কলকাতা: ঝাড়খণ্ডের গুমলা জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম গোরাতোলিতে বাস ওরাওঁ পরিবারের। হীরালাল ওরাওঁ এবং তারা দেবীর টালির চালের মাটির বাড়ি। গ্রামের পথঘাট এখনও কাঁচা। একটা সময় মাওবাদীদের আতঙ্কে থরথর করে কাঁপত এই এলাকা। আতঙ্ক এখনও রয়েছে। নিত্যদিনের জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত গোরাতোলির ওরাওঁ পরিবারের সদস্যরা আজ সবার নজরে। সৌজন্যে বাড়ির মেয়ে অষ্টম ওরাওঁ (Astom Oraon)। পদে পদে বাধা, চূড়ান্ত অস্বচ্ছল পরিবারে বেড়ে ওঠা অষ্টমের কাঁধেই দেশের দায়িত্ব। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর মঙ্গলবার ভুবনেশ্বরের কলিঙ্গ স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে ফিফা অনূর্ধ্ব ১৭ মেয়েদের বিশ্বকাপ (Fifa U17 Women’s World Cup)। নীল জার্সি গায়ে দেশের মেয়েরা মাঠ মাতাবে। নেতৃত্বে থাকবে অষ্টম। প্রতিপক্ষ শক্তিশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
কয়েকমাস আগে শিরোনামে উঠে আসে গোরাতোলি গ্রাম। সেবার মেয়েদের সিনিয়র টিমে নাম ঘোষিত হয় অষ্টমের। গত সপ্তাহে এই লাইমলাইটের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। যখন অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অধিনায়ক ঘোষণা করা হয় অষ্টমকে। শুধু ওরাওঁ পরিবারই নয়, গোরাতোলির আদিবাসী মানুষদের ভরসার জায়গা অষ্টম। তাঁর সাফল্য মানে ঝাড়খণ্ডের এই প্রত্যন্ত গ্রামের উন্নতির দরজা খুলে যাওয়া। গুমলা জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই অষ্টমের নামাঙ্কিত একটি স্টেডিয়াম তৈরির কথা ঘোষণা করেছে। ব্যয় হবে ২ কোটি টাকা। গোরাতোলি গ্রামে যাওয়ার কাঁচা পথটাও পাকা হবে। গুমলার ডেপুটি কমিশনার খোদ অষ্টমের বাড়ি গিয়ে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন।
ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিশ্বকাপের মতো বড় মঞ্চে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ একদিনে আসেনি। পরিবারে চার বোন, এক ভাই। ছোট থেকে আধপেটা খেয়ে থাকাটাই যেন অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল। পরিবারের তৃতীয় সন্তান অষ্টমের ফুটবলের প্রতি ঝোঁকের কথা আজ মনে পড়ে যাচ্ছে হীরালাল, তারা দেবীদের। ২০১৬ সালে হাজারিবাগে রাজ্য সরকারের আবাসিক ফুটবল সেন্টারে যোগ দেওয়ার সুযোগ পায়। ‘তেমন সুযোগ সুবিধা ছাড়াই এক প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ে যখন জাতীয় দলের অধিনায়ক হয়, সেটাই তার সংগ্রামকে তুলে ধরে।’ বলছিলেন কিশোরী ক্যাপ্টেনের হাজারিবাগ সেন্টারের কোচ সোনি কুমারী। গর্বে আজ বুক ভরে যাচ্ছে তাঁর।
মেয়ের ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে যেতে পারেনি অষ্টমের পরিবার। বাড়িতে ছিল না টিভি। তাই জেলা প্রশাসনের তরফে কয়েকদিন আগেই অষ্টমের বাড়িতে বসে গিয়েছে ঝাঁ চকচকে টেলিভিশন সেট। ঘরের মেয়েকে সাফল্য কামনায় সন্ধ্যে থেকেই নতুন টিভি সেটের সামনে বসে পড়বে ওরাওঁ পরিবার। আজ যে তাঁদেরও মুক্তির দিন।