India U-17 Women’s Team: ফুটবলেই স্বাধীনতার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে সুধা

মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ দেখেছে সুধা। স্ত্রী আর মেয়েকে নিজের বাড়িতে রাখতে দেননি সুধার বাবা। ছোট্ট মেয়েকে নিয়েই রাতারাতি বাড়ি ছাড়েন সুধার মা। চলে আসেন অন্য গ্রামে। ছোট থেকেই শুধু লড়াই। জীবনসংগ্রামে লড়তে লড়তেই ফুটবলের ময়দানে চলে আসে সুধা।

India U-17 Womens Team: ফুটবলেই স্বাধীনতার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে সুধা
সুধা তিরকে। ছবি: টুইটার

| Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Oct 09, 2022 | 8:00 AM

ভুবনেশ্বর: ফুটবল মানে বিপ্লব। দেশভাগের যন্ত্রণা, বঞ্চনার শিকার- অনেক কিছুরই হাতিয়ার হয়ে ওঠে ফুটবল। জাতি, ধর্ম, বর্ণ যেখানে এক হয়ে যায়। এ রকম কত ফুটবল ম্যাচই না কত ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আছে। শুধু ফুটবল ম্যাচ কেন, ফুটবলারদের জীবনেও তো এ হেন উদাহরণ কম নেই। ভারতীয় ফুটবলের তেমনই এক উদাহরণ হয়ে নিজেকে মেলে ধরার পথে সুধা অঙ্কিতা তিরকে (Sudha Ankita Tirkey)। ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ের উঠে আসার কাহিনি শুনলে চমকে যেতে হয়। এ দেশে এখনও অনেক গ্রামে মেয়েদের জন্য রয়েছে হাজারও বিধিনিষেধ। ছেলে আর মেয়েকে এখনও অনেক জায়গায় আলাদা চোখে দেখা হয়। ক্রীড়াক্ষেত্রে মেয়েদের দেখলে এখনও তীর্যক দৃষ্টিতে তাকান কেউ কেউ। মেরি কম, পিভি সিন্ধু, লভলিনারা এ দেশের উদাহরণ হলেও, ক’জনই বা তাঁদের মতো হওয়ার জন্য নিজের মেয়েকে এগিয়ে দেন!

ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে সুধা তিরকে ফুটবলেই নিজের স্বাধীনতা খুঁজে পেয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপে ভারতীয় মহিলা দলের ফরোয়ার্ড। সুধার পায়ে ভর করেই গোলের রাস্তা খুঁজছেন ডেনার্বি। ১৭ বছরের সেই সুধার উত্থান কিন্তু মোটেই সহজ নয়।

মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ দেখেছে সুধা। স্ত্রী আর মেয়েকে নিজের বাড়িতে রাখতে দেননি সুধার বাবা। ছোট্ট মেয়েকে নিয়েই রাতারাতি বাড়ি ছাড়েন সুধার মা। চলে আসেন অন্য গ্রামে। ছোট থেকেই শুধু লড়াই। জীবনসংগ্রামে লড়তে লড়তেই ফুটবলের ময়দানে চলে আসে সুধা। আর সেখান থেকেই আজ ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুমে। দেশের জার্সিতে বিশ্বকাপে নামবে ঝাড়খণ্ডের ১৭ বছরের মেয়ে।

 

 

 

সুধার মা গ্রামের এক স্কুলে ঝাড়ুদারের কাজ করেন। চার বছরের ছোট বোন গ্রামের বিভিন্ন লোকের বাড়ি কাজ করে। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থায় ফুটবলই হয়ে উঠেছে বেঁচে থাকার ঠিকানা। জীবনসংগ্রামের কঠিন লড়াই-ই সুধাকে করে তুলেছে আরও কঠোর। সমস্ত প্রতিপক্ষই ঝাড়খণ্ডের মেয়ের সামনে তুচ্ছ।

১২ বছর বয়সে গ্রামেই ফুটবলের পাঠ শুরু হয়। গ্রামের সব ছেলেদের সঙ্গে ফুটবল খেলত সুধা। তার স্কিল দেখে গ্রামের সবাই প্রশংসা করত। মাঠে না গেলে, বাড়িতে চলে আসত গ্রামের ছেলেরা। জোর করে তাকে মাঠে খেলতে নিয়ে যেত। তখন ফুটবলের ব্যাপারে এতকিছুও জানত না সে। তবে খেলতে খেলতেই জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে যায়।

দুই বছর আগে কোলাপুরে ফেডারেশন কাপ খেলার সময়ই অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় মহিলা দলের অধিনায়ক অষ্টম ওরাওঁ আর পূর্ণিমা কুমারীর সঙ্গে দেখা হয়। ফেডারেশন কাপ চলাকালীন কপালে চোট নিয়েই খেলা চালিয়ে যায় সুধা। ওখান থেকেই পাকাপাকি ভাবে জাতীয় দলে জায়গা করে নেয় ঝাড়খণ্ডের মেয়ে।

সেনা কিংবা রেলে একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে চায় সুধা। মা আর বোনের জন্য তার এই চাকরিটা খুব জরুরি। অভাবের সংসারে আলো ফোটাতে চায় ১৭ বছরের মেয়ে। মা চায়, মেয়ে শুধু ফুটবলই খেলুক। ওই ফুটবলেই যে আছে মেয়ের বেঁচে থাকার রসদ, স্বাধীনতার ঠিকানা। বিশ্বকাপে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মরোক্কো, ব্রাজিলের গ্রুপে আছে ভারত। বিশ্ব মানচিত্রে নিজের নাম লিখে রাখার চ্যালেঞ্জ এখন সুধার সামনে।