
কলকাতা : বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল। জুনের এই ম্য়াচ ঘিরে অনেকেই হয়তো উত্তেজনায় ফুটছে। ভারতের কাছে আরও একটা সুযোগ। ২০১৩ সালের পর ভারতীয় ক্রিকেট দল আইসিসির কোনও ট্রফি জেতেনি। কখনও সেমিফাইনাল আবার কখনও ফাইনাল অবধি পৌঁছেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। উদ্বোধনী বিশ্ব টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপ অর্থাৎ গত বারও ফাইনালে উঠেছিল ভারত। যদিও ট্রফি আসেনি। রানার্স হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। টানা দ্বিতীয় বার বিশ্ব টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারত। উচ্ছ্বসিত হওয়ার পাশাপাশি কিছুটা চিন্তার জায়গাও রয়েছে। ম্য়াচ হবে ইংল্য়ান্ডের লন্ডন ওভালে। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়া। আইপিএল শুরুর আগেই ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়াকে টেস্ট সিরিজে হারিয়েছে ভারত। কিন্তু ফাইনাল ম্যাচ সব দিক থেকেই আলাদা। ভারতের চিন্তার জায়গা কেন বলা হচ্ছে! বিস্তারিত রইল TV9Bangla Sports -এর এই প্রতিবেদনে।
আইপিএল ফাইনাল ২৮ মে। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ৭-১১ জুন ওভালে। বৃষ্টির কথা ভেবে ১২ জুন রিজার্ভ ডে রাখা হয়েছে। সমস্যা সেখানে নয়। আইপিএল ফাইনাল এবং বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের মাঝের সময়টা খুবই কম। টি-টোয়েন্টি ফরম্য়াট থেকে মানসিক এবং টেকনিকের দিক থেকেও দ্রুত ফোকাস অ্যাডজাস্ট করতে হবে। এত কম সময়ে কতটা হয়ে উঠবে, সেটা নিঃসন্দেহে ভাবনার জায়গা। চিন্তার মূল জায়গা চোট। ঘরের মাঠে বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতেই চোট পেয়েছিলেন শ্রেয়স আইয়ার। ডিসেম্বরে গুরুতর গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিলেন ঋষভ পন্থ। দেশের সেরা পেসার জসপ্রীত বুমরা দীর্ঘদিন ধরেই চোটের কারণে বাইরে। শ্রেয়স, বুমরাদের অস্ত্রোপচারও হয়েছে। এই তিন জনকে বিশ্ব চ্য়াম্পিয়নশিপে পাওয়া সম্ভব নয়। নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে লোকেশ রাহুল এবং জয়দেব উনাদকাটকে নিয়ে। আইপিএলে খেলতে গিয়েই চোট পেয়েছেন রাহুল। ম্য়াচের আগের প্র্যাক্টিসে নেটে চোট লাগে উনাদকাটের। এ বারের আইপিএল থেকে ছিটকে গিয়েছেন দু-জনই। আশঙ্কা, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের আগে ফিট হয়ে উঠতে পারবেন কিনা দু-জন।
আইপিএলের পরই যেহেতু বিশ্ব টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপ ফাইনাল, ভারতীয় টিম ম্য়ানেজমেন্টের তরফে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছিল, জাতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য়দের ওয়ার্কলোড ম্য়ানেজমেন্ট নিয়ে ভাবার জন্য। আদৌ কি ভাবা হচ্ছে? কিছুদিন আগে অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে এ প্রসঙ্গে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছিল। তিনি সাফ জানিয়েছিলেন, এখন সবটাই নির্ভর করছে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের ওপর। কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি কি চাইবে তার দলের সেরা প্লেয়ারকে ‘অযথা’ বিশ্রাম দিতে? সম্ভবত না। এ কারণেই সম্ভবত কথাটা লিখতে হচ্ছে, এখনও অবধি তাঁর কোনও ছাপ দেখা যায়নি।
জসপ্রীত বুমরা না থাকায় ভারতীয় পেস আক্রমণের সবচেয়ে বড় স্তম্ভ যে মহম্মদ সামি, এ বিষয়ে নতুন করে বলার নেই। তাঁর সঙ্গে জুটি বাঁধার কথা মহম্মদ সিরাজের। আইপিএলে গুজরাট টাইটান্সে খেলেন সামি, অনবদ্য পারফর্ম করে চলেছেন। অন্য়দিকে, সিরাজ খেলেন রয়্যাল চ্য়ালেঞ্জার্স ব্য়াঙ্গালোরে। দুই পেসারই দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন। এখনও অবধি তাঁদের বিশ্রাম দেওয়া হয়নি কোনও ম্য়াচেই। একই কথা প্রযোজ্য় শুভমন গিল, বিরাট কোহলির মতো গুরুত্বপূর্ণ সদস্য়দের ক্ষেত্রেও। রোহিত শর্মা এক ম্য়াচে নেতৃত্ব দেওয়া থেকে বিরত ছিলেন। ইমপ্য়াক্ট প্লেয়ার হিসেবে ব্য়াটিংয়ে নেমেছিলেন শুধু। বিশ্ব টেস্ট চ্য়াম্পিয়নশিপের স্কোয়াডে যাঁরা সুযোগ পেয়েছেন, আদৌ তারা পর্যাপ্ত বিশ্রাম পাবেন তো ফাইনালের আগে! এখনও পর্যন্ত এর কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।
আইপিএলে প্লেয়ারদের ওয়ার্কলোড ম্য়ানেজমেন্ট যেন ‘সোনার পাথরবাটি।’ যা খাতায়-কলমেই থেকে যায়। ভাবনার জায়গা এটাই। পজিটিভ ভাবনার পাশাপাশি নেতিবাচক ভাবনা আসাও স্বাভাবিক। অন্তত রাহুল, উনাদকাটের চোটের পর আরও বেশি করে মনে হচ্ছে। টি-টোয়েন্টির মতো দ্রুত গতির ক্রিকেটে নিয়মিত খেললে, ফুল ফিট থাকতে পারবেন তো সামি-সিরাজ? কোনও কারণে, এই দু-জনের চোট লাগলে! বিকল্পের সংখ্য়া কিন্তু ক্রমশ কমতে থাকবে। ভারতীয় বোর্ডের নির্দেশিকা কি পরবর্তী ম্য়াচগুলিতে কার্যকর করতে দেখা যেতে পারে ফ্র্য়াঞ্চাইজিগুলিকে? আরসিবির প্লে-অফ নিশ্চিত না হওয়া অবদি যেমন বিরাট, সিরাজদের প্রয়োজন, তেমনই প্লে-অফ নিশ্চিত হলে লক্ষ্য থাকবে ফাইনালে জায়গা করে নেওয়া। এরপর আর তাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম দেওয়া সম্ভব হবে কি?
আর একটা বিষয়ও ভুললে চলবে না, টেস্ট ক্য়াপ্টেন্সি পাওয়ার পর রোহিত শর্মা কিন্তু দেশের বাইরে কখনও নেতৃত্ব দেননি এই ফরম্য়াটে। তাঁর শারীরীক এবং মানসিক দুই বিশ্রামই হয়তো প্রয়োজন। নয়তো আরও একটা আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনাল থেকে খালি হাতেই ফিরতে হতে পারে ভারতকে। সেক্ষেত্রে, অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হবে।