কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
যদি সেরা প্লেয়ার হন, ক্লাবকে সাফল্য দিতে হবে। চ্যাম্পিয়ন করতে হবে। তবেই শ্রেষ্ঠত্ব মানবে দুনিয়া! ধারাবাহিক ব্যর্থতার সময় এ সবই তো শুনেছেন। ক্যাপ্টেন্সি খোয়ানোর সময় এ সবই শুনেছেন। তবু থেকে গিয়েছেন। যদি ভরসা দিতে পারেন, বিশ্বাস করাতে পারেন, সাফল্য এনে দিতে পারেন। গত ১৫ বছরে যতবার মরসুম শুরু হয়েছে, ততবারই এই বিশ্বাসেই জোর দিয়েছেন বিরাট কোহলি (Virat Kohli)। কিন্তু অতীত পাল্টাতে পারেননি। ১৬তম আইপিএলে (IPL 2023) নামার আগে বিরাট আরও একবার একই ভাবনায় আচ্ছন্ন। কী আশ্চর্য, তিনি আর সুনীল ছেত্রীর (Sunil Chhetri) যেন একই মেরুতে বাস। সুনীল আই লিগ পেয়েছিলেন। আইএসএলও। গোল করেছেন ঝুরিঝুরি। সেরা প্লেয়ার, সেরা স্ট্রাইকার হয়েছেন। কিন্তু খেতাব একবারই। হয়তো এ বারই তাঁর শেষ আইএসএল (ISL)। হয়তো এটাই শেষ ফাইনাল। বিরাট আইপিএল পাননি। কেরিয়ারের প্রান্তিক স্টেশনে এসে দ্বিতীয় আইএসএলটা সুনীল কি পাবেন? ফাইনালের আগে কী ভাবছেন বেঙ্গালুরু এফসির ক্যাপ্টেন? বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla– র এই প্রতিবেদনে।
বেঙ্গালুরু এফসিতে শুরুর দিন থেকে আছেন সুনীল ছেত্রী। আধুনিক ফুটবল পরিকাঠামোকে হাতিয়ার করেই ভারতীয় ফুটবলে এসেছে বেঙ্গালুরু এফসি। প্রথম বছরেই কর্পোরেট টিমকে আই লিগ জেতান সুনীল ছেত্রী। মাঝে মুম্বই সিটি এফসিতে এক বছর আইএসএল খেললেও ফের লোনে ফিরে আসেন পুরনো ক্লাবে। তবে বেঙ্গালুরুকে একবারই আইএসএল খেতাব দিয়েছিলেন সুনীল। এ বার সেই বহুমূল্য ট্রফিটা দ্বিতীয় বার জিততে চান ভারতীয় ফুটবলের আইকন। আইএসএল ফাইনালের ঠিক দিন তিনেক আগেই ভারতীয় দলের কোচ ইগর স্টিম্যাচ সুনীলের অবসর জল্পনা উস্কে দেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত এটাই সুনীল ছেত্রীর শেষ মরসুম।’ আর এই মন্তব্যকে একদমই ভালো ভাবে নেননি জাতীয় দলের জার্সিতে ৮৪ গোল করা স্ট্রাইকার। আইএসএল ফাইনালের আগেও জোর গলায় সুনীল বলে গেলেন, ‘আমি এখনও যথেষ্ট ফিট আর সুন্দর দেখতে।’ কথাটা মজার ছলে নয়, বরং গুরুত্ব দিয়েই বললেন তিনি। জাতীয় দলের কোচের মন্তব্য যে ভালো ভাবে নেননি ক্যাপ্টেন, তা তাঁর মন্তব্যেই স্পষ্ট। বোঝা গেল মেগা ফাইনালের আগে তিনি বেশ তেতে আছেন। শনিবারের জন্য হয়তো বাকি জবাবটা তুলে রাখলেন সুনীল ছেত্রী।
ভারতীয় ফুটবলে সুনীলের যাত্রা শুরু মোহনবাগানে। সুব্রত ভট্টাচার্য তুলে এনেছিলেন তাঁকে। তিন বছর সবুজ-মেরুনে খেলার পর জেসিটি, ইস্টবেঙ্গল, ডেম্পো, ইউনাইটেড স্পোর্টস ঘুরে আবার ফিরে এসেছিলেন মোহনবাগানে। তবে ১ বছরের বেশি খেলেননি। বিদেশের ক্লাবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন সুনীল। শনিবার আইএসএল খেতাব জয়ের সামনে বাঁধা সেই সবুজ-মেরুন। প্রথম কোচ সুব্রত ভট্টাচার্য আবার তাঁর শ্বশুরমশাই। ময়দানের বাবলুদা শনিবারের ম্যাচে ধর্মসংকটে পড়ে গিয়েছেন। একদিকে মোহনবাগান ক্লাব, অন্যদিকে তাঁর প্রথম ছাত্র এবং জামাই সুনীল। ভারতীয় ফুটবলের আইকন অবশ্য জানাচ্ছেন, তাঁর স্ত্রী সোনম প্রথম দিন থেকেই তাঁর পাশে। যে ক্লাবেই তিনি খেলুন, সোনমের সমর্থন সেখানেই।
শুধু সুনীল কেন; রয় কৃষ্ণা, প্রবীর দাসরা ছিলেন এটিকে মোহনবাগানের ঘরের ছেলে। সন্দেশ ঝিঙ্গানও গত বছর খেলেন সবুজ-মেরুনে। প্রত্যেকেই তাঁরা এ বছর খেলছেন বেঙ্গালুরুতে। মরসুমের শুরুতেই রয় কৃষ্ণা, প্রবীরদের ছেড়ে দেয় মোহনবাগান। সেই যন্ত্রণা ভোলেননি তাঁরা। শনিবারের ফাইনাল তাই রয় কৃষ্ণা, প্রবীরদের কাছে এক প্রকার বদলারও। মোহনবাগানের সঙ্গে সংযুক্তিকরণের আগে এটিকের হয়ে আইএসএল জিতেছেন রয় কৃষ্ণা, প্রবীর দাস। এ বার বেঙ্গালুরুকে আইএসএল জেতাতে চান তাঁরা। জাভি হার্নান্ডেজ, পাবলো পেরেজ, অ্যালান কোস্তারাও মুখিয়ে আছেন। তরুণ স্ট্রাইকার শিবশক্তিও ভরসা দিচ্ছেন গ্রেসনকে। একেবারে সেয়ানে-সেয়ানে টক্করের অপেক্ষায় ভারতীয় ফুটবল। শনি রাতের পর ফাতোরদার আকাশে উজ্জ্বল নীল রং ছড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় বেঙ্গালুরু সমর্থকরা।
রং ছড়াতে চান সুনীলও। বিরাট কোহলি পর্যন্ত তাঁর ভক্ত। দু’জনেই যেমন দিল্লি ছেলে, দু’জনেই তেমন বেঙ্গালুরুর হয়ে স্বপ্ন দেখেন ভারতসেরা হওয়ার। বিরাট সেঞ্চুরি করলে সুনীল অভিনন্দন জানান। দেশের হয়ে গোল করলে বিরাট শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান ভারতীয় টিমের অধিনায়ককে। ফুটবল আর ক্রিকেট— দেশের দুই সেরা তারকাতে আচ্ছন্ন, নির্ভরশীল। বিরাট আইপিএল জিতবেন কিনা, মাস কয়েক পর জানা যাবে। সুনীল দ্বিতীয় আইএসএল জিতবেন? বেঙ্গালুরু জেনে নেবে চব্বিশ ঘণ্টা পর!