দোহা : কাতার বিশ্বকাপে (Qatar World Cup 2022) প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হার বিরাট ধাক্কা ছিল আর্জেন্টিনা শিবিরে। ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর হার। তাও আবার সৌদি আরবের কাছে। একটা হারেই আর্জেন্টিনা (Argentina) সমর্থকদের আত্মবিশ্বাস তছনছ করে দিয়েছিল। পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন মেসি। শেষ অবধি হার ১-২ ব্যবধানে। প্রশ্ন উঠেছিল, মেসি ছাড়া কি আর্জেন্টিনা দলে গোল করার কেউ নেই? নকআউটের আগে গ্রুপ পর্বই নকআউট হয়ে দাঁড়ায় আর্জেন্টিনার কাছে। বাকি দু-ম্যাচ জিততেই হত। মেসি যেমন গোল করেছেন, তেমনি করিয়েছেন। গত দুই ম্যাচে ২-০ ব্য়বধানে জয় আর্জেন্টিনার। মেসি আর একা নন। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে এক গোলেই নায়ক হয়েছিলেন এনজো ফার্নান্ডেজ। পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় গোলটি আর এক তরুণ জুলিয়ান আলভারেজের (Julian Alvarez)। কে এই জুলিয়ান? তুলে ধরল Tv9Bangla।
জুলিয়ান আলভারেজ জন্ম আর্জেন্টিনার ক্যালচিনে। বাবা গুস্তাভো এবং মা মারিয়ানা। ছেলেবেলাতেই তার মধ্যে ফুটবল প্রতিভা খুঁজে পায় জুলিয়ানের পরিবার। সন্ধান মেলে স্থানীয় এক কোচ হুগো রাফায়েলের। মজার বিষয় হল, হুগো রাভায়েলের একটি পিজ্জা এ সবের দোকান ছিল। মিউনিসিপ্যালিটিতে চাকরি করতেন। সঙ্গে একটি ফুটবল স্কুলও চালাতেন। সেই স্কুলেই ফুটবলে হাতেখড়ি জুলিয়ানের। পরবর্তীতে অ্যাথলেটিকো ক্যালচিনে খেলার সুযোগও হয় হুগো রাফায়েলের প্রচেষ্টাতেই। স্বপ্ন ভঙ্গের কাহিনিও রয়েছে। স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ট্রায়ালের ডাক আসে। জুলিয়ানের প্রতিভা মুগ্ধ করে রিয়াল মাদ্রিদ কর্তাদের। কিন্তু ১৩ বছরের জুলিয়ানকে সই করানোর ক্ষেত্রে আইনি সমস্যায় পড়ে রিয়াল মাদ্রিদ। জুলিয়ান অবশ্য সেই সময়ের স্বপ্নগুলো সত্যি করেন। সের্গিও ব়্যামোস, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, গঞ্জালো হিগুয়েনের মতো তারকা ফুটবলারদের কাছ থেকে দেখার সুযোগ পান। তাঁদের সঙ্গেও ছবিও তোলেন। যদিও একরাশ হতাশা নিয়েই ফিরতে হয়। নতুন করে স্বপ্ন দেখা বারণ নয়। জুলিয়ানও হাল ছাড়েননি।
আর্জেন্টিনায় খালি হাতে ফিরলেও তাঁকে নিতে আগ্রহী ছিল বোকা জুনিয়র্স। তাঁর পরিবার রাজি হয়নি। অ্যাথলেটিক ক্যালচিনেই থাকেন। যে ক্লাব থেকে ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনার উঠে আসে সেই আর্জেন্টিনোস জুনিয়রেও ট্রায়াল দেন। তবে ১৫ বছর বয়স অবধি ক্যালচিনের ক্লাবেই ছিলেন। ঘরকুনো জুলিয়ান আর্জেন্টিনার বড় অ্যাকাডেমিতে খেলার সুযোগ পান। অবশেষে বাবা মায়ের অনুমতি পেতে যোগ দেন রিভারপ্লেটে। তবে বাড়ির বাইরে থাকা যাঁর পছন্দ নয়, সেই জুলিয়ানকে নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়ে ক্লাব। তাঁকে খুশি রাখার উপায় খুঁজে বের করে ক্লাবই। জুলিয়ানের পছন্দের জিনিসপত্র, বাবা-মায়ের ছবি তাঁর লকারে থাকত। এরপর রিভারপ্লেটের সিনিয়র দলে খেলার সুযোগ। ছেলেবেলায় জুলিয়ানের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল, লিও মেসির সঙ্গে বিশ্বকাপ খেলার। তার আগে ২০২১ কোপা আমেরিকায় খেলেছেন। এ বার বিশ্বকাপেও খেলার সুযোগ, মেসির সঙ্গে, এক দলে। আর সেই স্বপ্নের পথে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পরিবারের সঙ্গে যাঁর অবদান সবচেয়ে বেশি সেই হুগো রাফায়েলকেই বা ভোলেন কীভাবে! ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত হতেই ছেলেবেলার গুরুকে বিশেষ উপহার দেন জুলিয়ান। একটি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন কোচকে। তাঁর সাফল্যের অনেকটা কৃতিত্ব ম্যাঞ্চেস্টার সিটি কোচ পেপ গুয়ার্দিওলারও। এ বছরই জানুয়ারি উইন্ডোতে ম্যান সিটিতে সুযোগ পান জুলিয়ান।
সেই ঘরকুনো জুলিয়ানের স্বপ্ন এখন, বিশ্বকাপ জেতা। মেসির সঙ্গে, মেসির জন্য। রিভারপ্লেটে থাকার সময়ই তাঁকে ডাকা হত ‘লা আরানা’। অর্থাৎ, স্পাইডার।