
শ্রীলঙ্কা- ১৭৫/৯
( আসালাঙ্কা ৬৫, ফার্নান্দো ৫০, ভুবনেশ্বর ৩-৫৪, চাহ্বাল ৩-৫০)
ভারত – ২৭৭/৭
( চাহ্বার ৬৯*, সূর্যকুমার যাদব ৫৩, হাসারাঙ্গা ৩-৩৭)
কলম্বোঃ ৫০তম ওভারের প্রথম বলটাকে যখন বাউন্ডারির ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলেন দীপক চহ্বার(DEEPAK CHAAHAR), তখন যেন অবিশ্বাসের ঘোর থেকে বিশ্বাসের মাটিতে পা দিতে চাইছেন এদেশের অসংখ্য ক্রিকেটভক্ত। সাম্প্রতিককালে এত রূদ্ধশ্বাস ম্যাচ কবে দেখেছেন তাঁরা? আইপিএলের কল্যানে টানটান ম্যাচ দেখা যায় অবশ্য। কিন্তু নিশ্চিত হারের মুখ থেকে অবিশ্বাস্য জয় (WIN)তো অনেকদিন দেখেনি ভারত(INDIA)। সম্প্রতি ভারত একদিনের ম্যাচ যতগুলো জিতেছে, ততবারই নিজেদের দাপট বজায় রেখেই জিতেছে। আর এদিন ‘ব্যাটসম্যান’ (BATSMAN) দীপক চাহ্বার যে অতিমানবীয় ইনিংস খেলে গেলেন, তা অনেকদিন মনে রাখবে ভারতের ক্রিকেট(CRICKET) ইতিহাস।
এদিনও টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় শ্রীলঙ্কা। দলে একাধিক পরিবর্তন করে ভারতের বিরুদ্ধে ডু অর ডাই ম্যাচে নেমেছিল সনকার দল। অন্যদিকে এদিনই সিরিজ পকেটে পুরে ফেলতে মরিয়া ছিল শিখররা। দল অপরিবর্তিত রেখে সিরিজ জয় নিশ্চিতের লড়াইয়ে নেমেছিলেন হার্দিকরা।এদিন ভারতের ৩ বোলার ছাড়া বাকিদের ওপরে যথেষ্ট চেপে বসেছিল লঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপ। ৫০ ফার্নান্দোর,৬৫ রান আসালাঙ্কার। শেষদিকে করুণারত্নের ব্যাটিং সৌজন্যে ৯ উইকেটে ২৭৫ রান করে শ্রীলঙ্কা। ৩টি করে উইকেট চহ্বাল ও ভুবনেশ্বরের। ২টি উইকেট দীপক চহ্বারের।
জবাবে ব্যাট করতে নেমেই ভারতীয় টপঅর্ডারের ভরাডুবি। ২৭৫ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ১১৬ রানেই ৫ উইকেট পড়ে যায় ভারতের! এরপর ভারতের ইনিংসের হাল ধরার চেষ্টা করেন। ঝোড়ো ৫৩ রান করে যখন সূর্য প্যাভিলিয়নের রাস্তায়, তখনও ভারতের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১৬ রান। হাতে তখন মাত্র ৪ উইকেট। এরপর ক্রুণাল পান্ডিয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে ভারতের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন দীপক চহ্বার।
প্রথমে সিঙ্গলস নিয়ে স্কোরবোর্ড চালু রাখা। আর সুযোগ পেলেই বলকে বাউন্ডারির রাস্তা দেখানো। তাতে সপ্তম উইকেটে ৩৩ রান যোগও করেছিল ক্রুনাল-চাহ্বার জুটি। তবে ক্রুনাল আউট হতেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ধাওয়ানের টিম ইন্ডিয়ার। আর তো কোনও ব্যাটসম্যান নেই! এরপর ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে জুটি বাঁধেন চাহ্বার।
ইংল্যান্ডে প্র্যাকটিস ম্যাচের মাঝে চাহ্বারদের লড়াইয়ে মনোনিবেশ রোহিত-হনুমাদের
ধীরে ধীরে ভারতের স্কোর ২০০র গন্ডি টপকে যখন ২২৫য়ে ঢুকল, তখন ভারেতর ক্রিকেটপ্রেমীরা টাইম মেশিনে চেপে পিছিয়ে গেল ৪ বছর আগে, এই শ্রীলঙ্কাতেই। ২০১৭ সালের ২৪ শে আগস্ট পাল্লেকাল স্টেডিয়ামে অষ্টম উইকেটে ভুবিকে নিয়ে জুটি বেঁধেই তো ভারতকে জয় এনে দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। অষ্টম উইকেটে জুটিতে ১০০ রান করেছিলেন ধোনি ও ভুবনেশ্বর। আর এবার ভুবনেশ্বরের পার্টনার বদলে দীপক চাহ্বার। কাকতালীয়, ধোনি ও চাহ্বার দুজনেই আবার চেন্নাই সুপারকিংসের সতীর্থ।
ভুবনেশ্বরকে কম স্ট্রাইক দিয়ে একা লড়াই চালিয়ে গেলেন দীপক চাহ্বার। একেবারে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের মত চাহ্বারের ইনিংসে সঙ্গত দিয়ে গেলেন ভুবনেশ্বর। ২৮ বলে ১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন ভুবনেশ্বর। আর রাজস্থানের ক্রিকেটার দীপক চাহ্বারের ব্যাট থেকে এল ৮২ বলে ৬৯ রান। এই রান যে অনেক সেঞ্চুরির থেকেও অনেক দামী।
নিশ্চিত হারের মুখ থেকে ভারতকে সিরিজ জেতানোর অদম্য লড়াইয়ের নিশান এই ইনিংস। ভারতের রিজার্ভ বেঞ্চের টেলএন্ডাররাও ব্যাট হাতে এত শক্তিশালী, তা জানান দেওয়া এই ইনিংস। সর্বোপরি রণতুঙ্গাকে জোরালো জবাব দেওয়া একটা ইনিংস। কলম্বো যেন দেখল অতিমানবীয় চাহ্বারকে। যিনি চাপের মুখে হাসতে হাসতে ব্যাটে জিতে আনতে পারেন ম্যাচ।