মুম্বই: স্কুলে পড়ার সময় জ্যাভলিন থ্রোয়ার ছিলেন। আর সেই কারণে বোলিংয়ের সময় নন-ল্যান্ডিং ফুট ঘুরে যেত। হেমু অধিকারীর মতো কোচও চেষ্টা করে ওই অভ্যেস পাল্টাতে পারেননি। ওই অ্যাকশন নিয়েই একসময় মাতিয়ে দিয়েছিলেন এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ছেলে। মাছ ধরা পাগলের মতো নেশা। অসুস্থ কুকুরদের দেখভাল করেন। প্রকৃতি এত ভালোবাসেন যে বান্দিপুরে আস্ত একখানা ফার্ম খুলে ফেলেছেন। গলফের নেশা এখনও তাড়িয়ে বেড়ায়। এই যদি মধ্য ষাটের এক ভদ্রলোকের পরিচয় হয়, তাহলে বোধহয় চিনতে অসুবিধে হবে। যদি বলা হয় তিনিই ১৯৮৩ সালে ভারতকে প্রথম বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন, অসংখ্য মুখ ফুটে উঠবে। কপিলের সঙ্গে আর যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তিনি নিশ্চিতভাবেই রজার বিনি (Roger Binny)। মঙ্গলবার দুপুর থেকে যাঁর নতুন পরিচয় বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট (New BCCI President)।
পুরো নাম রজার মাইকেল হামফ্রে বিনি। ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার, তিরাশির ক্রিকেট বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। ছেলে ক্রিকেটার এবং বউমা জনপ্রিয় অ্যাঙ্কার। ক্রিকেট প্রশাসনেও নতুন নন। আজ বিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভার পর আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে দায়িত্ব বুঝে নিলেন বিনি। তাঁর অতীত সম্পর্কে সাধারণ মানুষের খুব একটা ওয়াকিবহাল নন। TV9 Bangla-র এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট পদে বসা রজার বিনির পরিচয়।
ভারতের প্রথম অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার রজার বিনির শিকড় লুকিয়ে রয়েছে স্কটল্যান্ডে। চার পুরুষ আগে রজারের পূর্বসূরিরা স্কটল্যান্ড থেকে এ দেশে চলে আসে। তবে রজার পুরোপুরিভাবে ভারতীয়। ১৯৫৫ সালের ১৯ জুলাই বেঙ্গালুরুকে জন্ম। একটা সময় পর্যন্ত বিনি পরিবারে স্কটিশ প্রভাব ছিল। লম্বা, ফর্সা চেহারার বিনি সালেম জেলা বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। কারণ রেল গার্ডের চাকরি করা বাবা টেরেন্স বিনির বদলি চাকরি। স্কুলে পড়ার সময়ই পরিচয় বন্ধুর বোন সিন্থিয়ার সঙ্গে। স্কুলজীবন থেকে শুরু হওয়া রজার-সিন্থিয়া প্রেম পরিণতি পায় বড় হয়ে। দম্পতি তিন সন্তান। এক ছেলে স্টুয়ার্ট ও দুই মেয়ে লঁরা এবং লিসা। বেঙ্গালুরুর অ্যাংলো ইন্ডিয়ান কমিউনিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রজার। একটা সময় কর্নাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিরাশির বিশ্বকাপজয়ী দলের এই অলরাউন্ডার কোচিংয়েও সাফল্য পেয়েছেন। ২০০০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের হেড কোচ ছিলেন রজার। একটা সময় বোর্ডের নির্বাচক কমিটিতেও ছিলেন। তিরাশির বিশ্বকাপে সর্বাধিক (১৮) উইকেটশিকারী। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৮৩ রানের ইনিংস খেলে ভারতকে হার থেকে বাঁচিয়েছিলেন।
২০০০ সালের সাফল্যের পর সিনিয়র ক্রিকেট দলের কোচ হতে চেয়েছিলেন বিনি। বিসিসিআই যদিও জন রাইটের হাতে দায়িত্ব তুলে দেয়। দেশের প্রথম বিদেশি কোচ। নতুন হেড কোচের নাম ঘোষিত হওয়ার পর টুঁ শব্দটিও করেননি বিনি। বরং এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সঙ্গে কাজ করা শুরু করেন। একদিন হঠাৎ করেই বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট হিসেবে রজার বিনির নাম উঠতে শুরু করল। বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ই দ্বিতীয়বার মেয়াদ পূর্ণ করবেন, এমনই আন্দাজ ছিল। জাতীয় দলের হয়ে খেলা দেশের প্রথম অ্যাংলো ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার আসরে আর্বিভূত হলেন অনেকটা ধুমকেতুর মতো। প্রচার বিমুখ মানুষটির আবির্ভাবে ঘুরল খেলা। দেখতে দেখতে ভারতীয় বোর্ডের সদস্যদের সমর্থনে বিসিসিআইয়ের মসনদে বসে পড়লেন রজার মাইকেল হামফ্রে বিনি।
বান্দিপুরের ফার্মে সারি সারি আমের গাছ। টিম্বার, সিলভার ওকের মতো দামি গাছের সম্ভার। বুনো হাতি আর চিতাবাঘের প্রায়শই আনাগোনা লেগে থাকে। বেঙ্গালুরু থেকে গাড়ি চালিয়ে গেলে পাঁচ ঘণ্টা। শহরে দমবন্ধ হয়ে এলে কয়েকদিনের মুক্ত বাতাস নিতে চলে যান। মাছ ধরেন, পোষ্যদের সঙ্গে সময় কাটান। মধ্য ষাটের মানুষটির পারফেক্ট অবসরজীবনে লাগাম টেনে দিল এক বড় দায়িত্ব। ভারতীয় ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব। সেই ভূমিকায় কতটা সাফল্য পান, সেদিকেই থাকবে নজর।