কলকাতা: আগ্রাসন। আধিপত্য। অপ্রতিরোধ্য। সাফল্য। গত শতাব্দীর ছয়ের দশকে এ সব শব্দের অস্তিত্ব ছিল নিশ্চয়ই। কিন্তু প্রতিষ্ঠা লাভ হয়তো করেনি। খেলা মাঠে তো নয়ই। অপেশাদার থেকে পেশাদার হয়ে টেনিস সেই তিনের দশক থেকে। ফ্রেড পেরি, ডন বাজদের উত্থান ততদিনে দেখে ফেলেছে টেনিস দুনিয়া। মৌরিন কনোলি বা ‘লিটল মো’র দাপট দেখে ফেলেছে। কিন্তু আগ্রাসনের নিরিখে, আধিপত্যের দুনিয়া তৈরিতে, ধারাবাহিকতা আর সাফল্যের খতিয়ানে কেউ যে সব কিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারেন, টেনিস বিশেষজ্ঞ থেকে গ্যালারি, ভেবে দেখেনি কেউই। ছয়ের দশকে প্রথম দেখা গেল এক অস্ট্রেলিয়ান তরুণীকে। ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে মার্গারেট কোর্ট যেন মান ঠিক করে দিলেন। কিংবা বলা উচিত, টেনিস দুনিয়ায় রেখে গেলেন সাফল্যের এভারেস্ট। যা টপকানো সহজ নয়। অথবা টপকাতে হলে লেগে যাবে দীর্ঘ সময়। ৬৬টা গ্র্যান্ড স্লাম খেতাব তাঁর নামের পাশে। ২৪টা সিঙ্গলস গ্র্যান্ড স্লাম খেতাব। ওপেন এরায় সেরেনা উইলিয়ামস খানিকটা যেতে পেরেছিলেন তাঁর কাছাকাছি। নোভাক জকোভিচ সদ্য ছুঁলেন তাঁকে। তার পরও বলতে হচ্ছে, একমাত্র মার্গারেট কোর্ট (Margaret Court) উদাহরণ হতে পারেন মার্গারেট কোর্টের! সামগ্রিক ভাবে তাঁর রেকর্ড ভাঙা কার্যত অসম্ভব। এই প্রজন্ম হয়তো অজি টেনিস প্লেয়ারের নামই শোনেনি সে ভাবে। কে এই মার্গারেট কোর্ট? TV9Bangla Sports এ বিস্তারিত।
১৯৬০ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতে উত্থান মার্গারেট কোর্টের। তখন মাত্র ১৮ বছর বয়স তাঁর। হালফিলের টেনিস কেরিয়ার দু’ভাগে ভাগ করে নিয়েছেন পেশাদাররা। শুরুতে সিঙ্গলস। বয়স হলে ডাবলস কিংবা মিক্সড ডাবলস। মার্গারেট ছিলেন ব্যতিক্রম। সিঙ্গলস, ডাবলস, মিক্সড ডাবলস— সব কোর্টে দাপিয়েছেন তিনি। ১৯৬০ সালে টেনিস কোর্টে ছুটিয়ে দিয়েছিলেন অশ্বমেধের ঘোড়া। একাধিকবার, বারবার বিশ্বজয় করে থেমেছিলেন ১৯৭৭ সালে। ১৭ বছরের এমন বর্ণময় টেনিস জীবন ওপেন এরায় আর কারও দেখা যায়নি।
১৯৪২ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসে জন্ম মার্গারেটের। মাত্র ৮ বছর বয়সে টেনিস খেলা শুরু করেন কোর্ট। আদতে ছিলেন বাঁ হাতি। কিন্তু টেনিস খেলার জন্য বেছে নিয়েছিলেন দুর্বল ডানহাত। ১৮ বছর বয়সে প্রথম অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন। টানা সাত বছর সেখান থেকে কেউ সরাতেই পারেননি তাঁকে। ১৯৭০ সালে ইতিহাস তৈরি করে ফেললেন মার্গারেট। লিটল মো ১৯৫৩ সালে এক বছরে চারটে গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছিলেন। কিন্তু ওপেন এরায় সেই কাণ্ড প্রথমবার ঘটালেন কোর্ট। ওই বছরই ২৭টার মধ্যে ২১টা টুর্নামেন্ট জিতেছিলেন, ১১০টা ম্যাচের মধ্যে ১০৪টেতে জয়। অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স ছিল মার্গারেটের। সময় যত গড়িয়েছে, বয়স যত বেড়েছে, তত পরিণত হয়েছেন। যেন টেনিস দুনিয়াকে পাল্টে দেওয়ার জন্য জন্ম হয়েছিল এক মেয়ের। ১৯৭৩ সালে আবার ১৮টা টুর্নামেন্টে জয়। ১০৮টা ম্যাচে মাত্র ৬টাতে হার। অপ্রতিরোধ্য মার্গারেটকে থামানোর মতো প্লেয়ারই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
সব মিলিয়ে ১১টা সিঙ্গলস অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন। ফরাসি ওপেন ৫বার। উইম্বলডন ৩বার, ইউএস ওপেন ৫বার। ডাবলস ও মিক্সড ডাবলস মিলিয়ে ১২টা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন খেতাব। ১৩টা ইউএস ওপেন টাইটেল। ৮বার ফরাসি ওপেন এবং ৭বার উইম্বলডন জিতেছেন। ৯১.৬৯ শতাংশ টেনিস ম্যাচ জিতেছেন তিনি। কেরিয়ার জুড়ে মোট ১৯২টা সিঙ্গলস খেতাব। টেনিসের ইতিহাসে এত সিঙ্গলস খেতাব আর কারও নেই। ১৫৯টা ওপেন এরা খেতাব। এতেই শেষ নয়, চারবার অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জিতেছেন ফেডারেশন কাপ।
সাফল্যের সর্বোচ্চ ইমারত তৈরি করে ১৯৭৭ সালে কোর্ট থেকে সরে যান মার্গারেট। ততদিনে উদাহরণ হয়ে গিয়েছেন তিনি। শুধু টেনিস নয়, খেলার সর্বকালের অন্যতম সেরা কিংবদন্তি।