফল্য় পেয়েছেন সৌরাষ্ট্র বোলাররা। একই পিচে বোলিংয়ের সুযোগ পেয়েও প্রথম দিন দাগ কাটতে ব্যর্থ বাংলার বোলিং। লাগাতার স্টাম্পের বাইরে বোলিং করে সৌরাষ্ট্রকে ঝোড়ো ব্য়াটিংয়ের সুযোগ করে দেন। সৌরাষ্ট্রর পেসার চেতন সাকারিয়া নাইট ওয়াচম্য়ান হিসেবে ব্য়াট করতে এসে ৪৫টা বল খেলার ধৈর্য দেখাতে পারলেও বাংলা ব্য়াটারদের মধ্য়ে সেটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ইনিংসে আর যাই হোক পিচে জুজু ছিল এটা বলার সুযোগ পাবে না বাংলা। কিন্তু ব্য়াটিং অ্য়াপ্রোচ, ক্রিজে পড়ে থাকার মানসিকতাই খুঁজে পাওয়া গেল না।
শেষ দিনও বাংলার ক্ষীণ আশা ছিল। নির্ভর করছিল অনেক যদি-কিন্তুর উপর। প্রথম সেশনে যদি মনোজ তিওয়ারি-শাহবাজ আহমেদ জুটি টিকে যেত…। সেটা অবশ্য হয়নি। দিনের প্রথম উইকেট রান আউটে। তিন রান নিতে কল করেছিলেন অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি। শাহবাজ সেই অনুযায়ীই দৌঁড়তে থাকেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মনোজ মানা করেন। মনোজের কল হলেও শাহবাজ যেহেতু বল দেখছিলেন, মানা করতে পারতেন, উইকেটে আরও কিছুটা সময় থাকা যেত। দ্বিতীয় ইনিংসে উল্লেখযোগ্য ইনিংস বলতে অনুষ্টুপ মজুমদার, মনোজ তিওয়ারির। তাতে দলের বিশেষ লাভ হয়নি। দলগত খেলায় দলগত পারফরম্য়ান্সও প্রয়োজন। সৌরাষ্ট্র যেটা সব বিভাগেই করে দেখিয়েছে।
মাঠের খেলার দিক থেকেই শুধু নয়, মাঠের বাইরে যেন অনেক আগেই হেরে গিয়েছিল বাংলা। ফাইনালের ৪৮ ঘণ্টা আগে অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি আত্মবিশ্বাসী গলায় বলেছিলেন, একপেশে ফাইনাল হবে, বাংলা দাপট দেখাবে। তিনি মুখে বললেও দলের অন্দরে কি আদৌ সেই আত্মবিশ্বাস ছিল? আগে থেকেই এমন মন্তব্য় প্রতিপক্ষর তাগিদও বাড়িয়ে দেয়। ম্য়াচের আগের দিন সৌরাষ্ট্র অধিনায়ক জয়দেব উনাদকাট এই মন্তব্য়ের প্রেক্ষিতে জানিয়েছিলেন, মনোজ তো বলেই দিয়েছে, তিনিই আর নতুন করে কী বলবেন! জাতীয় দল থেকে রিলিজ নিয়ে এসেছিলেন, ট্রফি নিয়ে ফিরতে চান এমন মন্তব্য় করেছিলেন জয়দেব। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সেটা করে দেখিয়েছেন জয়দেব উনাদকাট। বাংলা শিবির ম্যাচের আগে হোক বা দিনের খেলার শেষে, প্রতিনিয়ত বলে গিয়েছে, ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। পারফরম্য়ান্সে তার ছাপ দেখা যায়নি।
