মহাকাশের আনাচে কানাচে লুকিয়ে থাকা রহস্যের জাল সম্ভবত মানুষের চিন্তাভাবনার তুলনায় অনেক বেশি আকর্ষণীয়। তেমনই এক অমোঘ আকর্ষণ এবং রহস্যের সমাধান করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। অনেক সময়েই হয় যে বিজ্ঞানীরা এমন সব আবিহশকাড় করে ফেলেন যা হয়তো তাঁরা নিজেরাই ভাবেননি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একটা জিনিস আবিষ্কারের করার পাশাপাশি একইসময়ে অন্য বিষয় চলে আসে চোখের নজরে। অনেকক্ষেত্রে নিত্যনতুন সমাধান সূত্র পেয়ে জটিল ধাঁধাঁর সমাধান করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। বিশেষ করে দেখা যায় যে অনেক দূরের কোনও ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানীরা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো কিছু মহাজাগতিক বিষয়ের সন্ধান পান।
সম্প্রতি রেডিয়ো তরঙ্গের সাহায্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা দুটো ‘অদৃশ্য’ ছায়াপথ বা গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন। বলা হচ্ছে, ধোলর আস্তরণ বা পর্দার আড়ালে লুকিয়ে ছিল এই দুটো গ্যালাক্সি। আর ধুলোর আস্তরণের ফলেই এই দুই ছায়াপথ এতদিন নজরে আসেনি কারও। ইতিমধ্যেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই দুই গুয়ালাক্সি বা ছায়াপথের নামকরণ করেছেন। তাদের নাম দেওয়া হয়েছে REBELS-12-2 এবং REBELS-29-2। সেই সঙ্গে এও বলা হচ্ছে যে এ যাবৎ যেসমস্ত গ্যালাক্সি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, তার মধ্যে এই দুটিই সবচেয়ে দূরের ছায়াপথ। জানা গিয়েছে, এই দুই গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ থেকে পৃথিবীপৃষ্ঠে আলো পৌঁছতে সময় লাগবে ১৩ বিলিয়ন বছর। আক্ষরিক অর্থেই এই দুই গ্যালাক্সির অবস্থান অনেকটা দূরে প্রায় ২৯ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে।
এমনটা সম্ভব হয়েছে কারণ বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ক্রমশ আকার-আয়তনে প্রসারিত হচ্ছে। নিয়মিত ভাবেই এই কর্মকাণ্ড চলছে বলে অনেক আগেই ধারণা করেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের একাংশ। এবার তার আরও স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। ব্রহ্মাণ্ডের ক্রমাগত বিস্তারই এই দুই গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের এত দূরে অবস্থানের কারণ। জানা গিয়েছে, এই দুই ছায়াপথের সন্ধানে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা Atacama Large Millimeter Array (ALMA) টেলিস্কোপের ব্যবহার করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এর মাধ্যমে রেডিয়ো তরঙ্গ ধরা পড়ে। সাধারণত নাসার হাব্বল স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহৃত হলেও এক্ষেত্রে তা হয়নি।
অন্যদিকে ‘নেচার’ জার্নালের একটি প্রতিবেদনে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা তাঁদের আবিষ্কারের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণও দিয়েছেন ইতিমধ্যেই। সেখানে বলা হয়েছে, আমাদের ধারণার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক ছায়াপথ রয়েছে এই ব্রহ্মাণ্ডে। আর এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার ফলে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে আমাদের ধারণা কতটা ঠিক, কতটাই বা আমরা জানি আমাদের ব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রীতিমতো গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে আর্লি ইউনিভার্স বা ব্রহ্মাণ্ডের আদি পর্বের অনেক গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ এখনও ধুলোর মেঘের আস্তরণের নীচেই ঢাকা পড়ে রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে সেই সমস্ত গ্যালাক্সিও আবিষ্কার হবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা।