মারগাও : পরতে পরতে রোমাঞ্চ যেন। তিন পেনাল্টির ম্য়াচ। প্রথম তিন গোলে জড়িয়ে এক বিদেশি। আর টাইব্রেকারে নায়ক এক গোলকিপার। ফাইনাল এমনই তৃপ্তিদায়ক হয় অনেক সময়। যখন হয়, তখন চ্য়াম্পিয়ন টিমের উৎসবের বহর বাড়ে অনেকখানি। মারগাওয়ের গ্য়ালারিতে সবুজ মেরুন আবিরে মাতলেন সমর্থকরা। ‘রিমুভ এটিকে’ আন্দোলন ম্য়াচের মিনিট খানেক আগেও শোনা যাচ্ছিল। ম্য়াচ যদি তৃপ্তি দেয়, তা হলে বিতর্কও অনেক সময় দূরে থাকে। প্রীতম কোটাল, হুগো বোমাস, দিমিত্রি পেত্রাতোস এবং বিশাল কাইথ। সাফল্য়ের নতুন নাম লিখে গেলেন। সপ্তাহখানেক আগেও হিসেবে ছিলেন না যাঁরা, তাঁরাই আরব সাগরের পারে ভারতসেরা।
প্রস্তুতি ছিল সবকিছুরই। ফতোরদা স্টেডিয়ামের গ্য়ালারিতে কলকাতা থেকে যাওয়া সমর্থকের সংখ্য়া ৫ হাজারেরও বেশি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর মুহূর্তেই হুয়ান ফেরান্দোর টিমের গায়ে উঠল মেরুন জার্সি। তাতে লেখা ‘চ্য়াম্পিয়ন’। আর স্প্যানিশ কোচ উড়লেন আকাশে। চ্য়াম্পিয়ন হওয়ার পর অধিনায়ক প্রীতম কোটাল বলেন, ‘সেমিফাইনালটাই আমাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ভরে দিয়েছিল। ঘরের মাঠে হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে যে ভাবে জিতি, মনে হয়েছিল, ফাইনালে দারুণ কিছু করে দেখাতে পারি। পুরো টিম এই একটাই বিশ্বাস নিয়ে গোয়ায় পা দিয়েছিল। ভালো লাগছে, স্বপ্নপূরণ করতে পেরেছি। মরসুমের শুরু থেকে যাঁরা আমাদের পাশে থেকেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্য়বাদ। এই সাফল্য়ের শরিক ওঁরাও।’
গোল, পাল্টা গোল, পেনাল্টি, পাল্টা পেনাল্টি। লহমায় যেন পাল্টে যাচ্ছিল স্কোরলাইন। এমন উত্তেজক ম্য়াচে চাপ যেমন ঢুকে পড়ে, তেমনই উৎকণ্ঠা অনেক সময় নড়িয়ে দেয় বিশ্বাসের ভিত। কার্ল ম্য়াকহিউয়ের তেমনই মনে হয়েছিল। ‘বিশ্বাস করুন, দ্বিতীয় গোলটার পর কিছুক্ষণের জন্য় হলেও হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, মুঠো থেকে ম্য়াচটা বোধহয় বেরিয়েই গেল। তবু সবাই মিলে একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিলাম। ১-২ স্কোর লাইনটা পাল্টে দেওয়ার মতো সময় আমাদের হাতে ছিল। ওই সময়টাই কাজে লাগিয়েছি। এইরকম একটা ফাইনাল খেলার পর তৃপ্তি তো হবেই।’
বড় বিমর্ষ দেখাচ্ছিল সুনীল ছেত্রীকে। হয়তো কেরিয়ারের শেষ আইএসএল ফাইনাল খেলে ফেললেন তিনি। ভারতের সর্বকালের অন্য়তম সেরা ফুটবলারের চোখও হয়তো ভিজে আসছিল। ০-১ থেকে ১-১ করেছিলেন পেনাল্টিতে। কিন্তু চ্য়াম্পিয়নের ট্রফি তো একটাই। তাতে তো আর সমতা হয় না। আক্ষেপ থাকবে সুনীলের, এত কাছে এসেও শেষটা ঝলমলে হল না। ম্য়াচের ঠিক পরেই পেত্রাতোস বলছিলেন, ‘দুটো টিমই অসম্ভব চাপের মধ্য়ে পারফর্ম করেছে। আমি গোল করলাম কিনা সেটা বড় কথা নয়। টিম ট্রফি জিতেছে এটাই সবচেয়ে তৃপ্তির।’