দীপঙ্কর ঘোষাল
হাউ ইজ দ্যাট…! সারাদিনে কতবার শুনতে হয়, তার ইয়ত্তা নেই। ঘরোয়া ক্রিকেট হোক কিংবা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, আম্পায়ারদের কেরিয়ারে প্রতিটা ডেলিভারিই নতুন পরীক্ষা। কিছু ক্ষেত্রে ‘থ্যাঙ্কলেস’ জবও। ভালো সিদ্ধান্ত দিলে আলোচনা খুব কমই হবে। একটা ভুল হলে, সামলোচনা চলবে দীর্ঘদিন। যাঁরা তুলনামূলক ভালো সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা দেখাতে পারেন, টিকে যান। যেমনটা নীতিন মেনন। আইসিসি এলিট প্য়ানেলের কনিষ্ঠতম আম্পায়ার নীতিন। ছিলেন ক্রিকেটার। প্রতিটি ক্রিকেটারের জীবনে ২২ বছর বয়সটা সেরা সময়। সে সময় ক্রিকেট ছেড়ে পুরোপুরি আম্পায়ারিংয়ে পা রেখেছিলেন নীতিন। তাঁর ক্ষেত্রে এমনটা অপ্রত্যাশিত ছিল না। নীতিন মেনন এবং তাঁর ‘আম্পায়ার’ পরিবার নিয়ে কিছু অজানা তথ্য। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
ইন্দোরে মেনন পরিবারকে আম্পায়ার পরিবারও বলা যায়। নীতিনের বাবা নরেন্দ্র ৫০-এর বেশি প্রথম শ্রেনির ম্যাচ খেলেছেন। দীর্ঘ সময় করেছেন আম্পায়ারিং। ঘরোয়া ক্রিকেটে প্রচুর ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অবশ্য় খুব বেশি সুযোগ পাননি। তবে তাঁর অধরা স্বপ্নপূরণ করে চলেছেন নীতিন। নরেন্দ্র মেননের দুই ছেলেই আম্পায়ার। বড় ছেলে নীতিন মেনন অতি পরিচিত নাম। আইসিসি-র বর্তমান এলিট প্য়ানেলে ভারতের একমাত্র আম্পায়ার নীতিন। ছোট ভাই নিখিল মেনন ঘরোয়া ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেন। নীতিনের উঠে আসা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে সাফল্য় ঈর্ষণীয়। বর্ডার-গাভাসকর ট্রফির চার ম্যাচেই দায়িত্ব পালন করবেন নীতিন। কী ভাবে আম্পায়ার হলেন নীতিন?
নরেন্দ্র মেনন বিস্তারিত বললেন টিভি নাইন বাংলাকে, ‘নীতিন ছোট থেকেই খুব মেধাবী ছাত্র। ক্রিকেটও খেলত। অনূর্ধ্ব ১৬, অনূর্ধ্ব ১৯, অনূর্ধ্ব ২২, অনূর্ধ্ব ২৫ এমনকি মধ্যপ্রদেশের হয়ে দুটি ওয়ান ডে ম্যাচও (বিজয় হাজারে ট্রফি) খেলেছে। সে সময় আম্পায়ারিং নিয়ে ভাবত, তা নয়। আমিও কিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছি। সে সময় এত ম্যাচ সম্প্রচার হত হত না। ফলে ও আমাকে ঘরোয়া ক্রিকেটেই আম্পায়ারিং করতে দেখেছে। ২০০৬ সালে ওর পারফরম্যান্স খুব খারাপ হচ্ছিল। ব্যাটারদের কেরিয়ারে এমনটা অস্বাভাবিক নয়। মানসিকভাবে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। সে সময়ই ওর মনে হয়, আম্পায়ারিং করলে কেমন হয়!’
নীতিন খেলছেন, বাবা আম্পায়ার, এমন পরিস্থিতিও এসেছে। তবে ক্রিকেটার থেকে এ ভাবে আম্পায়ার হওয়ার শুরুতে চমকে গিয়েছিলেন নীতিনের বাবা। আরও বললেন, ‘ক্রিকেটে যখন খারাপ সময়, হঠাৎই আমাকে জিজ্ঞেস করল, পাপা আম্পায়ারিংয়ের পরীক্ষা দেব? সেই বয়সটা ক্রিকেটারদের জীবনে সেরা সময়। একটু অবাক হয়েছিলাম। ক্রিকেট ছেড়ে আম্পায়ারিং করতে চাইছে। অনেক ভেবে তারপর বলি, তুমি চাইলে সেটাই কর। ২০০৭ এ বিসিসিআইয়ের পরীক্ষা হল, সেটাতেও ও পাশ করে। এরপর আর ঘুরে তাকায়নি। ও এটা ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিল, এত কম বয়সে ক্রিকেট ছেড়েছে যখন, আম্পায়ারিংটা সিরিয়াসলি করতে হবে। কয়েক বছরের মধ্যেই এত বড় জায়গায়।’
এখনকার সময়ে আম্পায়ারিং অনেক বেশি কঠিন বলেই মনে করেন নরেন্দ্র। তাই ইংল্য়ান্ডের ধারাভাষ্যকাররা নীতিনের প্রশংসা করায় বেশি গর্ব হয়েছিল। তার কারণও জানালেন, ‘ইংরেজরা আমাদের প্রশংসা করবে এটা অপ্রত্যাশিত। সে কারণেই ওদের মুখে নীতিনের প্রশংসা শুনে বাড়তি আনন্দ হয়।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘এত টেকনোলজি, ক্যামেরা। এখন আম্পায়ারিং অনেক কঠিন। সামান্য ভুলও ধরা পড়ে যাবে। বিশ্বে এমন কোনও আম্পায়ার নেই, যে ভুল করে না। কিন্তু কেউ ইচ্ছাকৃত ভুল করে না। বিরাট কোহলিকে নিয়েও তো প্রচণ্ড সমালোচনা চলছিল। এখন সবার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। কিছুদিন খারাপ যাওয়া মানেই তাঁকে নিয়ে সমালোচনা করতে হবে বা সে খারাপ ক্রিকেটার হয়ে গেল তা নয়।’
নীতিনের ছেলে বেলা কেমন ছিল? তাঁর বাবার কথায়, ‘ক্রিকেট আর পড়াশোনার বাইরে কোনও জীবন ছিল না। হাতে গোনা কয়েকজন বন্ধু। এখনও ইন্দোর এলে শুধুমাত্র পরিবারের সঙ্গেই কাটায়। বন্ধুদের সঙ্গে যা কিছু কথা, ফোনেই। ঘরকুনোও বলা যায়। এখনও ম্য়াচ শেষে বাকিদের সঙ্গে ডিনার সারে না। ও নিজের রুমেই খাবার অর্ডার করে। এমবিএ করলেও চাকরির পথে হাঁটেনি। ছুটিই তো পাবে না। আর নীতিন এখন যে স্তরে পৌঁছে গিয়েছে, আলাদা করে চাকরি করার প্রয়োজন পড়ে না। আমার ছোট ছেলে নিখিল, সেও এমবিএ করেছে, ব্য়াঙ্কে চাকরিও করত, এত ছুটি কে দেবে! তাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছে।’
মেনন পরিবারের সোনার ফসল নীতিন। ভারতেরও তো। না হলে আইসিসির আম্পায়ারদের এলিট প্যানেলে বিরাট কোহলি হয়ে ওঠেন নীতিন!