কলকাতা: ময়দানের তিন প্রধান দলের কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা ছিল সুভাষ ভৌমিকের (Subhash Bhowmick)। তাঁর কোচিং স্টাইলও ছিল অনন্য। প্রাক্তন ফুটবলাররা বলছেন সুভাষের না থাকাটা একটা অপূরণীয় ক্ষতি। মেনে নিতে কষ্ট হলেও এটাই যে সত্যি, আর ময়দানে দেখা যাবে না ভোম্বলদাকে। দেখে নিন প্রাক্তন ফুটবলাররা কী বলছেন সুভাষকে নিয়ে…
প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার — এই পৃথিবী ছেড়ে সকলকেই যেতে হয়। সবাই যাবে। কিন্তু এই অকালপ্রয়াণ, অসময়ে যাওয়া যতই কিডনির অসুখ হোক, যতই করোনা হয়ে থাকুক কিন্তু ওর যাওয়াটা মেনে নেওয়া যায় না। বলার কোনও ভাষা নেই। শুধু এটুকুই বলব, ওর পরিবার সন্তান, স্ত্রীকে কীভাবে শান্তনা দেব তার ভাষাও আমি পাচ্ছি না। কষ্ট পাচ্ছি এটাই ভেবে যে, ভৌমিককে আর ফিজিক্যালি দেখতে পাবো না আমরা। ওর স্মৃতি জড়িয়ে থাকবে যতদিন আমি বেঁচে থাকবো। আমার মতো অনেক খেলোয়াড়ের স্মৃতি ওর সঙ্গে জ্বলজ্বল করবে। কিন্তু এইটুকু বলতে পারি, এক কথায় বলা যায় ও হিরোদের হিরো। ফুটবল মাঠের সুভাষ ভৌমিক ব্রোঞ্জজয়ী ভারতীয় দলের খেলোয়াড়, ভারতবর্ষের অসাধারণ ফুটবল প্লেয়ার।
প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস– সুভাষ স্যার সব সময় আমাদের খুব কনফিডেন্স দিতেন। আমি ইস্টবেঙ্গলে যখন ছিলাম, ভৌমিক স্যার কোচ ছিলেন। একটা ম্যাচ আমার মনে আছে, সেটা ছিল এএফসি কোচির সঙ্গে, তিনি আমাকে খেলার একটু আগে বলেন, ‘তুই প্রথম থেকে খেলছিস’। সেদিন আমি প্রথম থেকেই খেলেছিলাম, ভালো একটা গোলও করেছিলাম। ইস্টবেঙ্গল এক গোলে জেতে। এবং সুভাষ স্যারের সব চেয়ে যেটা ভালো জিনিস, যে কোনও খারাপ সময় তিনি খেলোয়াড়দের পাশে থাকতেন। আমাকেও তিনি সব সময় ফোন করতেন। বলতেন এটা কর। ফাঁকা গোলে বল মারতে বলতেন। বলতেন, তা হলে দেখবি এমনিই গোল হবে। তিনি আমাদের জেনারেশনের সব প্লেয়ারদের সঙ্গেই কথা বলতেন। যার খারাপ সময় গেছে, সুভাষ স্যার সব সময় তাঁর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন কোনও না কোনও ভাবে।
প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য– আজ সকালেই খবরটা পেলাম। অত্যন্ত দুঃখের একটা খবর। আমরা অত্যন্ত দক্ষ একজন ফুটবলারকে হারালাম। ভালো কোচকে হারালাম। ফুটবলটা তিনি খুব ভালো বুঝতেন। এবং তিনি নিজে খেলতেনও খুব দাপটের সঙ্গে। এবং বলতে কোনও দ্বিধা নেই তিনি আমাকে ও বিদেশকে হাতে ধরে শিখিয়েছিলেন। কীভাবে আউটসাইড ডস করতে হয়। আউটসাইড ডস হচ্ছে সব থেকে মারাত্মক একটা অস্ত্র। সেটা রপ্ত করার জন্য আমাকে, বিদেশকে বিশেষ ভাবে সাহায্য করেছিলেন সুভাষ ভৌমিক। তিনি এমন একজন খেলোয়াড় ছিলেন, যিনি মাঠে নামার আগেই ঠিক করে নিতেন, আজ মাঠে নামব, গোল করব, দলকে ম্যাচ জেতাব এবং তারপর বেরিয়ে আসব।
প্রাক্তন ফুটবলার সমরেশ চৌধুরি– ওর সঙ্গে আমার একটা বিরাট বন্ধুত্ব ছিল। এটা কী যে হল, মেনে নিতে পারছি না। এত ভালো ফুটবলার হয় না। আমার দেখা ফুটবলারদের মধ্যে ও অত্যন্ত ভালো ছিল। কিছু ম্যাচ এখনও আমার মনের মধ্যে গাঁথা হয়ে আছে। ওর খুব দয়ালু মন ছিল। এই খবরটা শুনেই সকালবেলা মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।
প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য– সুভাষ ভৌমিক না থাকলে আমরা প্রতিষ্ঠা পেতাম না। ১৯৭৬ সালে ধীরেনদাকে বলে আমরা ওকে মোহনবাগানে সই করিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম সুভাষদাকে নিয়ে নিন। আমরা তারপর যে সাফল্য পেয়েছি, প্রতিষ্ঠা পেয়েছি, তার জন্য সুভাষ ভৌমিকের প্রচুর অবদান রয়েছে। এই ৫-৬ দিন আগেই কথা বললাম। তখনও কিছু বুঝতে পারিনি। আমার কাছে এটা খুবই মর্মান্তিক। ভোম্বলদা চলে যাবে এটা আমি ভাবতেই পারছি না। আমি আজকে যাব ভেবেছিলাম, কিন্তু এটা শুনে আমি ভীষণ মর্মাহত হয়ে পড়েছি।
প্রাক্তন ফুটবলার অ্যালভিটো — আজকে খুব খারাপ একটা দিন। সুভাষ ভৌমিক মারা গেছেন, খবরটা শুনে ভীষণ খারাপ লেগেছে। ভাবতেই খারাপ লাগছে তিনি নেই। শুনেছিলাম ২-৩ দিন আগেই তাঁর শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল না। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যাবেন সেটা ভাবতেই পারিনি। সুভাষ ভৌমিক আমার কাছে শুধু কোচ ছিলেন না। আমার বাবার মতো ছিলেন তিনি। কারণ একটা সময় আমার যখন ফর্মটা খারাপ ছিল, তখন আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রেখেছিলেন। আমার খাওয়া দাওয়া, ট্রেনিং সব কিছুতেই তিনি নজর দিয়েছিলেন। আমার জীবনের একটা টার্নিং পয়েন্ট যদি বলি বা এতদিন খেলতে পারার ব্যাপারে বলি, সেই কারণটা ছিলেন সুভাষ ভৌমিক। তিনি আমাদের প্রচুর সাফল্য দিয়েছেন। শুধু আমাকে নয়, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে তিনি অনেক দিয়েছেন। আইলিগ, আশিয়ান কাপ সব কিছুই আমরা ওঁর সময় পেয়েছিলাম। তিনি শুধু ভালো কোচই ছিলেন না। ম্যান ম্যানেজমেন্টের দিকেও তিনি ভীষণ ভালো ছিলেন।