NED vs ARG FIFA Match Report: ব্রাজিলের বিদায়ের রাতে টাইব্রেকারে রুদ্ধশ্বাস জয়, সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা
FIFA World Cup Match Report, NETHERLANDS vs ARGENTINA : নহেল মোলিনা এবং লিওনেল মেসির গোলে ২-০ এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ৮৩ মিনিটে ম্যাচের রং বদল। অ্যাডেড টাইমের শেষ মুহূর্তে বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিকে সমতা ফেরায় নেদারল্যান্ডস। শেষ অবধি টাইব্রেকারে ডাচদের ডজ করে শেষ চারে আর্জেন্টিনা।
দোহা : লুসেইল স্টেডিয়ামে রাত ১টা পেরিয়ে গিয়েছে। ডান্স করছেন মেসি। একই সঙ্গে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ল আর্জেন্টিনা গ্যালারিও। রুদ্ধশ্বাস, ম্যারাথন ম্যাচ জিতে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হল আর্জেন্টিনার। ব্রাজিলের বিদায়ের রাতে, সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনা। হয়তো নির্ধারিত সময়ের পরই আনন্দে মাততে পারতেন মেসি এবং আর্জেন্টিনা সমর্থকরা। নহেল মোলিনা এবং লিওনেল মেসির গোলে ২-০ এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ৮৩ মিনিটে ম্যাচের রং বদল। অ্যাডেড টাইমের শেষ মুহূর্তে বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিকে সমতা ফেরায় নেদারল্যান্ডস। শেষ অবধি টাইব্রেকারে ডাচদের ‘ডজ’ করে শেষ চারে আর্জেন্টিনা। ম্যাচের বিস্তারিত রিপোর্ট TV9Bangla-য়।
একটা লাইন যেন প্রতিটা ম্যাচের পরই লেখা যায়, মেসি এ বার একা নন। তিনি গোল করতে না পারলে অন্য কেউ রয়েছেন। জুলিয়ান আলভারেজ, এনজো ফার্নান্ডেজ, ম্যাক অ্যালিস্টাররা সেটা করে দেখিয়েছেন। এ দিন যেমন আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মোলিনা। মেসি যেখানেই যাবেন, তাঁকে ঘিরে রাখা হবে, এমনটাই প্রত্যাশিত। বল পজেশনে অনেকটাই এগিয়ে ছিল নেদারল্যান্ডস। এর মধ্যেও গ্যাপ খুঁজে নিতে পারেন, তাঁর নাম লিও মেসি। ঠিক যেন জ্যামিতি মেনে খেলা। ৩৫ মিনিটে লিওনেল মেসির অনবদ্য ফরোয়ার্ড পাস। নহেল মোলিনার গড়ানো শট। মোলিনার প্রথম আন্তর্জাতিক গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। মেসির থেকে পাস আসা মানেই বাড়তি স্নায়ুর চাপ। মোলিনা সেই চাপ সামলে নিলেন। মুহূর্তটা তাঁর এবং মেসির। প্রথমার্ধে কিছু অস্বস্তির ঘটনাও আর্জেন্টিনা শিবিরে। টেকনিকাল এরিয়া থেকে বেরিয়ে রেফারিকে মন্তব্য করায় হলুদ কার্ড আর্জেন্টিনা কোচ স্কালোনিকে। মার্কোস আকুনা, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো হলুদ কার্ড দেখেন। সেমিফাইনালে পাওয়া যাবে না আকুনাকে। ম্যাচে কার্ডের নজির গড়েন স্প্যানিশ রেফারি আন্তনিও মাতেও লাহো। সবমিলিয়ে ১৫টির বেশি কার্ড দেখালেন!
আর্জেন্টিনা ২ (মোলিনা ৩৫’, মেসি ৭৩’-পেনাল্টি)
নেদারল্যান্ডস ২ (ওয়েহস্ট ৮৩’, ৯০+১১’)
টাইব্রেকার
আর্জেন্টিনা ৪-৩ নেদারল্যান্ডস
বিরতিতে ১-০ এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ম্যাচে ১ গোলের লিড কখনোই স্বস্তির নয়। আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে ২ গোলের লিডও স্বস্তি দেয়নি। মেসি অ্যাসিস্ট করেছিলেন, তাঁর কাছে গোলের প্রত্যাশাও ছিল। আকুনাকে বক্সের কোনায় বল ছাড়াই ফাউল, পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। মেসি পেনাল্টির জন্য প্রস্তুত হতে কিছুটা যেন আশঙ্কাও কাজ করছিল! প্রথম ম্যাচে পেনাল্টি থেকে গোল করেছিলেন, তেমনই পোল্যান্ড গোলরক্ষক মেসির পেনাল্টি বাঁচিয়ে দেন। হয়তো সেই থেকেই আশঙ্কা। ডাচ গোলরক্ষক নোপার্ট অবশ্য পেনাল্টি বাঁচাতে পারলেন না। ৭৩ মিনিটে বিশ্বকাপে দশম গোলে আর্জেন্টিনা কিংবদন্তি বাতিস্তুতাকে ছুঁয়ে ফেলেন মেসি। আর্জেন্টিনার অস্বস্তি বাড়ায় পরিবর্ত হিসেবে নামা ডাচ স্ট্রাইকার ওয়েহস্ট। ৮৩ মিনিটে বর্গোইসের সেন্টারে অনবদ্য হেড ওয়েহস্টের। ম্যাচে উত্তপ্ত পরিবেশও তৈরি হয় লিয়ান্দ্রো পারেদেসের সৌজন্যে। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে অপ্রয়োজনীয় ভাবে তা শট মারেন নেদারল্যান্ডস রিজার্ভবেঞ্চে। মেজাজ হারান নেদারল্যান্ডস ফুটবলাররা। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। সেখানেই যেন মনসংযোগে ব্যাঘাত ঘটে আর্জেন্টিনার। শেষ দিকে স্নায়ুর চাপে ভুগছিলেন। ১০ মিনিট অ্যাডেড টাইম দেওয়া হয়। সেই দশ মিনিটের শেষ মুহূর্তে বুদ্ধিদীপ্ত ফ্রি-কিকে গোল নেদারল্যান্ডসের। কুপমেনিসের গড়ানো ফ্রি-কিক, ওয়াল থেকে বল নিয়ে গোলে শট ওয়েহস্টের। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কিছু সুযোগ তৈরি করে আর্জেন্টিনা। যদিও কাজে লাগাতে ব্যর্থ। শেষ অবধি টাইব্রেকারে গড়ায় ম্যাচ।
২০১৪ সালেও নেদারল্যান্ডস বনাম আর্জেন্টিনা ম্যাচের ফল হয়েছিল টাইব্রেকারেই। জিতেছিল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের মঞ্চে এই ম্যাচের আগে টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার পরিসংখ্যান বলছিল, পাঁচটির মধ্যে ৪টি জয় আর্জেন্টিনার। অন্য দিকে, পেনাল্টি শুটআউটে মাত্র ১ বারই জিতেছে নেদারল্যান্ডস। পরিসংখ্যান ভালো করল আর্জেন্টিনা। তাদের গোলে অভিজ্ঞ এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। উল্টো প্রান্তে প্রহরী নোপার্ট। কাতার বিশ্বকাপ দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয়েছে তাঁর। প্রথম দুটি শট বাঁচিয়ে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রেখেছিলেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। এনজো ফার্নান্ডেজ টাইব্রেকার মিস করায় কিছুটা হতাশা ঘিরে ধরেছিল। টাইব্রেকারে দশম শট নেন লাওতারো মার্টিনেজ। গোল করলেই আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত। এ বারের বিশ্বকাপে বেশ কিছু গোলের সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি লাওতারো। সবচেয়ে মূল্যবান গোলটি করলেন টাইব্রেকারে। তাঁর শটেই ৪-৩ ব্যবধানে জয় এবং সেমিফাইনাল নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার।