বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কত কিছুই না ঘটে! যদিও তার সবটাই সাধারণ মানুষের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা সেই সব কিছুকে মানুষের জ্ঞানের আয়তায় আনতে একের পর এক গবেষণা করে চলেন। সূর্য, পৃথিবী, চাঁদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ নেই। আর সেই মতোই সূর্যের একটি ছবি বিজ্ঞানীরা তুলে ধরেছেন। যা দেখলে আপনার চোখ কপালে উঠবে। আর্জেন্টিনার জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুয়ার্ডো শ্যাবার্গার পাউপাউ সূর্যের পৃষ্ঠে প্লাজমার প্রাচীরের একটি ছবি তুলেছেন। সূর্যের প্লাজমাগুলিকে এক ঝলকে আপনার জলপ্রপাতের থেকে কম কিছু মনে হবে না। LiveScience অনুসারে, সূর্যের ছবিগুলি 9 মার্চ অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার দ্বারা ক্লিক করা হয়েছে। আর এই ছবিতে ফুটে উঠেছে প্লাজমার একটি বিশাল প্রাচীর। যা দ্রুত গতিতে সূর্যের পৃষ্ঠের দিকে নেমে আসছে।
সূর্যের প্লাজমা কী?
প্লাজমা প্লাজমা হল মুক্ত আয়ন এবং ইলেকট্রনের সংমিশ্রণ। অর্থাৎ একটি নক্ষত্রের মধ্যে মুক্ত ইলেকট্রন এবং আয়নের এই মিশ্রণটিকে প্লাজমা বলা হয়। তাদের মধ্যে প্লাজমার উপস্থিতির কারণে সূর্য এবং অন্যান্য নক্ষত্রগুলি উজ্জ্বল হয়। অত্যন্ত স্বল্প চাপের গ্যাসের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহকে চালিত করে পৃথিবী পৃষ্ঠেও প্লাজমাকে তৈরি করা যেতে পারে।
আর এই প্লাজমারই একটি ছবি তুলেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুয়ার্ডো শ্যাবার্গার পাউপাউ। সূর্যের পৃষ্ঠ থেকে একটি বিশাল প্লাজমা বের হয়েছে, যা দেখতে জলপ্রপাতের মতো। এই প্লাজমা যেভাবে সূর্যের ভূপৃষ্ঠে ফিরে এসেছে,তা দেখে এর নামকরণ করা হয় জলপ্রপাত। পাউপাউ বলেন, “আমার কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকালে মনে হচ্ছে, এটি প্লাজমার শত শত সুতো। দেখে অবাক হয়ে গেলাম।” বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্লাজমা ঘণ্টায় 36,000 কিমি বেগে পড়েছিল। প্লাজমার এই অংশগুলি পৃথিবীতে দেখা মেরুজ্যোতির মতো। পাউপাউ আকর্ষণীয় ছবি তোলার জন্য বিশেষ ক্যামেরা সরঞ্জাম ব্যবহার করেছেন। প্লাজমা প্রাচীর “সৌর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় 100,000 কিমি (62,000 মাইল) উপরে উঠেছে। এটি প্রায় আটটি পৃথিবীর মতো লম্বা।”
সূর্যের এই প্লাজমাগুলি সম্পর্কে আর কী জানাচ্ছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা?
সূর্যের এই প্লাজমাগুলি খুব গরম, যা সূর্য থেকে উঠে মহাকাশের দিকে চলে যায়। কিন্তু যখন এটি সূর্যের মেরুগুলির কাছাকাছি থাকে, তখন একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে। আর তারফলে সেগুলি মহাকাশের দিকে যাওয়ার পরিবর্তে খুব দ্রুত সূর্যের কাছে ফিরে আসে। মেরুগুলির কাছাকাছি হওয়ায়, নাসা (NASA) এটিকে পৃথিবীর অরোরা বা মেরুজ্যোতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। তবে এই প্লাজমার পরিমাণ দিনের পর দিন বাড়তে থাকলে আর প্রভাব যে পৃথিবীর উপর কীরূপ পড়বে, সে বিষয়ে বিজ্ঞানীরা এখনও কিছু জানাননি।