ক্রিস্টোফার নোলানের তৈরি কাল্পনিক জগৎ অনেক রহস্যের কিনারাই করেছে। কিনারা না করলেও অন্তত তার ইঙ্গিতটুকু দিয়ে রেখেছে। জনপ্রিয় হলিউড চলচ্চিত্র পরিচালক নোলান তেমনই এক কাল্পনিক দুনিয়া তৈরি করেছিলেন তার ইন্টার্স্টেলার ছবিতে। যাঁরা এই ছবিটি দেখেছেন, তাঁদের নিশ্চয়ই মনে থাকবে মহাকাশচারী কুপার যখন ওয়ার্মহোলের ওপারে ডঃ ম্যানের গ্রহে নেমে যান, তখন তাঁর মহাকাশযান হিমায়িত মেঘে আঘাত করে। এখন একটি নতুন গবেষণা থেকে জানা গেল, এই হিমায়িত মেঘ কেবল সিনেমার দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ নেই। সত্যিই এমন মেঘের সন্ধান মিলেছে, ঠিক যেমনটা ডঃ ম্যানের প্ল্যানেটে দেখা গিয়েছিল।
বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত স্পিতজার টেলিস্কোপ দ্বারা বছরের পর বছর ধরে তৈরি করা আর্কাইভাল ডেটা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বহিরাগত মেঘের মধ্যে একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করেছে। পৃথিবীর বাইরে অন্য গ্রহে যেখানে মেঘ জলীয় বাষ্প দ্বারা গঠিত, সেখানে বায়ুমণ্ডলের নিচে অনন্য রাসায়নিক সংমিশ্রণের আলাদা একটি জগৎ রয়েছে। গবেষকরা দাবি করছেন, সেখানে মেঘ তৈরি হয়েছে বালি দিয়ে।
রয়্যাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির মাসিক নোটিস জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা আমাদের সৌরজগতের বাইরের জগতের উপর আলোকপাত করেছে। সেখানে সিলিকেটের সমন্বয়ে গঠিত মেঘের অস্তিত্ব রয়েছে, শিলা-গঠনকারী খনিজ পদার্থের পরিবার যা পৃথিবীর ভূত্বকের 90% এরও বেশি।
গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলগুলি তাপমাত্রার পরিসীমা প্রকাশ করে, যেখানে সিলিকেট মেঘও গঠিত হতে পারে এবং দূরবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডলের শীর্ষে দৃশ্যমান হয়।
ওন্টারিওর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়োপ্ল্যানেট স্টাডিজ় দফতরের প্রফেসর স্ট্যানিমির মেটশেভ যিনি এই গবেষণার সহ-লেখক বলছেন, “ব্রাউন ডোয়ার্ফ বা বাদামী বামন এবং গ্রহের বায়ুমণ্ডল যেখানে সিলিকেট মেঘ তৈরি হতে পারে তা আমাদের বুঝতে সাহায্য করতে পারে যে, আমরা পৃথিবীর আকার এবং তাপমাত্রার কাছাকাছি এমন একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কী দেখতে পাব।”
নাসার অবসরপ্রাপ্ত স্পিতজার স্পেস টেলিস্কোপের ব্রাউন ডোয়ার্ফ মহাকাশীয় বস্তুর পর্যবেক্ষণ থেকে ফলাফলগুলি নেওয়া হয়েছে যা গ্রহ এবং নক্ষত্রের মধ্যে পড়ে। তবে এটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে এখনও অনেক রিসার্চের প্রয়োজন রয়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, এই মেঘগুলি গঠনের প্রক্রিয়ায় মূল উপাদানটিকে বাষ্পে পরিণত হওয়া পর্যন্ত গরম থাকে। সঠিক অবস্থার অধীনে সেই উপাদানটি জল, অ্যামোনিয়া, লবণ বা সালফার-সহ বিভিন্ন জিনিস হতে পারে। তারপর এটি ঠান্ডা হয়। আর তখনই তা ঘনীভূত করার জন্য যথেষ্ট। যেহেতু, তাদের ব্যাপক পরিমাণ তাপের প্রয়োজন হয়, তাই সিলিকেট মেঘগুলি শুধুমাত্র গরম জগতেই দেখা যায়। হতে পারে তা যেমন এই গবেষণার জন্য ব্যবহৃত ব্রাউন ডোয়ার্ফ বা বাদামী বামন এবং আমাদের সৌরজগতের বাইরের কিছু গ্রহ।