কলকাতা: ২৪.৭৫ কোটি খরচ করে মিচেল স্টার্ককে নেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? এ নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই কলকাতা নাইট রাইডার্স প্রেমীদের। দু’বারের চ্যাম্পিয়নদের হাল গত ন’টা আইপিএলে মোটেও ভালো নয়। ২০২১ সালে রানার্স হওয়া ছাড়া সেই অর্থে কিছুই করতে পারেনি বেগুনি জার্সি। যে কারণে মেন্টর করে টিমে ফেরানো হয়েছে গৌতম গম্ভীরকে। আগামী আইপিএলে নতুন করে দল খাড়া করার চেষ্টা করলেন তিনি। দুবাইয়ে মিনি আইপিএলে (IPL) সেই মতোই ফাঁকফোকর ভরাট করার চেষ্টা করলেন গম্ভীর (Gautam Gambhir)। নিলামের পর কেমন হল কেকেআরের (KKR) দল?
প্যাট কামিন্স, লকি ফার্গুসন, টিম সাউদি সহ মোট ১২জনকে রিলিজ করে দেওয়া হয়েছে কেকেআর থেকে। রিলিজ তালিকায় সাকিব আল হাসান, লিটন দাসরা ছিলেন। টিমে ভারসাম্য রাখার পাশাপাশি তারুণ্যের খোঁজেও নেমেছিল কেকেআর। যাঁদের আগামী দিনে তৈরি করে নেওয়া যেতে পারে। বোলিং বড় চিন্তা হয়ে উঠতে পারে নাইটদের। সেই ভাবনা থেকেই স্টার্কের জন্য লড়াই চালিয়ে গিয়েছিল কেকেআর। কামিন্সকে তা হলে নেওয়া হল না কেন, এই প্রশ্ন উঠতেই পারে। কামিন্স গতবার আইপিএলে খেলতে চাননি। দেশের হয়ে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ খেলবেন বলে। কিন্তু তার আগের বার অর্থাৎ ২০২২ সালের আইপিএল মরসুমে কেকেআরেই খেলেছিলেন। ১৪ বলে দ্রুততম হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন। কিন্তু বল হাতে কিছুই করতে পারেননি। শুধু তাই নয়, মাত্র পাঁচটা ম্যাচ খেলেছিলেন বেগুনি জার্সিতে। যে কারণে কামিন্সে আস্থা রাখেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। স্টার্ক ৯ বছর আইপিএলে না খেললেও শেষবার কেকেআর জার্সিতেই খেলবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু চোটের কারণে পাওয়া যায়নি। অতীতে টিমকে সার্ভিস দিতে না পারার দায় নিশ্চয়ই এ বার পূরণ করে দেবেন স্টার্ক।
২০১৪ সালে কেকেআরের চ্যাম্পিয়ন টিমের সদস্য মনীশ পাণ্ডেকে ৫০ লক্ষ টাকায় আবার ফেরাল কেকেআর। কিন্তু সেই ধার তাঁর আর নেই। গত মরসুমে দিল্লিতে খেলেছেন। কিন্তু সে ভাবে ছাপ রাখতে পারেননি। ৩৪ বছরের ক্রিকেটারের ফর্ম নিয়েও প্রশ্ন থাকে। ১০টা ম্যাচ খেলে ১৬০ রান করেছেন। একটাই হাফসেঞ্চুরি। গম্ভীর যদিও চেনেন মনীশকে। সেই কারণে হয়তো তাঁকে ফেরালেন। যদি পারফর্ম করতে পারেন, তা হলে টিম লাভবান হবে। শেষ বেলায় ২ কোটি টাকায় কিনল আফগানিস্তানের মুজিবউর রহমানকে। ২০১৮ সালে পঞ্জাব কিংসের হয়ে আইপিএলে অভিষেক হয়। ২০২১ সালে খেলেছেন হায়দরাবাদে। বল হাতে যেমন টিমকে টানতে পারেন, ব্যাট হাতেও দিতে পারেন ভরসা।
স্টার্কের পাশাপাশি চেতন সাকারিয়াকে বেস প্রাইস ৫০ লক্ষেই তুলেছে কেকেআর। রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে উত্থান সাকারিয়ার। এক সময় তরুণ বোলার হিসেবে বেশ ছাপও রেখেছিলেন বাঁ হাতি পেসার। কিন্তু সম্প্রতি সাকারিয়ার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিলামে অন্য কোনও টিম সাকারিয়াকে নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ৫০ লক্ষে তুলে নেয় কেকেআর। সাকারিয়াকে নেওয়া বুমেরাং হতে পারে কি? এই প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে কিন্তু। নিলাম থেকেই শ্রীকর ভরতকে তুলল কেকেআর। প্রথম উইকেট কিপার হিসেবে রহমৎতুল্লাহ গুরবাজকে রিটেন করা হয়েছিল। ব্যাকআপ কিপার দরকার ছিল টিমের। সেই ভাবনা থেকেই ভরত এলেন।
নাইটরা আরও ভালো ঘর গোছাতে পারত। অস্ট্রেলিয়ার স্পেন্সর জনসনকে চেষ্টা করেও তুলতে পারেনি। দিল্লি, আরসিবি আর গুজরাট টাইটান্সের সঙ্গে লড়াই করলেও নুয়ান তুষারাকে তুলতে পারল না গম্ভীরের টিম। এই নুয়ানের অ্যাকশন অনেকটা মালিঙ্গার মতো। শেষ পর্যন্ত মুম্বই তুলে নেয় নুয়ানকে। এই ব্যর্থতার মধ্যে দুই তরুণ কিন্তু স্বপ্ন দেখাতে পারেন।
১৮ বছরের অঙ্গকৃশ রঘুবংশী ভবিষ্যৎ হতে পারেন কেকেআরের। দিল্লির ছেলে ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলেছেন ২০২২ সালে। আইপিএলে এই প্রথম নাম লেখালেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ইতিমধ্যেই ব্যাটিং ও বোলিংয়ে খানিকটা হলেও ছাপ রেখেছেন। অক্টোবরে খেলেছেন মুস্তাক আলি ট্রফি। ব্যাট হাতে সর্বোচ্চ নট আউট ৩২। বাঁ হাতি স্পিনারকে অবশ্য বল করতে দেখা যায়নি। বিজয় হাজারে ট্রফিতেও খেলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ৫টা ম্যাচ খেলে সর্বোচ্চ ৫৭ করেছেন। রঘুবংশীর মতো ২০ লক্ষ টাকায় নেওয়া হয়েছে রমনদীপ সিংকেও। অলরাউন্ডার রমনদীপ ২০২২ সালে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে ৫টা ম্যাচ খেলেছেন। ব্যাটে ৪৫ করার পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। ইংল্যান্ডের পেসার গাস অ্যাটকিনসনকে নিয়ে শেষ বেলায় বোলিংয়ে কিছুটা ধার বাড়াল কেকেআর।
বিহারের সাকিব হুসেনকে বেস প্রাইস ২০ লাখে নিল কেকেআর। ১৯ বছরের পেস বোলার তীব্র গতিতে বল করতে পারেন। মাপা লাইন-লেংথের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশ পরিচিত। এই সাকিব যদি বেগুনি জার্সিতে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন, কেকেআর থেকে আর এক তরুণ ক্রিকেটারের জন্ম হবে।
কলকাতা নাইট রাইডার্স রিটেইন করেছে যাঁদের- আন্দ্রে রাসেল, অনুকূল রায়, হর্ষিত রানা, জেসন রয়, নীতীশ রানা, রহমানুল্লা গুরবাজ, রিঙ্কু সিং, শ্রেয়স আইয়ার, সুনীল নারিন, সূয়াশ শর্মা, বৈভব অরোরা, বরুণ চক্রবর্তী, ভেঙ্কটেশ আইয়ার।
নিলামে যে নতুন প্লেয়ারদের নিল – মিচেল স্টার্ক, মুজিব উর রহমান, শেরফান রাদারফোর্ড, গাস অ্যাটকিনসন, মণীশ পান্ডে, কোনা শ্রীকার ভরত, চেতন সাকারিয়া, অঙ্গকৃশ রঘুবংশী, রমনদীপ সিং, সাকিব হুসেন।