ISL 2021-22: হ্যাটট্রিক রেকর্ডে ডার্বির নতুন নায়ক জামশিদপুত্র কিয়ান

দীপক টাংরির পরিবর্তে ৬১ মিনিটে সুপারসাব হিসেবে আবির্ভাব। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টাচেই গোল। ক্রমশ আগ্রাসী হয়ে ওঠা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে বাকি সময়টুকু কিয়ান-কাহিনি। ৯১ ও ৯৫ মিনিটে পর পর দু'গোল করে ইতিহাস গড়ে ফেললেন জামশিদপুত্র। বড় ম্যাচের ইতিহাসে এর আগে কেউ সুপারসাব হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করেননি।

ISL 2021-22: হ্যাটট্রিক রেকর্ডে ডার্বির নতুন নায়ক জামশিদপুত্র কিয়ান
হ্যাটট্রিক রেকর্ডে ডার্বির নতুন নায়ক জামশিদপুত্র কিয়ান
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 29, 2022 | 11:30 PM

অভিষেক সেনগুপ্ত

এটিকে মোহনবাগান-৩ : এসসি ইস্টবেঙ্গল-১ (কিয়ান ৬৪, ৯১ ও ৯৫) (সিডল ৫৬)

সেই এক ছিপছিপে চেহারা। বলের কাছাকাছি থাকা। সামান্য সুযোগ পেলেই বিপক্ষের নেট খুঁজে নেওয়া। যাঁরা জামশিদ নাসিরিকে (Jamshid Nassiri) চিনতেন, তাঁরা ব্যাখ্যা করছেন এ ভাবেই। ইরান থেকে এ শহরে এসে লাল-হলুদ জার্সিই খেলেছিলেন প্রথম। ৪২ বছর রোভার্স কাপের সেমিফাইনালে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন জামশিদ। দার্জিলিং গোল্ড কাপের ফাইনাল, ফেডারেশন কাপ ফাইনাল, কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্ডের গ্রুপ লিগ— জামশিদ ফুল ফুটিয়েছেন লাল-হলুদময় ডার্বিতে।

৪২ বছর পর শনি-রাতে স্টিফেন কোর্টের এক ফ্ল্যাটে আবার ডার্বি-উত্‍সব দেখল কলকাতা। তফাত শুধু রংয়ে। যাঁকে ঘিরে উচ্ছ্বাস, বাবা ইরানিয়ান হলেও তিনি বাঙালি। কলকাতায় জন্ম। বাংলার হয়ে বয়সভিত্তিক খেলা। কিন্তু জামশিদের ছেলে তো, ইরানিয়ান টাচ তো থাকবেই। দু’দফায় ইস্টবেঙ্গলে খেলা জামশিদের আক্ষেপ ছিল নিয়মের জটে সবুজ-মেরুনে কখনও খেলতে না পারা। সেই আক্ষেপ ছেলে কিয়ান নাসিরি (Kiyan Nassiri) মেটালেন বললে ভুল হবে, মুছে দিলেন হয়তো। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে ০-১ পিছিয়ে থাকা মোহনবাগানকে ৩-১ জেতালেন। নিজেই করে ফেললেন হ্যাটট্রিক। একাই ঢেকে দিলেন রয় কৃষ্ণার না থাকা।

বাঙালির বড় ম্যাচ আসলে নায়ক জন্মের আঁতুড়ঘর। কখন, কোন মিনিটে, কোন লগ্নে কে যে জন্ম নেবে, কেউ জানে না। সুভাষ ভৌমিক হতে পারেন তিনি। মহম্মদ হাবিব হতে পারে তাঁর নাম। গৌতম সরকার, সমরেশ চৌধুরী, সুরজিত্‍ সেনগুপ্ত, সুব্রত ভট্টাচার্য, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ও হতে পারেন।

১৯৯৭ সালের এক ডার্বিতে বাইচুং ভুটিয়ার নায়ক হয়ে উঠেছিলেন হ্যাটট্রিক করে। এই ডার্বিতেই বেশ কয়েক বছর আগে চিরকালীন নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন নাইজিরিয়ান এডে চিডি। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের হয়ে চার গোল করে। আর এক ডার্বি জন্ম দিয়ে গেল এক নতুন নায়কের। দীপক টাংরির পরিবর্তে ৬১ মিনিটে সুপারসাব হিসেবে আবির্ভাব। ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টাচেই গোল। ক্রমশ আগ্রাসী হয়ে ওঠা ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে বাকি সময়টুকু কিয়ান-কাহিনি। ৯১ ও ৯৫ মিনিটে পর পর দু’গোল করে ইতিহাস গড়ে ফেললেন জামশিদপুত্র। বড় ম্যাচের ইতিহাসে এর আগে কেউ সুপারসাব হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করেননি।

স্কোরলাইন কখনওই ম্যাচের খুঁটিনাটি তুলে ধরে না। এমনকি, স্কোরলাইনে হাইলাইটও থাকে না অনেক সময়। ১-৩ হারা দিয়ে মারিও রিবেরার ইস্টবেঙ্গলকে বিচার করা যাবে না। বরং বলতে হবে, শেষ ১০টা মিনিট যদি রক্ষণের ফাঁকফোকর বেরিয়ে না পড়ত, তা হলে ১-১ ফলাফলটা ধরে রাখতে পারত ইস্টবেঙ্গল। হীমা মণ্ডলের সাহসী লড়াইয়ে যদি উজ্জীবিত হতে পারতেন আদিল-ফ্রাঞ্জোরা, অন্য রকম হতে পারত। ওই ১০ মিনিটের ভুলের খেসারত দিতে হলেও লাল-হলুদ এই আইএসএলের সেরা ম্যাচটা খেলল। কোচ মারিও সমর্থকদের পালস্ বোঝেন। টিম সাজাতে জানেন। বিপক্ষের সেরা অস্ত্রকে থামাতে হয় কী ভাবে, তাও জানা। তাই হুয়ান ফেরান্দোর আগ্রাসী ছক সত্ত্বেও ৮০ মিনিট পর্যন্ত দুরন্ত লড়াই করেছিল মারিওর টিম।

প্রথমার্ধ ছিল গোলশূন্য। কিন্তু ২৬ মিনিটে তিরির ছোট ভুলটা কাজে লাগাতে পারলে নায়ক হয়ে প্রথম ডার্বি খেলতে নামা ইস্টবেঙ্গলের ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্সেলো। বাগানের কিপার অমরিন্দরকে একা পেয়েও বল বাইরে মারেন মার্সেলো। বিরতির পর মোহনবাগান আরও আগ্রাসী হল। শুভাশিস বসু, লিস্টন কোলাসোর বাঁ দিক আরও ধারালো হয়ে উঠল। গতির বিরুদ্ধে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল তখনই ২-০ করে ফেলতে পারত। ৫৫ মিনিটে কাউন্টার অ্যাটাকে এসে জোরালো শট নেন পেরোসেভিচ। অমরিন্দর আবার পরিত্রাতা হয়ে ওঠেন। ৫৭ মিনিটে অবশ্য গোল করে ফেলে মারিওর টিম। পেরোসেভিচের কর্নার থেকে মার্কারহীন ড্যারেন সিডল সাইড শটে গোল করেন।

ওই ৫৭ মিনিট টার্নিং পয়েন্ট হতে পারত ইস্টবেঙ্গলের। আইএসএলের প্রথম দফার ডার্বিতে তিন গোল খেতে হয়েছিল লাল-হলুদকে। এ বার জয়ের আলো জ্বালতে পারতেন পেরোসেভিচরা। ৫৭ নয়, টার্নিং পয়েন্ট হয়ে থাকল ৬১ মিনিট। কিয়ান নাসিরি নামের এক ২১ বছরের ছেলের সুপারসাব হয়ে নামা। ৯০ মিনিটে দ্বিতীয় গোল কিয়ানের। বাঁ দিক থেকে লিস্টন কোলাসোর ক্রস থেকে প্রথমে ডাইভিং হেড দেন ডেভিড উইলিয়ামস। পোস্টে লেগে ফেরা বলে ভলি মেরে ২-১ করেন কিয়ান নাসিরি। চার মিনিট পর আবার গোল।

স্টিফেন কোর্টের ফ্ল্যাটে রবিবার রাতে যিনি উত্‍সবে মত্ত, চার দশক আগে ডার্বিতে তাঁর সব মিলিয়ে ছিল ৫ গোল। প্রথম ডার্বি খেলতে নেমে ছেলে কিয়ানের হ্যাটট্রিক কতটা সুখ দিল তাঁকে? কোঁকড়া চুলের ইরানিয়ান ঝকঝকে হাসি নিয়ে বলছিলেন, ‘ও কলকাতা ফুটবলের আবেগটা বোঝে।’ ঠিক বাবার মতো!