প্রতিশ্রুতিই সার, পেট চালাতে ইটভাঁটায় কাজ আন্তর্জাতিক ফুটবলারের

২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৮ ভারতীয় মহিলা দলের হয়ে ভুটানে টুর্নামেন্ট খেলতে যান সঙ্গীতা। সেই বছর অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে সঙ্গীতা ঠাঁই পান থাইল্যান্ডের টুর্নামেন্টেও। ভালই চলছিল জীবন। লকডাউনে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। ফুটবল দূর অস্ত, পেট চলবে কি করে তাই ভেবেই কুল কিনারা পায় না সোরেন পরিবার।

প্রতিশ্রুতিই সার, পেট চালাতে ইটভাঁটায় কাজ আন্তর্জাতিক ফুটবলারের
পেটের দায়ে ইটভাটার শ্রমিক আন্তর্জাতিক ফুটবলার সঙ্গীতা সোরেন
Follow Us:
| Updated on: May 23, 2021 | 1:12 PM

রাঁচিঃ স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। সেই স্বপ্নকে ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ দিতেও তো দোষ হয় না। কিন্তু কঠিন পরিস্থিতি যখন স্বপ্নটাকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়, তখন জীবনের চরম কষ্ট হয় বৈকি। আর সেই স্বপ্ন যেখন হয় দেশের জন্য। তখন সেই স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা যে তীব্রতর হয়। সেই তীব্রতা আরও বাড়ে যখন রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি দিয়েও কার্যকরী করেনা। এই ঘটনার ভারতের (INDIA) মত দেশে ভুরিভুরি। কত যে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। এবার সেই উদাহরণে নতুন সংযোজন ভারতীয় মহিলা দলের ফুটবলার(Indian women football team) সঙ্গীতা সোরেন (Sangeeta Soren)। লকডাউনে (LOCKDOWN) ফুটবলের স্বপ্ন শেষ। দিন আনা দিন খাওয়া সোরেন পরিবারের এই কৃতী মেয়ে এখন দিন গুজরান করে ইটভাটায় (Brick Kiln)কাজ করে। নামমাত্র মজুরিতে। যেই খবর প্রকাশ হতেই চাঞ্চল্য ভারতীয় ক্রীড়ামহলে।

ঝাড়খন্ডের ধানবাদের প্রত্যন্ত গ্রাম বাঁশমুড়ি। যেখানে উন্নত ভারতের সামান্য সুযোগ সুবিধাটুকুও তেমন নেই। হাজার প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে স্বপ্নকে বুনতে শুরু করেছিলেন সঙ্গীতা সোরেন। এই মেয়ে আর ৫টা মেয়ের মত নয়। রান্নাবাটি খেলা নয়। বরং ফুটবলের স্কিলই ছোটবেলা থেকে টেনেছে সঙ্গীতা সোরেনকে। প্রত্যন্ত বাঁশমুড়ি গ্রাম থেকে নিজের চেষ্টায় ধীরে ধীরে মহিলা দলে জায়গা করে নেওয়া। সাফল্য এসেছিল টিনএজেই। ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব ১৮ ভারতীয় মহিলা দলের হয়ে ভুটানে টুর্নামেন্ট খেলতে যান সঙ্গীতা। সেই বছর অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে সঙ্গীতা ঠাঁই পান থাইল্যান্ডের টুর্নামেন্টেও। ভালই চলছিল জীবন। লকডাউনে সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। ফুটবল দূর অস্ত, পেট চলবে কি করে তাই ভেবেই কুল কিনারা পায় না সোরেন পরিবার। সঙ্গীতার বাবা দৃষ্টিশক্তিহীন। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সঙ্গীতার দাদার রোজগার দিনমজুরি করে। সংসার চলেনা।

বাধ্য় হয়ে গত বছর সঙ্গীতা সোরেন সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যের আর্তি জানিয়ে ভিডিও পোস্ট করেন। যেই ভিডিও ভাইরাল হতেই মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন তাঁকে আশ্বাস দেন সবরকমের সাহায্যের। ব্যস, ওটুকুই। প্রতিশ্রুতিই সার। মেলেনি কোনওরকম সাহায্য়। শুধু কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, স্থানীয় বিধায়কও প্রতিশ্রুতির পর ফিরেও তাকাননি সঙ্গীতার দিকে। কিছুদিন অপেক্ষার পর এবার পেটের তাগিদে কাজ খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে সঙ্গীতা। স্থানীয় ইটভাটায় দিনমজুরের কাজ নেয় ভারতীয় ফুটবলের প্রতিশ্রুতিমান এই ফুটবলার। কেমন আছে সঙ্গীত, কেউ খবরটুকুও নেইনি।

                                                    আরও পড়ুনঃ অবশেষে পুলিশের জালে অলিম্পিয়ান সুশীল

রবিবার সঙ্গীতা সোরেনের খবর চাউর হতেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় তা বাইরাল হয়ে যায়। টনক নড়ে প্রশাসনের। আলোড়ন পড়ে যায় ক্রীড়ামহলে। তড়িঘড়ি জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের পক্ষ থেকে ঝাড়খন্ডের মুখ্যসচিবকে পাঠানো হয়েছে চিঠি। সঙ্গীতাকে সাহায্য করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে সেই চিঠিতে। একই চিঠি পাঠানো হয়েছে ভারতয়ী ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতিকেও। গতবার প্রতিশ্রুতিতে কাজ হয়নি। এবার কি হবে? অপেক্ষায় ক্রীড়ামহল।