
হানঝাউ: গত একটা দশক ধরে বিশ্ব স্কোয়াশ (Squash) দাপিয়ে বেড়িয়েছে পাকিস্তান (Pakistan)। এশিয়ান গেমস (Asian Games) হোক আর বিশ্বকাপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। পাকিস্তানের প্লেয়াররাই বরাবর সাফল্য পেয়েছেন। কখনও সখনও সেই হিসেব উল্টে দিয়েছে ভারত। কিন্তু টিম ইভেন্টে পাকিস্তানকে হারিয়ে সোনা? সেই মহাসাফল্য় অধরাই ছিল এতদিন। তাও মুঠোয় পুরে ফেলল ভারতীয় স্কোয়াশ টিম। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টিম ইভেন্টে দুরন্ত সোনা জিতল সৌরভ ঘোষাল, অভয় সিং, মহেশ মানগাওকররা। ক্রিকেট আর হকিতেই ভারত-পাকিস্তানের ধুন্ধুমার যুদ্ধ বেশি দেখা যায়। খেলা বদলে গেলেও যে রোমাঞ্চ, উত্তেজনা কমে না, স্কোয়াশ কোর্টে তাই দেখল এশিয়াড। পাকিস্তানকে হারিয়ে সোনা জয়ের পর রীতিমতো উৎসব শুরু হয়ে যায় ভারতীয় শিবিরে। সেলিব্রেশন করতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন অভয় সিং। TV9Bangla Sports এ বিস্তারিত।
চরম উত্তেজক হয়ে গিয়েছিল স্কোয়াশের সোনার ম্যাচ। তিন সেটের ম্যাচে প্রথমেই পাকিস্তানের নাসির ইকবালের কাছে হেরে গিয়েছিলেন মহেশ। ৮-১১, ৩-১১, ২-১১ ফল যে ভারতের মনোবলে ধাক্কা দিয়েছিল, সন্দেহ নেই। কিন্তু সেখান থেকেই ভারতকে ম্যাচে ফেরান বাংলার সৌরভ। মহম্মদ অসিম খানকে দাঁড়াতেই দেননি তিনি। ১১-৫, ১১-১, ১১-৩এ জিতে যান তিনি। সৌরভের হাত ধরেই স্কোর ১-১ করে ভারত। তারপর ঐতিহাসিক জয় অভয় সিংয়ের। বেস্ট ফাইভের প্রথম গেমটা জিতেছিলেন ১৯ বছরের নুরজামানের বিরুদ্ধে। পাক স্কোয়াশ প্লেয়ারের দাদু আবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ছিলেন একসময়। তাঁর নাতি যে দুরন্ত কিছু করতে পারেন, তা হয়তো শুরুতে ভাবেননি অভয়। সেই নুরই ভারতের সোনা প্রায় কেড়ে নিচ্ছিলেন। নুরের দুরন্ত ব্যাকহ্যান্ডের জন্যই দ্বিতীয় গেমে আর দাঁড়াতে পারেননি অভয়। হেরে যান ৯-১১। পরের গেমটাতেও নুরের জয়গান। ভারতীয় অ্যাথলিটের বিরুদ্ধে তিনি জেতেন ১১-৭।
এখান থেকেই দুরন্ত প্রত্যাবর্তন অভয়ের। চতুর্থ গেমটা ১১-৯ জেতেন। ব্যাকহ্যান্ডে খেলালে নুর পয়েন্ট তুলে নিয়ে যাচ্ছেন, বুঝতে পেরে ফোরহ্যান্ডে ফোকাস করেন। নুরের বয়স কম, তাই ভুলও করলেন কিছু। অভয় ১১-৯ জিতে ২-২ করেছিলেন সেটটা। শেষ গেমে ভারতীয় প্লেয়ার ১২-১০ জেতেন। তার পরই শুরু হয়ে যায় উৎসব। অভয় কেঁদে ফেলেন সোনা জিতে।
স্কোয়াশ থেকে একটা সময় আর প্রাণ খুঁজে পাচ্ছিলেন না অভয়। ভেবেছিলেন স্কোয়াশ থেকে সরে দাঁড়াবেন। সেখান থেকেই ঘুরে যায় তাঁর ভাবনা। কমনওয়েলথ গেমসে ভারতীয় টিমে সুযোগ পাওয়াটাই তাঁকে অন্য রকম ভাবে শুরু করায়। ২৫ বছরের সেই অভয়ের গলাতে এ বার সোনার পদক। ২০১৪ সালে এশিয়ান গেমসের টিম ইভেন্ট থেকে সোনা জিতেছিল ভারত। মহেশ সে বারও ছিলেন ভারতীয় টিমে। তবে ওই টিমেরও মুখ ছিলেন সৌরভ। গত এক দশক ধরে ভারতীয় স্কোয়াশকে একার কাঁধে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলার ছেলে। ৩৭ বছরের সৌরভ ঘোষাল আরও একবার দেখালেন, স্কোয়াশের মতো ফিটনেসের খেলায় তাঁকে পিছনে রাখা সম্ভব নয়।
এশিয়ান গেমসে বাংলার প্রাপ্তি কী দাঁড়াল? তিনটে সোনা এখনও বাংলার ঝুলিতে। মেয়েদের ক্রিকেটে সোনা জিতেছে ভারত। টিমের অন্যতম মুখ তিতাস সাধু দুরন্ত পারফর্ম করেছিলেন ফাইনালে। ইকুয়েস্ট্রিয়ানের টিম ইভেন্ট থেকে এসেছে বিরল সোনা। বালিগঞ্জের অনুশ আগরওয়াল ছিলেন ওই টিমের সদস্য। এ বার সৌরভ ঘোষাল। ব্যক্তিগত ইভেন্টেও সোনা ফলাবেন কোনও বাঙালি?