টোকিওঃ টোকিও অলিম্পিকে দীপিকা কুমারি-অতনু দাসদের ব্যর্থতায় তীরন্দাজি থেকে কোনও পদক আসেনি ভারতের ঝুলিতে। তবে এবার তীরন্দাজিতে পদক এল ভারতের। প্যারালিম্পিকে। পুরুষদের ব্যক্তিগত রিকার্ভ বিভাগে ব্রোঞ্জ জিতলেন হরবিন্দর সিং।
এদিন দক্ষিণ কোরিয়ার কিম মিন সুকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে হারিয়ে ব্রোঞ্জ পদক জিতলেন ভারতের হরবিন্দর। ৬-৫ ফলে ম্যাচ জিতে ভারতের আরও একটি পদক সংখ্যা বাড়ালেন পঞ্জাবের এই তনয়। হরবিন্দরের পদক জয়ের সঙ্গে সঙ্গে এদিন ভারতের ঝুলিতে এল তৃতীয় পদক। পদক সংখ্যা দাঁড়াল ১৩। এদিন কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির জার্সেওস্কিকে ৬-২ ফলে হারিয়ে সেমিফাইনালে ওঠেন হরবিন্দর। ভারত তখন থেকেই আশা দেখছিল আরও একটা পদকের। সোনা নাকি রুপো? কোনটা হবে হরবিন্দরের হাত ধরে? তবে সেমিফাইনালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেভিন ম্যাথারের কাছে হেরে সোন বা রুপো জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় হরবিন্দরের। অবশেষে ব্রোঞ্জ পদকের ম্যাচে নিজের ফর্ম ধরে রেখে ব্রোঞ্জ পদক নিশ্চিত করলেন হরবিন্দর।
৩০ বছরের এই তীরন্দাজের জীবনের গল্পটাও বেশ চমকপ্রদ। যখন মাত্র দেড় বছর বয়স, তখন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হন হরবিন্দর। ছোট্ট হরবিন্দর সুস্থ হওয়ার পর তাঁর পরিবার দেখে দুটো পা-ই অসাড় হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হয়ে যায় হাঁটচলা। একরত্তির ভবিষ্যত কি হবে, ভেবেই ঘুম উড়ে গিয়েছিল হরবিন্দরের বাবা মায়ের। বাবা একজন কৃষক। মধ্যবিত্ত পরিবারে শুরু হয় কঠিন লড়াই। অবশেষে হরবিন্দরের যাত্রা শুরু হয় হুইল চেয়ারে।
২০১২ সালে অলিম্পিকে একদিন টেলিভিশনে দেখছিলেন হরবিন্দর। তার আগে তীরন্দাজির সঙ্গে কোনও যোগাযোগই ছিল না তাঁর। দীপিকা কুমারি-তরুণদীপদের দেখে আগ্রহ বাড়তে থাকে। ঠিক পরের দিনই খওঁজ শুরু হরিয়ানার কোথায় শেখা যাবে তীরন্দাজি। অবশেষে ভর্তি হলেন তীরন্দাজিতে।
তীরন্দাজি শেখা ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিযোগিতায় নামা। মাঝের সময় ছিল মাত্র ৫ বছর। দ্রুত উন্নতি শুরু করেন হরবিন্দর। জাতীয় স্তরের একের পর এক প্রতিযোগিতায় পদক জয়। জাতীয়স্তরে ক্রমশ একটা নাম হয়ে উঠতে থাকে এই পঞ্জাব তনয়। ২০১৭ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক মঞ্চে আত্মপ্রকাশ ঘটে হরবিন্দরের। বেজিংয়ে প্যারা আর্চারি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সপ্তম স্থানে প্রতিযোগিতা শেষ করেন হরবিন্দর। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
পরের বছরই তাক লাগিয়ে দিলেন হরবিন্দর। এশিয়ান প্যারা গেমসে তীরন্দাজিতে সোনা জিতে সবার নজরে চলে আসেন হরবিন্দর। তবে ২০১৯ সালে এশিয়ান প্যারা আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ জিতলেন তিনি। তবে পরের বছরই দুবাইয়ে আরও এক আন্তর্জাতিক মঞ্চে মুখ থুবড়েে পড়েন হরবিন্দর। পদক দূরে থাক, প্রথম রাউন্ডেই বিদায় নেন হরবিন্দর।
এরপর করোনাকালে লড়াই ছিল আরও কঠিন। নিজেকে ছন্দে ফেরার প্রস্তুতি বারবার বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল মহামারীতে। অ্যাকাডেমি বন্ধ। প্রস্তুতির তেমন কোনও জায়গাই পাচ্ছিলেননা হরবিন্দর। ছেলেকে প্যারালিম্পিকের জন্য তৈরি করতে এগিয়ে এলেন বাবা। হরবিন্দরের বাড়ি হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রাম অজিতনগরে। সেখানে তাঁদের চাষের জমির অর্ধেকটাতেই তৈরি করলেন তীরন্দাজির রেঞ্জ। শুরু হল করোনাকালে হরবিন্দরের প্যারালিম্পিকে জন্য প্রস্তুতি।
বাবার আত্মত্যাগ আর ছেলের অধ্যাবসায়। দুইয়ের ফল আজকের পদক। এমনটাই মনে করছে ভারতের তীরন্দাজ মহল। ৩০ বছরের হরবিন্দর আরও পদক আনবেন ভারতের জন্য, বিশ্বাস ভারতের তীরন্দাজমহলের।