চোট? যন্ত্রণা? দেশের আগে তো কিছুই নয়!
অশ্বিন-হনুমারা যখন লড়াই করছেন, তখন চোট ভুলে ব্যাট করতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাদেজা? ক্যামেরা ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ঘুরতেই যে ছবি ধরা পড়ল, তাও তো উঠে আসতে পারে ক্রিকেট লোকগাঁথায়।
সিডনিঃ যন্ত্রণা। ছটফট করছেন। মাঠে ডেকে আনা হল ফিজিও-কে। মাঠে শুয়ে প্যাড বাঁধা ডান পা-টা যখন ফিজিও স্ট্রেচ করাচ্ছেন,তখন যন্ত্রণার তীব্রতাটা স্পষ্ট হনুমা বিহারির (Hanuma Vihari) মুখে। কিন্তু সেই যন্ত্রণা কি ম্যাচে আচমকা আইসিইউ-তে ঢুকে যাওয়া ভারতের অবস্থার থেকে মারাত্মক? না। হনুমার কাছে তো একেবারেই না।
শুধু কি হনুমা?সোমবার সিডনিতে হার বাঁচাতে হনুমা-অশ্বিনের(Ravichandran Ashwin) ঐতিহাসিক লড়াইয়ের নেপথ্যে রয়েছে যন্ত্রণাকে ছাপিয়ে এক বীরগাঁথা। রান নিতে গিয়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়া হনুমার সঙ্গে সমানে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন রবিচন্দ্রণ অশ্বিন। কামিন্সদের একের পর এক বাউন্সার যখন সামলাচ্ছেন, তখন কেউ কি একবারের জন্যও টের পেয়েছিলেন যন্ত্রণায় কতটা ছটফট করছিলেন অশ্বিন? রবিবার রাতে পিঠে অসহ্য যন্ত্রণার জন্য ঘুমোতে পারেননি অশ্বিন। শুধু তাই নয়, সোমবার সকালে যখন ঘুম ভাঙে, তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারছিলেন না। এমনকি নিচু হয়ে বাঁধতে কষ্ট হচ্ছিল জুতো ফিতে! এই খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় স্বয়ং ফাঁস করলেন তাঁর স্ত্রী প্রীতি অশ্বিন।
লড়াইটা এমনই ছিল দুই যোদ্ধার। সিডনির পঞ্চম দিনের শেষে অশ্বিন-হনুমা যখন প্যাভিলিয়নে ফিরছেন, তখন তাঁদের সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে ২০০১ সালের ইডেনে দ্রাবিড়-লক্ষ্ণণের সেই ঐতিহাসিক লড়াইয়ের। চোট ভুলে সিডনিতে মহাকাব্য রচনা যদি করেন অশ্বিন-হনুমা, তবে তাঁর গোড়াপত্তনটা করে গিয়েছিল ঋষভ পন্থের (Risabh Pant) ৯৭ রান। তিনিও তো প্রথম ইনিংসে চোট পেয়েছিলেন। উইকেেটকিপিং করতে পারেননি। কিন্তুঋষভের দুর্ধর্ষ লড়াইয়ের কাছে অনেকটাই মলিন চোটের যন্ত্রণা।
কামিন্স-হ্যাজেলউডদের একের পর এক বিষাক্ত স্পেল। ওত পেতে বসে থাকা অজি ফিল্ডাররা। একটা ক্যাচ জমা পড়লেই ঘুরে যেতে পারে ম্যাচ। অশ্বিন-হনুমারা যখন লড়াই করছেন, তখন চোট ভুলে ব্যাট করতে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাদেজা(Ravindra Jadeja)? ক্যামেরা ভারতীয় ড্রেসিংরুমে ঘুরতেই যে ছবি ধরা পড়ল, তাও তো উঠে আসতে পারে ক্রিকেট লোকগাঁথায়।
A bit of teamwork, Saini peeling the banana for Jadeja ? #AUSvIND pic.twitter.com/O0KYKZT1a9
— 7Cricket (@7Cricket) January 11, 2021
বাঁহাতের বুড়ো আঙুলের হাড় সরে গিয়েছে। সিরিজ থেকেই ছিটকে গিয়েছেন। কিন্তু দল যখন চাপে, তখন সিডনি টেস্টে ব্যাট করার জন্য মরিয়া জাদেজা আগেভাগেই বাঁহাতেই পড়ে রেখেছেন গ্লাভস!আর এক হাতে কলার খোসা ছাড়িয়ে খেতে পারছেন না। সতীর্থ নভদীপ সাইনি তাঁকে খাইয়ে দিচ্ছেন কলা। এদৃশ্য তো শুধু অদম্য জেদের নয়। টিম ইন্ডিয়ার ড্রেসিংরুমের এক সুখী পরিবারের কোলাজও বটে।
চোটের যন্ত্রণা ভুলে দেশের জন্য শেষ রক্তবিন্দু অবধি লড়াই করার সাম্প্রতীক অতীতে যে ছবিটা আমাদের চোখে ভাসে, সেটা অনিল কুম্বলের। ২০০২ সালে অ্যান্টিগাতে ভাঙা চোয়ালে ব্যান্ডেজ বেঁধে প্রাণপণ লড়াই তো ক্রিকেট ইতিহাসে লড়াইয়ের এক জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ। অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদেরই মত, আজকের সিডনিতে একঝাঁক চোট পাওয়া ভারতীয় ক্রিকেটারের লড়াইও তো অনেকটা তেমনি।