
সিডনি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর পর এই প্রথম হয়তো কমনওয়েলথ গেমসের (Commonwealth Games) কোনও একটি সংস্করণ দেখার সুযোগ পাবে না খেলার দুনিয়া। CWG অনেক নতুন অ্যাথলিটের জন্ম দিয়েছে। যে সব দেশ অলিম্পিকের স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়, তারা কমনওয়েলথ গেমসকে প্রস্তুতি হিসেবে নেয়। কমনওয়েলথের সদস্য দেশগুলো যে কারণে এই গেমসের প্রতি ভীষণভাবে আকৃষ্ট হয়। ঘটনাচক্রে ২০২৬ সালে ভিক্টোরিয়া কমনওয়েলথ গেমস আয়োজিত হচ্ছে না। হাতে মাত্র আর তিনটে বছর। কোনও দেশের পক্ষে এই কম সময়ে বিপুল আয়োজন করা সম্ভব নয়। তবুও ভারতের মতো উৎসাহী দেশ ২০২৬ সালের কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ২০৩২ এর অলিম্পিককে লক্ষ্য করে আমেদাবাদের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। তাও তিন বছর পর আমেদাবাদ কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজক হতে পারবে কিনা, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এরই মধ্যে আয়োজক অস্ট্রেলিয়াকে কার্যত ‘শাস্তি’ দিল কমনওয়েলথ ফেডারেশন। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports এর এই প্রতিবেদনে।
আয়োজকের দায়িত্ব পাওয়ার পর যে প্রাথমিক খসড়া তৈরি করা হয়েছিল তাতে অস্ট্রেলিয়া সরকার দেখেছিল, আড়াই কোটি ডলারের মতো খরচ হবে। সেই মতো পরিকাঠামো উন্নয়নে কোমর বেঁধে নেমে পড়ে ভিক্টোরিয়া প্রভিন্স। চারটে অ্যাথলেটিক্স হাবে গেমস আয়োজন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ যত এগিয়েছে, খরচের পারদ তত চড়েছে। ৭০০ কোটি ডলারেরও বেশি খরচের আশঙ্কা করে গেমস আয়োজন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। করোনা পরবর্তী দুনিয়া আর্থিক মন্দার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সব দেশই চিকিৎসা ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার যুক্তি, কমনওয়েলথ গেমস আয়োজন করতে গিয়ে চিকিৎসা ও শিক্ষা খাতে হাত দিতে হবে। যা তারা কোনও ভাবেই চাইছে না। আর তাই সপ্তাহ খানেক আগে আয়োজক অস্ট্রেলিয়া গেমস থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
সিডব্লিউজির ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনও ঘটেনি। অস্ট্রেলিয়া সরে দাঁড়ানোয় কমনওয়েলথ ফেডারেশন ভীষণ চাপে পড়ে যায়। সময় কম থাকায় নতুন কোনও দেশকে আয়োজনের দায়ভার এখনও দিতে পারেনি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার উপর আর্থিক শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হঠাৎ নাম তুলে নেওয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে ২৪৩ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজনের বোঝার তুলনায় কিছুই নয় হয়তো, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এর ফলে মেগা ইভেন্টের আয়োজক হিসেবে ব্ল্যাকলিস্টেড হয়ে যাবে কিনা, সে আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যদিও অস্ট্রেলিয়ার আয়োজক কমিটি কমনওয়েলথ ফেডারেশনের সঙ্গে বৈঠকের পর এই আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিমাণ মেনে নিয়েছে। এ ছাড়া অবশ্য উপায়ও ছিল না।
কমনওয়েলথ গেমসের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভিক্টোরিয়া সরকার ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রমাণ হল, মাল্টি-হাব রিজিওনাল মডেল অনেক বেশি খরচ সাপেক্ষ। তুলনায় পুরনো পরিকাঠামের খরচ অনেক কম। বিবৃতিতে যা-ই বলা হোক না কেন, কমনওয়েলথ ফেডারেশন যে চরম অস্বস্তিতে পড়েছে এবং এই পরিস্থিতি থেকে আপাতত বেরনোর কোনও রাস্তা যে নেই তা ভালোই বুঝতে পারছেন কর্তারা। শুধু ২০২৬ নয়। ২০২৩ সালের কমনওয়েলথ গেমস আয়োজক কানাডাও সরে দাঁড়িয়েছে। যা এই গেমসের ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিচ্ছে।