দোহা : ব্রাজিলের জন্য আনন্দ পাবেন, নাকি কোরিয়ার জন্য কষ্ট! দুটোই করতে পারেন। ম্যাচের আগে দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) তারকা ফুটবলার সন বলেছিলেন, তাঁরা চান মিরাকল হোক। খুব ভুল বলেননি। দক্ষতায় ব্রাজিলের (Brazil) সঙ্গে পেরে ওঠা তাঁদের জন্য কার্যত অসম্ভব। মিরাকল ছাড়া পরের ধাপে পৌঁছনো যেত না। মিরাকল হল না। শেষ আটে জায়গা করে নিল ব্রাজিল। অনেকেই যাঁরা ‘জোগো বোনিতো’ অর্থাৎ সুন্দর ফুটবলের কথা শুনে আসছেন, হ্যাঁ, একেই বলে সুন্দর ফুটবল। ক্যামেরুনের বিরুদ্ধে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে হার যে শুধুই একটা অঘটন ছিল, প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দিল পাঁচ তারা ব্রাজিল। ৪-১ ব্যবধানে জিতে শেষ আটে ক্রোয়েশিয়ার সামনে ব্রাজিল। দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য একটাই সান্ত্বনা হতে পারে, খেলায় হার-জিত থাকে। বিস্তারিত রিপোর্ট TV9Bangla-য়।
প্রথম ম্যাচেও শিল্পীর মতোই সুন্দর একটা গোল করেছিলেন রিচার্লিসন। এ দিনও করলেন। তার আগেই ২-০ এগিয়ে গেল ব্রাজিল। শুরুটা ম্যাচের ৭ মিনিটে। গ্যালারিতে আকাশছোঁয়া একটা প্রত্যাশার স্কোরলাইন নজরে পড়ল। বিদ্রুপ ছিল কি তাতে? হতেও পারে। কিংবা শুধু প্রত্যাশা! দক্ষিণ কোরিয়ার এক সমর্থকের হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা, দক্ষিণ কোরিয়া ৭-১ ব্রাজিল! ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে এই ব্য়বধানে জার্মানির কাছে হেরেছিল ব্রাজিল। হলুদ জার্সির ফুটবলারদের কি সেই প্ল্যাকার্ডে নজর পড়েছে? নিশ্চিত নয়। ব্রাজিল ঠিক কত গোল দেওয়ার দিকে এগোচ্ছিল, তাও বলা কঠিন। শুরুটা হল ম্যাচের ৭ মিনিটে। বক্সের বাঁ দিকে বল পেলেন, কিছুটা সময় নিলেন, অনবদ্য শটে ব্রাজিলকে এগিয়ে দিলেন। পড়তে যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ঠিক ততটা সহজেই গোল ভিনিসিয়াসের।
ম্যাচের ১৩ মিনিটে সাম্বা ডান্সের সুযোগ ব্রাজিলের। রিচার্লিসনকে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় ব্রাজিল। শট নেন মাঠে ফেরা নেইমার। ঠান্ডা মাথায় পেনাল্টি থেকে গোল করেন। তবে ২৯ মিনিটে রিচার্লিসনের গোল! লেখায় বোঝানো অসম্ভব। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের সামনে বল জাগল করে মার্কুইনোসকে পাস দেন রিচার্লিসন। থিয়াগো সিলভা হয়ে ফের তাঁর কাছেই বল এবং রিচার্লিসনের গোল। ৩-০ এগিয়ে যেতে নিজেরাই শুধু নাচলেন তা নয়, কোচ তিতেকেও সাম্বা নাচে সামিল করলেন। ৩৬ মিনিটেই স্কোরলাইন ৪-০ করেন লুকাস পাকেতা। প্রথমার্ধেই ৪ গোল! প্রত্যাশা ছিল, আরও বড় ব্যবধানে জিতবে ব্রাজিল। দ্বিতীয়ার্ধে আরও মরিয়া চেষ্টা করে কোরিয়া। তাদের গোলরক্ষকের সৌজন্যে হারের ব্য়বধান বাড়েনি। তবে এক্কে বারে খালি হাতে ফেরেনি কোরিয়া। তার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৭৬ মিনিট পর্যন্ত।
ব্রাজিল ৪ (ভিনিসিয়াস ৭’, নেইমার ১৩’-পেনাল্টি, রিচার্লিসন ২৯’, পাকেতা ৩৬’)
দক্ষিণ কোরিয়া ১ (সিউং হো ৭৬’)
কোনও জয়ই হয়তো নিখুঁত হয় না। হেক্সার লক্ষ্যে নামা ব্রাজিলের জন্যও নয়। প্রথমার্ধেই ব্রাজিল এগিয়ে যায় ৪-০ ব্যবধানে। তারপরও রক্ষণ নিয়ে চিন্তা থাকছে। গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার প্রথমার্ধেই দুটি অনবদ্য সেভ করেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আরও একটি দুর্দান্ত সেভ অ্যালিসনের। এ খানেই শেষ নয়। ৬৮ মিনিটে আরও একবার। অ্যালিসনের মতো গোলকিপারের থেকে এগুলো যেন প্রত্যাশিতই। কিন্তু ভুল হলে? ষষ্ঠ বিশ্বকাপ জিততে হলে, রক্ষণ আরও জমাট করতে হবে ব্রাজিলকে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। অ্যালিসনের ভুলে না হলেও, দক্ষিণ কোরিয়া একটা গোল শোধ করল অনবদ্য ভাবে। ফ্রি-কিক পেয়েছিল কোরিয়া। ওয়ালে আটকে গেলেও ফিরতি বলে ভলিতে জোরালো শট (৫৯ কিমি/ঘণ্টা) পেক সিউং হো-র। অ্যালিসনও আটকাতে পারলেন না সেই শট। ম্যাচের ৮০ মিনিটে অ্যালিসনকে পরিবর্তন করা হয়। অবশেষে খেলার সুযোগ পেলেন ব্রাজিলের আর এক গোলরক্ষক ওয়েভার্টন। ব্রাজিল স্কোয়াডের সকলেই ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলেন।
ব্রাজিল শেষ আটে খেলবে ক্রোয়েশিয়ার বিরুদ্ধে, দক্ষিণ কোরিয়া স্বপ্ন দেখবে নতুন একটা বিশ্বকাপে, আবারও কয়েকটা ধাপ পেরোনোর।