কলকাতা: ভারতীয় ক্রিকেটে আবার বিস্ফোরণ। টিম ইন্ডিয়ার (Team India) টেস্ট ক্রিকেটের (Test Cricket) ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরে দাঁড়ালেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। আজ, শনিবার টুইটারে নিজেই এই খবর ঘোষণা করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজে হারের পরই কেন এই সিদ্ধান্ত, তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। প্রোটিয়াদের কাছে সিরিজ হারের জন্য তো বটেই, ভারতীয় টিমের ব্যাটারদের নিয়েও তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। ডিআরএস বিতর্কে যে জড়িয়ে ছিলেন ভারতীয় টিমের ক্যাপ্টেন, তা নিয়েও কম কথা হয়নি। এ সবেরই প্রভাবেই কি ক্যাপ্টেন্সি ছাড়লেন বিরাট?
4️⃣0️⃣ wins in 6️⃣8️⃣ Tests!
Virat Kohli steps down as India's most successful Test captain ?
Read more: https://t.co/D0qfZJLRjP pic.twitter.com/2pnr6iJ7qd
— ICC (@ICC) January 15, 2022
আমিরশাহিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই ছোট ফর্ম্যাটের ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিয়েছিলেন বিরাট। নতুন ক্যাপ্টেন হিসেবে তুলে ধরা হয় রোহিত শর্মাকে। বিশ্বকাপের পর, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ওয়ান ডে সিরিজ থেকে ক্যাপ্টেন্সি থেকে সরিয়ে দিয়েছিল বোর্ড। তা নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। খোদ বিরাটই সফরে যাওয়ার আগের দিন সাংবাদিক সম্মেলনে বোর্ডের বিরুদ্ধে সরাসরি মুখ খুলেছিলেন। যা নিয়ে কম অস্বস্তিতে পড়েনি বিসিসিআই। বিরাটের উপর যে চাপ ছিল, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সেই চাপের সামনেই কি নতিস্বীকার করতে হল তাঁকে?
বোর্ডের বিরুদ্ধে বিরাট মুখ খোলায় খোদ প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় তোপের মুখে পড়ে গিয়েছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটমহল সৌরভের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার বলেছিলেন, কেরিয়ারে এমন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন সৌরভ। তাঁর উচিত ছিল বিরাটের পাশে দাঁড়ানো। বিরাটের মন্তব্যের জেরে আর পাল্টা মন্তব্য করেননি বোর্ড প্রেসিডেন্ট। বরং তিনি বলেছিলেন, এ ব্যাপার নিয়ে যা বলার বোর্ডই বলবে।
চাপের জোড়া ফলার মুখে দাঁড়িয়েছিলেন বিরাট। এক, দীর্ঘদিন তাঁর ব্যাটে বড় রান ছিল না। ২০১৯ সালে ইডেনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মতো কঠিন সফরে ভারতীয় ক্যাপ্টেনকে সফল ব্যাটসম্যান হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন সকলে। কিন্তু তিনি সেই অর্থে রান পাননি। একমাত্র কেপ টাউন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৯ রানের যে ইনিংসটা খেলেছিলেন, তা প্রশংসা পেয়েছিল ক্রিকেট বিশ্লেষকদের। দ্বিতীয় ইনিংসে টিম যখন প্রবল চাপে, তখন তিনি সেট হয়েও আউট হয়েছিলেন।
দুই, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে টেস্ট সিরিজ জিততে পারলে ইতিহাস তৈরি করতে পারত ভারত। বিশ্ব ক্রিকেটে সব দেশেই টেস্ট সিরিজ জিতেছে ভারতীয় টিম। দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়া। ডিন এলগারের টিম ধারে ও ভারে অনেকটাই পিছিয়ে ছিল ভারতের থেকে। তা সত্ত্বেও তরুণ টিম নিয়ে ভারতকে ২-১ সিরিজ হারানোয় বিরাট যে চাপে পড়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় টেস্টে পিঠের চোটের কারণে খেলতে পারেননি বিরাট। তাঁর বদলে লোকেশ রাহুল ক্যাপ্টেন্সি করেছিলেন। বিরাটের অভাব প্রতি মুহূর্তে ধরা পড়েছিল। একই সঙ্গে টিমকে যে ভাবে অনুপ্রাণিতও করতে পারেননি বিরাট। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ান ডে ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার পর বিরাট যে টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ছেড়ে দিতে পারেন, তা আন্দাজ করা গিয়েছিল। বিরাট এখন ব্যাটসম্যান বিরাটের উপর আস্থা রাখতে চাইছেন। যাতে তাঁর ব্যাটেই ভরসা খুঁজে পায় টিম, সেই তাগিদই দেখাচ্ছেন। তাই একের পর এক ক্যাপ্টেন্সি ছাড়তে ছাড়তে টেস্টের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দিলেন।
বিরাট টেস্ট ক্যাপ্টেন্সি ছাড়ার পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, কে হবেন ভারতের নতুন টেস্ট নেতা? সাদা বলের ক্রিকেটে রোহিতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ভারতীয় ক্রিকেট কখনওই একাধিক ক্যাপ্টেন তত্ত্বে বিশ্বাস করে না। অতীতেও কখনও দেখা যায়নি। সেই অঙ্কের উপর ভিত্তি করেই বলা হচ্ছে, রোহিতের ক্যাপ্টেন হওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। তা ছাড়া লোকেশ রাহুলদের মতো তরুণরা যে এখনও তৈরি হননি, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্ট সিরিজেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে।