ICC Women’s U19 T20 World Cup: মেয়েকে ক্রিকেটার বানাতে গিয়ে ডাইনি অপবাদ জুটল মায়ের
Archana Devi: ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে স্বামীকে। এক ছেলের মৃত্যু সাপের কামড়ে। সব হারিয়ে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছিলেন অন্ধকারে। সেখান থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজছিলেন যিনি, তাঁকে দেওয়া হয় ডাইনি অপবাদ! কেন? এর উত্তরের সন্ধানে গেলে মিলবে অসম্ভব এক যন্ত্রণার কাহিনি।
উন্নাও: ক্যান্সার কেড়ে নিয়েছে স্বামীকে। এক ছেলের মৃত্যু সাপের কামড়ে। সব হারিয়ে ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছিলেন অন্ধকারে। সেখান থেকে মুক্তির রাস্তা খুঁজছিলেন যিনি, তাঁকে দেওয়া হয় ডাইনি অপবাদ! কেন? এর উত্তরের সন্ধানে গেলে মিলবে অসম্ভব এক যন্ত্রণার কাহিনি। পাওয়া যাবে, এক মা ও মেয়ের উত্থানের গল্প। যে মেয়েকে রবি-রাতের পর সারা ভারত চিনে ফেলেছে। অর্চনাকে ক্রিকেট খেলার অনুমতি দেওয়ার জন্য গ্রামবাসীরা সাবিত্রী দেবীকে শুনিয়েছিলেন কুকথা। সে সব লহমায় অতীত হয়ে গিয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের টি-২০ বিশ্বকাপে (ICC Women’s U19 T20 World Cup) ভারত (India) চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর, সাবিত্রী দেবীর জীবনের ছবিটা পালটে গিয়েছে। রবিবার প্রোটিয়াদের দেশে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতের মেয়েরা। তার পর থেকে শুভেচ্ছাবার্তা পাচ্ছেন একসময় গ্রামে ডাইনি অপবাদে একঘরে হয়ে যাওয়া সাবিত্রী দেবীও। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের মেগা ফাইনালে সাবিত্রী দেবীর মেয়ে অর্চনা দেবী (Archana Devi) ইংল্যান্ডের ইনিংস শুরু হতেই গ্রেস স্ক্রাইভেনস এবং নিয়াম হল্যান্ডের উইকেট নিয়ে বড় ধাক্কা দেন। টিম ইন্ডিয়ার কাপজয়ের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন অর্চনা। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla-র এই প্রতিবেদনে।
ক্রিকেট-পাগল মেয়ে অর্চনাকে কস্তুরবা গান্ধী আবাসিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছিলেন সাবিত্রী দেবী। সেটি উত্তরপ্রদেশের উন্নাও, রাতাই পুরওয়া থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার দূরে গঞ্জ মোরাদাবাদের একটি মেয়েদের বোর্ডিং স্কুল ছিল। ওই সময়ে অর্চনার গ্রামে রটেছিল যে, মেয়েকে কিছু সন্দেহজনক ডিলারের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন সাবিত্রী দেবী। অতীতে যাঁরা এই অপবাদ দিত সাবিত্রী দেবীকে, তাঁরাই আজ ভিড় জমিয়েছেন অর্চনার বাড়িতে।
সম্প্রতি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্চনা দেবীর মা সাবিত্রী দেবী বলেন, “লোকেরা আমার মুখের উপর বলত, আমি আমার মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছি। আমি ওকে ভুল পথে নিয়ে গিয়েছি।” অনূর্ধ্ব-১৯ মেয়েদের বিশ্বকাপের ফাইনালে অর্চনা ভালো খেলার পর, এখন সাবিত্রী দেবীর বাড়ির ছবিটা বদলে গিয়েছে। একটা সময় কটু কথা বলতেন, যাঁরা তাঁরাই বাড়ি বয়ে এসে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন সাবিত্রী দেবীকে। তিনি বলেন, “এখন আমার বাড়ি অতিথিতে ভর্তি। ওদের বসতে দেওয়ার জায়গাটুকুও নেই। প্রতিবেশীরা, যারা কখনও আমার বাড়িতে এক গ্লাসও জল খায়নি, তারাই এখন আমাকে সাহায্য করছে।”
২০০৮ সালে অর্চনার বাবা শিবরাম যাদব ক্যান্সারে মারা যান। তাঁর চিকিৎসা করাতে সাবিত্রী দেবী অনেক ঋণ হয়ে যায়। অভাবের সংসারে তিন বাচ্চার মুখে খাবার তুলে দেওয়াটা কঠিন হয়ে গিয়েছিল সাবিত্রী দেবীর জন্য। এরপর ২০১৭ সালে সাবিত্রী দেবীর ছোট ছেলে বুধিমান সাপের কামড়ে মারা যায়। সেই সময় প্রতিবেশী থেকে শুরু করে আত্মীয়স্বজনরাও তাঁকে ডাইনি অপবাদ দিয়েছিল।
অর্চনার বড় দাদা রোহিত কুমার বলেন, “ওরা তখন আমার মাকে ডাকত ডাইনি বলে। ওরা সবাই বলত, প্রথমে নিজের স্বামীকে মেরেছে। তার পর ছেলেকেও খেয়েছে। যদি মাকে কেউ রাস্তায় দেখত, তা হলে রাস্তা বদলে চলে যেত। আমাদের বাড়িকে ডাইনির বাড়িও বলা হত।”
অর্চনার দাদা রোহিত আরও জানান, ছেলেবেলায় দাদা বুধিমানের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতেন অর্চনা। একদিন তাঁরা ক্রিকেট খেলার সময় বল চলে যায় এক নির্মীয়মাণ বাড়ির দিকে। তার আগেও বহুবার সেখানে বল গিয়েছিল। প্রতিবারই বুধিমান ব্যাট দিয়ে বল বের করতেন। কিন্তু ২০১৭ সালে সে বার বুধিমান হাত দিয়ে বল বের করতে যায়, আর কোবরার কামড় খায় হাতে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান অর্চনার দাদা। মারা যাওয়ার সময়, অর্চনার দাদা শেষ কথা যেটি বলেন সেটি হল, “অর্চনাকে ক্রিকেট খেলাবে।” এরপর অর্চনা মনোযোগ সহকারে ক্রিকেট খেলা শুরু করে। অনেক ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যান। আর বর্তমানে তিনি ভারতের হয়ে বিশ্বকাপ জয়ে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন।