
কলকাতা: ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ কী? আইএসএল কি আদৌ হবে? কিভাবে হবে? কোন ফরম্যাটে হবে? একাধিক প্রশ্ন। ভারতীয় ফুটবল ঘিরে জটিলতা কাটছেই না। বছর শেষ হয়ে গেল, তবু লিগের ভবিষ্যৎ স্থির হল না। ক্লাবের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠক সেরে ফেলেছেন ফেডারেশন কর্তারা। জট কেটেও কাটছে না। কমার্শিয়াল পার্টনার, ব্রডকাস্টিং পার্টনার এবং আরও নানা সমস্যার সমাধান এখনও ঝুলে। লিগ আয়োজনের জন্য দুটো ভেন্যু প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেও ফাইনাল করা যাচ্ছে না।
লিগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত দেখে অনেক ফ্র্যাঞ্চাইজি দলই বাজেট কাটছাঁট করতে শুরু করে দিয়েছে। ফুটবলাররাও জানেন না তারা খেলবেন কিনা। এই সুযোগে জানুয়ারির ট্রান্সফার উইন্ডোকে কাজে লাগাতে চাইছেন অনেক ফুটবলাররা। আইএসএলের ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা অব্যাহত। বছর শেষে ফেসবুকে পোস্ট ইস্টবেঙ্গলের মিডফিল্ডার সৌভিক চক্রবর্তীর।
আমার মনে হয় না মানুষ আর সত্যি বুঝতে পারছে যে কী ঝুঁকির মুখে রয়েছে। যদি এখন এর সমাধান না করা হয়, তবে শুধু ভারতীয় ফুটবলই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
হাজার হাজার জীবন স্থায়ীভাবে প্রভাবিত হবে। এটা শুধু খেলোয়াড়দের ব্যাপার নয়। ভারতীয় ফুটবলে কর্মরত অনেকেরই কোনো সঞ্চয় নেই, দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি নেই, বা তাদের জন্য অন্য কোনো বিকল্পও নেই। তারা মাস শেষে বেতনের উপর নির্ভর করে চলে। তাদের বেতনই বেঁচে থাকার একমাত্র উৎস। যখন বেতন বন্ধ হয়ে যায়, জীবনও থেমে যায়। খেলোয়াড়, কোচ, সাপোর্ট স্টাফ, ফিজিও, বিশ্লেষক, মিডিয়া টিম, কিট ম্যানেজার, মাঠকর্মী, চালক, অপারেশনস টিম, বিক্রেতা এবং স্থানীয় অংশীদাররা। পুরো পরিবার এই ব্যবস্থার উপর নির্ভরশীল। সন্তানদের শিক্ষা, চিকিৎসার প্রয়োজন, ভাড়া, খাবার—সবকিছুর খরচ ফুটবল থেকেই আসে। সিদ্ধান্তগুলো প্রায়শই টেবিলের উপর রাখা ফাইলের মতো করে আলোচনা করা হয়। কিন্তু প্রতিটি বিলম্ব, প্রতিটি নীরবতা, প্রতিটি স্থগিত মৌসুমের পেছনে এমন কিছু বাস্তব মানুষ আছেন, যারা বাড়িতে বসে আছেন কোনো স্পষ্ট ধারণা ছাড়া, কোনো আয় ছাড়া এবং তাদের পরিবারকে দেওয়ার মতো কোনো উত্তর ছাড়া। সভা হচ্ছে। আলোচনা হচ্ছে। কিন্তু সময় ফুরিয়ে আসছে।
যদি এই পরিস্থিতি চলতে থাকে, ক্লাবগুলো এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে যা আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। মালিকরা সরে যেতে পারেন। কর্মীদের ছাঁটাই করা হবে। খেলোয়াড়রা খেলা ছেড়ে দেবে, এই কারণে নয় যে তারা চায়, বরং তাদের আর কোনো উপায় থাকবে না বলে।
আর একবার এমনটা হলে, সবকিছু নতুন করে গড়ে তোলা সহজ হবে না। কিছু ক্ষতি অপূরণীয়। আমাদের এই মৌসুমের বাইরেও ভাবতে হবে। যদি সিনিয়র পর্যায়ে কোনো স্থিতিশীল পথ না থাকে, তাহলে কি অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ফুটবল খেলতে দেবেন? যদি শীর্ষ স্তর বন্ধ হয়ে যায় বা ক্রমাগত অনিশ্চিত থাকে, তাহলে তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবলের কী হবে?
যদি খেলোয়াড়দের বিকশিত হওয়ার কোনো জায়গা না থাকে, তাহলে একাডেমির উদ্দেশ্য কী? যখন মানুষের জীবিকা ভেঙে পড়ছে, তখন আপনি উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে পারেন না। যখন ঘরোয়া কাঠামো রক্তক্ষরণ করছে, তখন আপনি জাতীয় দল নিয়ে কথা বলতে পারেন না। যখন মানুষ আজ বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে, তখন আপনি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে পারেন না। এটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা, রাজনীতি বা অহংকারের চেয়েও বড়। এটা লিগ এবং ফরম্যাটের চেয়েও বড়। এটা মানুষের জীবন নিয়ে প্রশ্ন।
যদি এখন ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে সবকিছু শুধু থেমে যাবে না। সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। আর একবার বিশ্বাস ভেঙে গেলে, একবার পরিবারগুলোকে ফুটবল থেকে দূরে ঠেলে দেওয়া হলে, একবার খেলোয়াড় এবং কর্মীদের চিরতরে খেলা ছাড়তে বাধ্য করা হলে, সহজে আর ফিরে আসা সম্ভব হবে না। এটি এআইএফএফ থেকে শুরু করে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং এর মধ্যবর্তী সমস্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ও অংশীদারদের কাছে একটি আবেদন। অনুগ্রহ করে পরিস্থিতির জরুরি অবস্থাটি বুঝুন।
অনুগ্রহ করে এর পরিণতিগুলো বুঝুন। অনুগ্রহ করে বুঝুন যে বিলম্ব করাটাও একটি সিদ্ধান্ত, এবং মানুষ ইতিমধ্যেই এর মূল্য দিচ্ছে। এটি কোনো স্বার্থপর অনুরোধ নয়। এটি কোনো ব্যক্তিগত অভিযোগ নয়।
আমি হাজার হাজার মানুষ এবং তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কথা বলছি, যাদের দৈনন্দিন জীবিকা ফুটবল থেকেই আসে।
আমার পক্ষ থেকে যদি কিছু করার থাকে, আমি দাঁড়াতে, কথা বলতে, কাজ করতে এবং সমর্থন করতে প্রস্তুত। কিন্তু অনুগ্রহ করে এখনই পদক্ষেপ নিন। কারণ যদি এটি ভেঙে পড়ে, তবে শুধু ফুটবলই হারিয়ে যাবে না। হারিয়ে যাবে মানুষের জীবন।