LOVLINA AT KOLKATA : হায় কলকাতা, পদক চিনলে না!
তিনি যে লভলিনা বর্গোহাঁই! টোকিও অলিম্পিকে বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ জিতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন যিনি। অসমের মেয়েকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতাঃ হাসপাতাল চত্বর ভিড়ে ঠাসা। যে রকম হয় আর কি। কে কখন আসে, কে কখন যায়, কেই বা খেয়াল রাখে! মঙ্গল দুপুর। হাসপাতাল চত্বরে এসে ইতিউতি ঘুরছেন গোলাপি শার্ট আর কালো ট্রাউজার পরা এক মেয়ে। আড়াল বলতে শুধু মাস্ক। দিন পনেরো আগেও যে মেয়েকে দেখতে দিল্লির বিমানবন্দরে ভিড় জমিয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। মঙ্গল দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে সেই মেয়ের জন্য সেলফির আব্দার নেই। নেই ছুঁয়ে দেখার আর্তি পর্যন্ত। ওই যে, হাসপাতাল চত্বরে কে কখন আসে, কে কখন যায়, কেই বা খেয়াল রাখে!
তিনি যে লভলিনা বর্গোহাঁই! টোকিও অলিম্পিকে বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ জিতে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন যিনি। অসমের মেয়েকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। সারা দেশের টিভির পর্দায়, কাগজের প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছিল লভলিনার হাসিমুখের ছবি। সেই তাঁকেই চিনতে পারল না কলকাতা!
লভলিনার ঘিরে ভিড়হীন ছবিটাই যেন আরও একবার সেই ক্লিশে প্রশ্নটাই তুলে দিল। ক্রিকেটই কি আসল খেলা দেশের? তাই কি অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পেয়ে দেশে ফেরা অ্যাথলিটদের কদর থাকে না? বেশিদিন মনে থাকেন না লভলিনারা? অলিম্পিক আসে, অলিম্পিক যায়। যখন সাফল্য দেন, পদকজয়ীদের ঘিরে হইচই হয়। ওই কটা দিনই। তারপর কেই বা মনে রাখে! কেই বা আর রোজ রোজ সেই পদকজয়ী অ্যাথলিটের সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে ঘোরাফেরা করে? তাই অলিম্পিকে পদক জেতা অ্যাথলিটরা সামনে দিয়ে হেঁটে গেলেও কেউ আর চিনতে পারে না। এটাই বোধহয় এ দেশের বাস্তব ছবি। অসমের লভলিনাকে ঘিরেও শুরু হয়েছিল হইচই। বক্সিংয়ে ব্রোঞ্জ পেয়েছেন। এ মেয়ে তো দেশের গর্ব। নেটদুনিয়ায় কত মানুষই না সে দিন উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ করেছিলেন। হয়তো মঙ্গল দুপুরে হাসপাতাল চত্বরে থাকা মানুষদের মধ্যেও ছিলেন তেমনই কেউ কেউ। যাঁরা ফলাও করে সে দিনও এই মেয়েকে নিয়ে সোশ্যাল সাইটে অনেক শব্দ খরচ করেছিলেন। আজ সামনে পেয়ে চিনতেও পারলেন না। এই আফশোস কি কখনও ভোলার!
গত রবিবার এই শহরে এসেছেন লভলিনা। মা কিডনির রোগে আক্রান্ত। মায়ের চিকিত্সার জন্যই এ শহরে আসা তাঁর। সোমবার সারা শহর ঘুরেছেন। বিকেলে কলকাতার এক অভিজাত শপিং মলে সময়ও কাটিয়েছেন অনেকক্ষণ। ফুড কোর্টে খাওয়া দাওয়ার সময় একজন দু’জন চিনতে পেরেছিলেন। তারা এসে সেলফি তুলেছিলেন। কিন্তু বাকিরা কেউ বুঝতেই পারেননি ভারতীয় খেলাধুলোর এক সুপারস্টার এসে হাজির হয়েছে এ শহরে এসে।
ভারতীয় টিমে সদ্য অভিষেক হওয়া মহম্মদ সিরাজরা যদি আসতেন? তা হলেও কি এমন হত? আসলে এই দেশে যে ক্রিকেটই সব। বক্সিং নিয়ে কত জনেরই বা আর মাথাব্যথা আছে! আবার কোনও অলিম্পিক এলে, আবার কেউ পদক পেলে, এই দেশ, এই শহর কলকাতা উৎসবে মাতবে ঠিক। কিন্তু তার মেয়াদ বেশি হবে না!