কলকাতা: সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম সকলের হয় না। চরম দারিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করেও অনেকে উঠে আসে। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জেদ থাকলে সব প্রতিবন্ধকতাই তুচ্ছ মনে হয়। কথায় বলে ‘সবুরে মেওয়া ফলে’, ঠিক সেটাই হয়েছে আলিগড়ের এক বছর ২৫ এর যুবকের সঙ্গে। একটা সময় ঝাড়ুদারের কাজ পেয়েছিলেন, সেখান থেকে তিনি আইপিএলের (IPL) মঞ্চে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কথা হচ্ছে কলকাতা নাইট রাইডার্সের তরুণ তুর্কি রিঙ্কু সিংকে (Rinku Singh) নিয়ে। ২০১৮ সাল থেকে নাইট শিবিরে রয়েছেন রিঙ্কু। অনুশীলনে সব সময় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। তাই ২০২২ সালের আইপিএলে খেলার সুযোগ পেয়ে তার সদ্ব্যবহার করতে ভোলেননি রিঙ্কু। গত আইএলে ৭টি ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেই রিঙ্কুর উত্থানের কাহিনি শুনলে চোখে জল আসতে পারে। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla-র এই প্রতিবেদনে।
ছেলেবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আলাদা ঝোঁক ছিল রিঙ্কুর। কিন্তু তাঁর বাবা পাশে ছিল না। স্কুলে পড়াকালীনই রিঙ্কু ক্রিকেটে অনেকটা সময় দিতেন। সেই সময় বাবার থেকে ক্রিকেট খেলার জন্য মারও জুটত রিঙ্কুর। অনেক সময় তাঁর বাবা বাড়ির সামনে তাঁর জন্য অপেক্ষা করতেন লাঠি হাতে নিয়ে। সেই সময় রিঙ্কুর দাদা তাঁকে সমর্থন করতেন। ফলে বাবার কাছে মার খাওয়া থেকে মাঝে মধ্যে রিঙ্কুকে বাঁচিয়ে নিতেন তাঁর দাদা।
রিঙ্কুর ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না। রিঙ্কু পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তৃতীয় নম্বর ছিলেন। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থা সচ্ছ্বল ছিল না। রিঙ্কুর বাবা গ্যাস সিলিন্ডার ডেলিভারির কাজ করতেন। পরিবারে অভাব অনটন দেখে একটা সময় রিঙ্কু ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নও ত্যাগ করতে বসেছিলেন। দু’বেলা দু’মুখো খাবার জোগাতে হিমশিম খেত রিঙ্কুর পরিবার। যার ফলে একটা সময় ক্রিকেটের কথা না ভেবে কাজ খুঁজতে গিয়েছিলেন রিঙ্কু। সেখানে তাঁকে জানানো হয়েছিল বাড়ির কাজ করতে হবে। ঘর মুছতে হবে, ঝাঁট দিতে হবে। এই কাজ মেনে নিতে পারেননি রিঙ্কু। বাড়ি ফিরে মাকে জানান ক্রিকেটেই নিজের ভাগ্য পরীক্ষা করতে চান তিনি। ধীরে ধীরে রিঙ্কুর ভাগ্যের চাকা ঘোরে।
২০১২ সালে স্কুলের এক টুর্নামেন্টে রিঙ্কু বাইক জিতেছিলেন। তিনি সেই বাইকের চাবি তুলে দিয়েছিলেন তাঁর বাবার হাতে। কারণ তাঁর বাবাকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সিলিন্ডার পৌঁছে দিতে হত। বাইক থাকলে তাতে সাহায্য হত বলে নিজের পাওয়া উপহার তিনি তুলে দেন বাবার হাতে। ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশের হয়ে লিস্ট এ-তে ডেবিউ হয় রিঙ্কুর। বছর দু’য়েক পরে তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সালে বদলে যায় রিঙ্কুর ভাগ্য। ২০১৭ সালে আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি কিংস ইলেভেন পঞ্জাব (বর্তমান পঞ্জাব কিংস) ১০ লক্ষ টাকায় রিঙ্কুকে কিনেছিল। এরপর ২০১৮ সালে শাহরুখ খানের কলকাতা নাইট রাইডার্স ৮০ লক্ষ টাকা দিয়ে রিঙ্কুকে দলে নেয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রিঙ্কুকে। ২০১৮ সাল থেকেই তিনি কেকেআরে রয়েছেন। গত মরসুমে তিনি সুযোগ পেয়ে নিজের জাত চিনিয়েছেন। এ বার দেখার আইপিএল-১৬-তে সুযোগ পেলে রিঙ্কু কেমন পারফর্ম করেন।