ISL 2021-22: লক্ষ্মীকান্তর ‘হাত’ ধরে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ

TV9 Bangla Digital | Edited By: সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী

Mar 20, 2022 | 10:45 PM

গোয়ান কিপারের হাত ধরেই টাইব্রেকারে ৩-১ জিতে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল হায়দরাবাদ।

ISL 2021-22: লক্ষ্মীকান্তর হাত ধরে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ
ISL 2021-22: লক্ষ্মীকান্তর 'হাত' ধরে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ
Image Credit source: ISL Twitter

Follow Us

কেরালা ব্লাস্টার্স-১(১) : হায়দরাবাদ এফসি-১(৩)

(রাহুল ৬৭) (সাহিল ৮৮)

(টাইব্রেকারে ৩-১ চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ)

মারগাও: টাইব্রেকার আসলে মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। ওই পাঁচটা কিক অনেকের জীবন পাল্টে দেয়। বসিয়ে দেয় নায়কের আসনে। টাইব্রেকার অনেক কিপারের জীবন শেষ করে দেয়। চিরকালের জন্য। পাঁচটা কিক কেউ কেউ হয়তো অন্য ভাবে নেন। অতীতের যন্ত্রণা ভোলার জন্য। লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণির মতো। ২০১৫ সালে চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে গোয়ার মাঠেই ঘরের ছেলে যন্ত্রণায় ডুবে গিয়েছিলেন। সে দিন আর প্রতিপক্ষকে থামাতে পারেননি। কিংবা বলা উচিত, তাঁরই ভুলে ডুবেছিল গোয়া এফসি। ছ’বছর পর লক্ষ্মীকান্ত ফিরলেন। প্রবল ভাবে। গোয়ান কিপারের হাত ধরেই টাইব্রেকারে ৩-১ জিতে আইএসএল চ্যাম্পিয়ন হল হায়দরাবাদ (Hyderabad FC)। সাদার্ন ডার্বিতে প্রায় সারা ম্যাচ দাপিয়ে খেলেও শেষ পর্যন্ত দখল নিতে পারল না ট্রফির। নির্ধারিত সময়ে ফলাফল ছিল ১-১। বাকি গল্পে একা নায়ক লক্ষ্মীকান্ত।

মার্কো লেসকোভিচের প্রথম কিকটা যখন সেভ করে দিয়েছিলেন, তখনও হয়তো মনে হয়নি, আইএসএল ফাইনালের টাইব্রেকার পরই টা তাঁর নামেই লেখা থাকবে। লেসকোভিচ যে কিকটা তাঁর ডানদিকেই নেবেন, বুঝে গিয়েছিলেন কাট্টিমণি। উড়ে গিয়ে সেভ করে দেন। আর তাতেই চাপ তৈরি হয়ে যায় কেরালায়। তৃতীয় কিকেও ফের দুরন্ত হায়দরাবাদের কিপার। নিশুকুমারের প্রথম কিকটা সেভ করলেও লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য রেফারি বাতিল করে দেন। কিন্তু দ্বিতীয় কিকেও তাঁকে পরাস্ত করতে পারেননি নিশুকুমার। পর পরই জিকসনের কিকটা সেভ করেন। টাইব্রেকারে কোনও কিপার যদি তিনটে কিক সেভ করেন, তার পর আর ম্যাচের কী থাকে!

লক্ষ্মীকান্তের দুরন্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প হয়তো আইএসএল অনেক দিন শোনাবে ভারতীয় ফুটবলকে। ঠিক যেমন শোনাবে, হায়দরাবাদ ফুটবলের পুনর্জন্ম। কিংবদন্তি কোচ রহিম সাহেবের হাত ধরে যে রাজ্য ফুটবলকে ঘিরে বাঁচতে শিখেছিল। নইমুদ্দিন, মহম্মদ হাবিব, সাব্বির আলিদের মতো তারকাদের হাত ধরে যে রাজ্য এক সময় ফুটবল তৃপ্তি পেয়েছে, গত কয়েক দশক ধরে সেই হায়দরাবাদই যেন অনেক দূরে সরে গিয়েছিল ফুটবল থেকে। আইএসএল জয় নিজামের শহরে আবার নতুন করে তুলে দেবে ফুটবল জোয়ার।

ফাইনালের শুরু থেকে কিন্তু কেরালা ব্লাস্টার্স আইএসএল জয়ের স্বপ্নপূরণের জন্য নেমেছিল। ইভান ভুকোমানোভিচের টিম আইএসএল শিল্ডজয়ী জামশেদপুর এফসিকে সেমিফাইনালে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছিল। তাই ট্রফি হাতছাড়া করতে চায়নি তারা। কিন্তু একের পর এক সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হয়েছে তাদের। প্রথমার্ধেই বেশ কিছু গোলের সুযোগ পেয়ে যায় কেরালা। বল দখলের লড়াইয়ে তখন অনেক পিছনে হায়দরাবাদ। বিরতির পর আরও আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করেন হরমনজ্যোৎ খাবরারা। ৬৮ মিনিটে গোলও করে ফেলেন কেরালার ছেলে রাহুল কেপি। মাঝমাঠে বল পেয়ে আলভারো ভাজকোয়েস ডানপ্রান্তে রাহুলের কাছে পাঠিয়ে দেন। তাঁর নেওয়া শট থেকে গোল এল কিছুটা হায়দরাবাদ কিপার লক্ষ্মীকান্ত কাট্টমণির ভুলে। রাহুলের শট ভালো করে গ্রিপই করতে পারেননি গোয়ান গোলকিপার। সেই ভুল টাইব্রেকারে মিটিয়ে নিলেন লক্ষ্মীকান্ত।

০-১ পিছিয়ে থাকা হায়দরাবাদ আবার খেলায় ফিরল ম্যাচ শেষ হওয়ার ২ মিনিট আগে। ৮৮ মিনিটে হায়দরাবাদের হোলিচরণ নার্জারি সেন্টার তোলেন কেরালার বক্সে। কিন্তু প্রতিপক্ষের এক ফুটবলার বল ক্লিয়ার করে দেন। কিন্তু বল পেয়েই বড় বক্সের ঠিক মাথা থেকে জোরালো ভলি গোল তুলে নেন সাহিল টোভারার। এ বারের আইএসএলের অন্যতম সেরা গোল। সবচেয়ে বড় কথা হল, যে সময় টিম হারছে, খেলার আর মাত্র ২ মিনিট বাকি, ঠিকই তখন জ্বলে উঠলেন সাহিল। ৯০ মিনিটে অবশ্য খেলা শেষ করে ফেলতে পারত কেরালা। ভাজকোয়েস যদি নিজেই গোল করে ফেলতে পারতেন। যদি বাঁ দিক থেকে ভেসে বলটা তিনি ঠিকঠাক হেড করতে পারতেন, তা হলে ম্যাচ ইনজুরি টাইমেই শেষ হয়ে যেতে পারত। ভাসকোয়েস অবশ্য ফাইনাল ম্যাচে সে ভাবে ছাপ রাখতে পারেননি। চেষ্টার ত্রুটি ছিল না তাঁর। কিন্তু যে ভাবে তিনি সারা আইএসএল জুড়ে প্রতিপক্ষকে, ফাইনালে সেই ঝাঁঝ দেখাতে পারেননি।

১২০ মিনিট পর্যন্ত ফলাফল থাকল ১-১-ই। দুটো টিমই চাইছিল ফাইনালের হিসেব টাইব্রেকারে করে নিতে। কেরালা কি আর জানত, লক্ষ্মকান্ত কাট্টিমণির হাতেই থমকে যাবে তাদের স্বপ্ন!

Next Article