অভিষেক সেনগুপ্ত
চেন্নাই সুপার কিংস ১৯২-৩ (২০ ওভারে)
কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৬৫-৯ (২০ ওভারে)
মওকা… মওকা বিজ্ঞাপনটা মনে আছে? মনে না থাকলেও সমস্যা নেই। আপাতত ক’টা দিন এই বিজ্ঞাপন ঘিরে কাটবে ক্রিকেট দুনিয়ার। ২৪ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবচেয়ে উত্তেজক ম্যাচ। মওকা পে চওকা কে মারবে, তার অপেক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে ওয়াঘার এপার-ওপারে। ক্রিকেট বিশ্বেরও।
‘মওকা পে চওকা’ শব্দবন্ধনী কুড়ি-বিশের ক্রিকেটের জন্যই তো জন্ম নিয়েছে। ‘জো জিতা ওয়হি সিকন্দর’ও। কোনও কোনও টিমের কাছে সেটাই আবার ‘বাজিগর’। কলকাতার মতো! ২০১২ সালের আইপিএল ফাইনালটার মতো। হারতে হারতে হঠাত্ করে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গিয়েছিল কেকেআর। সে বারও উল্টো দিকে ছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির চেন্নাই। কী আশ্চর্য সমাপতন, এ বারও সেই সিএসকে। এ বারও টার্গেট ১৯০-র উপর। সে বার ১৯৩ তুলে জিতেছিল কেকেআর। এ বারও টার্গেট তাই। শুধু ন’বছর আগের অ্যাকশন রিপ্লে দেখা গেল না। শহর জুড়ে যখন বিসর্জনের ঢাক বাজছে, তখন শাহরুখ খানের কলকাতারও তৃতীয় বার আইপিএল জেতার স্বপ্ন ভেসে উঠেও ডুবে গেল!
Fantastic FOUR! ? ? ? ?
The @msdhoni-led @ChennaiIPL beat #KKR by 27 runs in the #VIVOIPL #Final & clinch their 4⃣th IPL title. ? ? #CSKvKKR
A round of applause for @KKRiders, who are the runners-up of the season. ? ?
Scorecard ? https://t.co/JOEYUSwYSt pic.twitter.com/PQGanwi3H3
— IndianPremierLeague (@IPL) October 15, 2021
অতীত আর বর্তমানের অনেক ফারাক। গৌতম গম্ভীরের ওই টিমে জ্যাক কালিস, মনবিন্দর বিসলার মতো ম্যাচ উইনার ছিল। যাঁরা একাই পাল্টে দিয়েছিলেন ম্যাচের রং। ইওন মর্গ্যানের এই টিমে ভেঙ্কটেশ আইয়ার, শুভমন গিল ছাড়া আর কেউ নেই। ভেঙ্কটেশ ৩২ বলে ৫০ করে গেলেন। শুভমন ৪৩ বলে ৫১। বাকিটা সিএসকে বোলারদের দাপট। ৯১-১ থেকে ১২৩-৭ পিছনে শার্দূল ঠাকুর, রবীন্দ্র জাডেজাদের দুরন্ত বোলিং। ৩টে উইকেট শার্দূলের, ২টো জাডেজার। এরপর আর ম্যাচের থাকেটা কী! মারকাটারি ফর্মে আন্দ্রে রাসেল, কায়রন পোলার্ড, ক্রিস গেইলকে নামিয়ে দিলেও হাতে পেন্সিলই থাকত!
The Chennai boys ???? #EverywhereWeGo#SuperCham21ons#CSKvKKR #WhistlePodu #Yellove?? pic.twitter.com/Cq0rtgUjAv
— Chennai Super Kings – Mask P?du Whistle P?du! (@ChennaiIPL) October 15, 2021
ম্যাচের সময় দুবাইয়ের গ্যালারিতে একটা পোস্টার বারবার চোখে পড়ছিল— এক হি দিল হ্যায়… কিতনে বার জিতোগে মাহি? হক কথা! ২৪-এর মাহি, ৩৪-এর মাহি আর ৪০-র ধোনি— কোনও ফারাক নেই। ফিটনেস কমেছে? কে বলবে? ভেঙ্কটেশের ক্যাচটা ফেলেছিলেন ঠিকই, কিন্তু সাকিব আল হাসানের ক্যাচটা লেগস্টাম্পে যে ভাবে ছোঁ মেরে তুললেন, পুরনো এমএসডির কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। ধোনির এই ক্রিকেট জীবন যেন আস্ত রূপকথা। ট্রফি দিয়ে ঘেরা। কেরিয়ারের প্রান্তিক স্টেশনে এসেও সেই ট্রফির আলোতেই থেকে গেলেন ধোনি। তিনবার আইপিএল জিতিয়েছিলেন, এ বার চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন করলেন চেন্নাইকে।
ধোনি এবং চেন্নাই এমন সফল কেন? ক্রিকেট একটা সিস্টেম। যে যত বেশি ফলো করে, সে তত বেশি সাফল্য পায়। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স যেমন একটা ধারা অনুসরণ করে পাঁচবার ট্রফি ফলিয়েছে আইপিএলে, চেন্নাইও তেমন। একই টিম ধরে রাখা। প্লেয়ারদের উপর আস্থা রাখা। সাফল্য আসুক কিংবা নাই আসুক, তরুণদের সামনে এগিয়ে দেওয়া। ছোট ছোট এই জিনিসগুলোই মুম্বই কিংবা চেন্নাইয়ের মতো অপ্রতিরোধ্য টিমের জন্ম দিয়েছে। ১৪ বছর আগে ধোনি যা শুরু করেছিলেন, ১৪ বছর পরও সেই নিজস্বতা অটুট রেখেছে সিএসকে। ধোনির চল্লিশ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সিএসকের চালশে ধরেনি। এই ফাইনাল ক্যাপ্টেন কুলের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আগামী আইপিএলে কী হবে, জানেন না। হয়তো এটাই শেষ ম্যাচ ক্রিকেটার ধোনির। আর সেই ম্যাচ আরও একটা ট্রফি দিয়ে মুড়ে রাখলেন মাহি।
ক্যাপ্টেন ধোনির জন্যই যেন ফাইনালটা খেলতে নেমেছিল চেন্নাই। শুরু থেকে তুমুল ঝড়ে বিপর্যস্ত করে দিল ইওন মর্গ্যানের কেকেআরকে। ঋতুরাজ গায়কোয়াড় ২৭ বলে ৩২ দিয়ে শুরু করলেন। বাকিটা টেনে নিয়ে গেলেন ফাফ দু প্লেসি। ৫৯ বলে ৮৬ রানের ইনিংসটা অনেক দিন মনে রাখবে হলুদ-ভক্তরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মাঝের ওভারগুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়। ওই সময় দু-একটা ঝোড়ো ইনিংস খেলার রং-রূপ বদলে দেয়। রবিন উত্থাপ্পা আর মইন আলি সেই কাজটাই যত্ন করে সারলেন। রবিন ১৫ বলে ৩১ রানের ইনিংস খেলে গেলেন। আর মইন ২০ বলে নট আউট ৩৭। বিপক্ষ ১৯২-৩ তুললে যে কোনও প্রতিপক্ষ পাহাড়প্রমাণ চাপ নিয়েই রান তাড়া করতে নামে। নাইটরাই বা ব্যতিক্রম হবেন কেন?
চেন্নাইয়ের বিপুল রানের টার্গেট কিন্তু বেগুনি টিমের বোলারদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে। সুনীল ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। বাকি আর কেউই সে ভাবে ছাপ রাখতে পারেননি। ইওন মর্গ্যান একে রানের মধ্যে নেই। তার উপর বিশ্বকাপজয়ী ক্যাপ্টেন ঠিকঠাক বোলিং চেঞ্জটাও করতে পারেননি। ভেঙ্কটেশ আইয়ার তোপের মুখে এসেও ১ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়েছিলেন। তাঁকে কেন আর ব্যবহার করলেন না, কে জানে! ফিল্ডিং মিসের খেসারত দিতে হয়েছে। সেই সঙ্গে কিপার দীনেশ কার্তিক যদি দু প্লেসির ক্যাচটা একেবারে শুরুতে না ফেলতেন, তা হলে অন্যরকম হতে পারত ম্যাচটা।
আইপিএলের শুরুটা ভীষণ খারাপ ছিল কেকেআরের। লিগের প্রথম সাত ম্যাচে মাত্র তিনটে জিতেছিল নাইটরা। আইপিএলের দ্বিতীয় পর্ব থেকেই সব হিসেব উল্টে দিয়ে দুরন্ত প্রত্যাবর্তন হয় শাহরুখ খানের টিমের। শেষ সাত ম্যাচে ৫টা জিতে প্লে-অফের রাস্তা খুঁজে নিয়েছিল বেগুনি জার্সি। মুম্বই, দিল্লিকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে পড়া কেকেআর যে ট্রফির স্বপ্নপূরণ করার জন্য মাঠে নামবে, ধোনির টিমও ভালো করে জানত। গৌতম গম্ভীরের ক্যাপ্টেন্সিতে দু’বার আইপিএল জিতেছিল কেকেআর। সাত বছরের খরা কাটিয়ে সাফল্যের আকাশ মুঠোয় নেওয়ার তাগিদ দেখিয়েছিল ইওন মর্গ্যানের টিম। শুধু করল… লড়ল… জিতল রে… বলা হল না!
ট্রফি যে জেতে, তাকেই মনে রাখে খেলার পৃথিবী। রানার্স আর কবে কল্কে পেয়েছে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর: চেন্নাই সুপার কিংস ১৯২-৩ (দু প্লেসি ৮৬, মইন নট আউট ৩৭, ঋতুরাজ ৩২, রবিন ৩১, নারিন ২-২৬, শিবম ১-৩২)। কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৬৫-৯ (শুভমন ৫১, ভেঙ্কটেশ ৫০, শার্দূল ৩-৩৮, হ্যাজেলউড ২-২৯, জাডেজা ২-৩৭)।