
নয়াদিল্লি: যে কোনও ট্রফি বা পদকই দেশকে গর্বিত করে। সোনা জয় বা বিশ্ব জয় করলে তো সেই পদক বা ট্রফির মূল্য অনেকাংশেই বেড়ে যায়। ১৯৭৫ সালে হকি বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফেরার পর বিমানবন্দরে চার ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল খেলোয়াড়দের। শুনলে রীতিমতো চমকে যেতে হয়। সেই স্মৃতি রোমন্থনে অশোক কুমার। কিংবদন্তি হকি প্লেয়ার ধ্যানচাঁদ পুত্রের মুখে উঠে এল সেই কথাই। বিশ্ব জয় করে এসেও বাড়ি ফিরতে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল বিশ্বজয়ীদের। ১৯৭০ সাল থেকে ভারতীয় হকিতে সোনালি সময় শুরু হয়। সেই সময় বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সাফল্য পেয়েছিল ভারতীয় হকি দল। ১৯৭২ মিউনিখ অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পেয়েছিল ভারত। সেই দলেরও সদস্য ছিলেন অশোক কুমার ধ্যানচাঁদ। ১৯৭৩ সালে হকি বিশ্বকাপের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের কাছে হারে ভারত। এক সাক্ষাত্কারে ৪৮ বছর আগের স্মৃতি উস্কে দিলেন ভারতীয় প্রাক্তন হকি তারকা। ১৯৭৫ সালে ফাইনালে পাকিস্তানকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ভারত। ওই একবারই হকি বিশ্বকাপ জিতেছে ভারত। এরপর আর কখনও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
অশোক ধ্যানচাঁদ সেই স্মৃতির রোমন্থনে হাঁটতে গিয়ে বলেন, ‘দেশের হয়ে খেলার সময় চিরকাল নিজের সেরাটা দিয়ে এসেছি। ধ্যানচাঁদের পরিবার থেকে আমার উঠে আসা। তাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি ছিল। ১৯৭৫ সালে দেশকে পদক এনে দিতে পেরে আমি গর্বিত। সেই সময় পাকিস্তান দল বেশ শক্তিশালী ছিল। ভারতের হয়ে যারা খেলেছিল, তাদের মধ্যে ৫ জন আর বেঁচে নেই। ফাইনালের দিন সারা ভারত রেডিওতে ধারাভাষ্য শুনছিল। ওই ম্যাচটা আমাদের কাছে যুদ্ধের মতো ছিল। কারণ, ১৯৭১ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের আবহেই হয়েছিল ওই হকি ফাইনাল। এমনকি দুই দেশের খেলোয়াড়দের মধ্যেও বেশ কয়েকবার হাতাহাতি হয়। ওই ফাইনাল কখনও ভুলতে পারব না। আজীবন ওই স্মৃতি নিয়ে বাঁচব। আমার করা একমাত্র গোলেই পাকিস্তানকে হারিয়েছিলাম।’
ঐতিহাসিক ফাইনাল জিতে দেশে ফেরার পর ৪ ঘণ্টা বিমানবন্দরে আটকে থাকতে হয়েছিল ধ্যানচাঁদদের। ওই ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের মূল্য তখন অনেক। সেই সময় ওই ট্রফির দাম ছিল ভারতীয় মুদ্রায় দেড় লাখ টাকা। দেশে ফিরতেই মাদ্রাজ (চেন্নাই) কাস্টমস আমাদের বিমানবন্দরে আটকায়। চার ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিমানবন্দর ছেড়ে বেরোতে পারি। সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনের পর বিমানবন্দর ছাড়ার অনুমতি পাই। এরপর হুডখোলা গাড়িতে বাড়িতে ফিরেছিলাম। ফুলে, মালায় আমাদের দেশবাসী বরণ করে নিয়েছিল। সত্যিই, সেই অনুভূতি একেবারে আলাদা।’
গোটা দলকে নিজের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। প্রত্যেক খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেন। এমনকি ছবিও তোলেন। যদিও এখনকার হকি অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। প্রতিযোগিতা অনেক কঠিন হয়েছে। তবে ভারতীয় দলের সোনালি ইতিহাস অমলিন থাকবে।